মেয়েদের পড়াশোনা করার প্রয়োজন নেই। এমনটাই মনোভাব ছিল আত্মীয়স্বজন আর পাড়াপড়শিদের। অথচ স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পা রাখতে না রাখতেই সকলকে চমকে দিয়েছে সেই মেয়ে। ক্লাস সেভেনের অঙ্কও তার কাছে নস্যি। স্মৃতিশক্তির দিক দিয়েও তার জুড়ি মেলা ভার। আসুন, শুনে নেওয়া যাক বেনারসের এই আশ্চর্য খুদের কথা।
বয়স মাত্র ৫। সেই হিসেবে স্কুলের প্রথম শ্রেণিতেই বসতে হয় তাকে। কিন্তু যে পাঠ্যক্রম অনুযায়ী সে পড়াশোনা করে, তা ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণির সমতুল। এমনকি নিজের চেয়ে বয়সে বড় মেয়েদেরও নিয়মিত পড়ায় এই খুদে। বয়সে ছোট হলেও, গ্রামের মেয়েদের পড়াশোনার পক্ষে সওয়াল করতে সে পিছপা নয় কখনোই। দৃষ্টি মিশ্র নামে বেনারসের এই খুদে মেয়েটির নাম রয়েছে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসেও। কেন-না বিশ্বের সবকটি দেশ ও তাদের রাজধানীর নাম, এমনকি তাদের জাতীয় পতাকার বর্ণনা পর্যন্ত তার কণ্ঠস্থ। আর এই সবটা গড়গড়িয়ে বলে যেতে তার সময় লাগে মাত্র ২ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড।
আরও শুনুন: মালিকের অপেক্ষায় ৪ মাস ধরে ধ্বংসস্তূপে বসে পোষ্য, ইউক্রেনে ফিরে হতবাক পরিবার
কিন্তু বিশ্বজোড়া সব দেশের নাম বলে যাওয়াটা তার কাছে যতটা সহজ, সেই জ্ঞান তথা শিক্ষার কাছে পৌঁছনোর পথটা কিন্তু তেমন সহজ ছিল না একেবারেই। উত্তরপ্রদেশে সামগ্রিক ভাবে যে পিতৃতন্ত্রের চর্চা চলে, তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তার উপরে দৃষ্টির বাড়ি বাহেরওয়া নামে বেনারসের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। এই একুশ শতকে দাঁড়িয়েও সেখানে মেয়েদের পড়াশোনার চলটাই নেই সেভাবে। এমনকি দৃষ্টির জন্মের পর সে কন্যাসন্তান হওয়ার কারণে রীতিমতো সামাজিক চাপের মুখে পড়েছিলেন তার বাবা। নারীশিক্ষার প্রতি এলাকার মানুষদের ইতিবাচক মনোভাব নেই বলেই স্কুলে ভরতি হওয়ার সময়েও তিনি কখনোই মেয়ের সঙ্গে যাননি। কিন্তু ভাগ্যক্রমে গ্রামের আরও অনেক মেয়ের মতো দৃষ্টির পড়াশোনা থমকে যায়নি। উলটে একান্ত শিশু বয়স থেকেই বিভিন্নভাবে প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটছিল তার। তার বাবা জানিয়েছেন, শিশুশ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেণির অঙ্ক করতে স্বচ্ছন্দ ছিল দৃষ্টি। আর তা দেখেই প্রথম মেয়ের প্রতিভার আঁচ পান তারা। চেষ্টা করেন সেই প্রতিভাকে আরও উসকে দিতে। আক্ষরিক অর্থেই দরজায় দরজায় ঘুরে মেয়ের জন্য যোগ্য শিক্ষক খোঁজার চেষ্টা চালিয়েছিলেন দৃষ্টির বাবা। যিনি এই ছোট্ট মেয়েটির প্রতিভাকে ঠিকমতো অনুধাবন করতে পারবেন, এবং তাতে প্রয়োজনমতো সার জল দিয়ে যথার্থ বিকাশের পথও দেখাবেন। কিন্তু এই খোঁজের দৌলতে স্রেফ উপহাস কুড়িয়েছিলেন দৃষ্টির বাবা।
আরও শুনুন: গরমে সাইকেল চালাতে কষ্ট, প্রতিযোগীর হাত ধরে বাইক চালালেন ফুড ডেলিভারি সংস্থার কর্মী
যাই হয়ে যাক না কেন, দৃঢ় অধ্যবসায়ের জোরে নিজের মতো করেই পড়াশোনার চর্চা চালিয়ে গিয়েছে দৃষ্টি। বর্তমানে টিউটরিং অ্যাপের সাহায্যেই উঁচু ক্লাসের পড়া শেষ করছে সে। পাশাপাশি, গ্রামের মেয়েদেরও পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে সে। বড় হয়ে সে আইএএস অফিসার হতে চায় বলেই জানিয়েছেন তার বাবা। কারণ পৃথিবীটাকে সে বদলাতে চায়। সামাজিক বিশ্বাস আর চাপের জেরে মেয়েদের শিক্ষা যাতে থেমে না যায়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে চলেছে এই আশ্চর্য খুদে।