এ এক অন্যরকম বন্ধুত্বের গল্প। যে বন্ধুত্ব সমাজের বা পরিস্থিতির চাপিয়ে দেওয়া কোনওরকম বাধা মানতে নারাজ। যে বন্ধুত্ব একজনকে পিছনে ফেলে অন্যজনের এগিয়ে যাওয়াতেও বিশ্বাস করে না। তেমনই এক আশ্চর্য বন্ধুত্বের গল্প লিখলেন ফুড ডেলিভারি সংস্থার সাধারণ দুই কর্মী। আসুন, শোনা যাক তাঁদের কথা।
‘দুরন্ত ঘূর্ণির ওই লেগেছে পাক, এই দুনিয়া ঘোরে বনবন বনবন”… এ গান আমরা কে না শুনেছি! সত্যি বলতে, বর্তমানে আমরা এমন এক পৃথিবীতে এসে দাঁড়িয়েছি, যখন দুনিয়াটা সত্যিই সদা চলমান। আর তার সঙ্গে চলছি আমরাও, থুড়ি, ছুটছি। এই ইঁদুর দৌড়ে একটু থমকে দাঁড়ালেই যে পিছিয়ে পড়তে হবে, সে কথা ভাল করেই বুঝে গিয়েছি আমরা। আর তাই, পাশের জনের থেকে ক্রমশ এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্রে নিজেদের দীক্ষিত করেছি আমরা। সেই দৌড়ে কেউ পিছিয়ে পড়লেও তার দিকে তাকাবার উপায় নেই। অন্তত, তেমনটাই আমাদের শিখিয়েছে সমাজ। কিন্তু সেই বাঁধা গতকেই স্রেফ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন দুজন সাধারণ মানুষ। বড় বড় ডিগ্রি, প্রচুর অর্থ বা ক্ষমতা, কিছুই হয়তো সেভাবে নেই তাঁদের। কিন্তু এই ‘হ্যাভ নটস’-দের দলে থাকা দুজন মানুষ কার্যত চোখে আঙুল দিয়েই দেখিয়ে দিলেন, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব কিংবা সহমর্মিতা নামের বোধগুলো চাইলেই অর্জন করা যায়।
আরও শুনুন: স্বাধীনতা দিবসের উপহার, ফের দেশে ফিরতে চলেছে বিলুপ্ত হওয়া চিতা
কী হয়েছে ঠিক? তবে খুলেই বলা যাক।
আজকের দিনে একাধিক ফুড ডেলিভারি সংস্থা রমরমিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে দেশজুড়ে। আর এই ব্যবসার চাকা সচল রাখতেই প্রায় প্রাণ হাতে করে ছুটতে হয় ডেলিভারি পার্সনদের, এমন খবর শোনা যায় প্রায়শই। ঝড় জল রোদ যাই হোক, নির্দিষ্ট সময়ে খাবার পৌঁছে না দিতে পারলে চাকরি থেকে বরখাস্ত পর্যন্ত হতে পারেন এঁরা। অথচ সেই প্রাণান্তকর দৌড়ের মাঝখানেও আরেকজনের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন এক ডেলিভারি পার্সন। আর সেই ভিডিওটিই সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে নেটদুনিয়ায়। যেখানে দেখা যাচ্ছে, দিল্লির প্রবল গরমের মধ্যে পাশাপাশি চলেছেন দুই ডেলিভারি পার্সন। কিন্তু আশ্চর্যের কথা হল, একজন বসে রয়েছেন সাইকেলে, অন্যজন মোটরবাইকে। মোটরবাইক আরোহী শক্ত করে ধরে রেখেছেন সাইকেল আরোহীর হাত, যাতে তিনি পড়ে না যান। এই তীব্র দাবদাহের মধ্যে যাতে অন্যজনকে প্যাডেল ঘোরাতে না হয়, সে কারণেই এহেন কাজ করেছেন ওই বাইক আরোহী। অথচ, অন্য মানুষটি আসলে ব্যবসার জগতে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী। কারণ তাঁরা দুটি আলাদা আলাদা সংস্থার কর্মী। যে সময়ে দাঁড়িয়ে একান্ত প্রিয়জনের থেকেও সময়ে সময়ে মুখ ফিরিয়ে নেয় মানুষ, সেখানে এই দুজন সম্ভাব্য প্রতিযোগীর আচরণে আপ্লুত নেটিজেনেরা। দেশজুড়ে চলতে থাকা বিভিন্ন বিদ্বেষের ঘটনার মধ্যে যেন নতুন করে সম্প্রীতির পাঠ দিলেন ওই দুই ব্যক্তি।