অতিমারির জেরে দু’বছর বন্ধ থাকার পর চলতি বছরেই পুরোদমে কানওয়ার যাত্রা শুরু করেছেন ভক্তরা। এই তীর্থযাত্রা নিয়ে ইতিমধ্যেই একাধিক ফরমান জারি হয়েছে উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের তরফে। সম্প্রতি তাতে নয়া মাত্রা যোগ করল দিল্লিতে এক বিশেষ শ্রেণির মানুষদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা। কেবল আমিষ খাওয়ার জেরেই এহেন বিপাকে পড়েছেন ওই সম্প্রদায়। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বৈচিত্র্যের দেশ ভারত। অন্তত ইতিহাস সে কথাই বলে। সে বৈচিত্র্য কেবল ভাষা, পোশাক, সংস্কৃতিতে নয়, খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্যের ছোঁয়া ধরে রেখেছে এই দেশ। কিন্তু সম্প্রতি বারবারই কোপ পড়েছে সেই দিকটিতে। কে কী খাবে, সেই একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও জারি করা হচ্ছে ফরমান। কখনও গোমাংস নিয়ে উসকে উঠেছে বিতর্ক, কখনও বা যে কোনোরকম আমিষ খাওয়া নিয়েই ঘোরতর আপত্তি প্রকাশ করা হচ্ছে। এমনকি উত্তর ভারতে নবরাত্রির সময় বিজ্ঞাপনে মাছ ভাজা দেখানো যাবে না, এই মর্মেও ঘনিয়ে উঠেছিল বিরোধ। যা এক অর্থে ভিন্ন মতের প্রতি অসহিষ্ণুতারই প্রকাশ। সব মিলিয়ে দেশজুড়ে মাঝে মাঝেই তৈরি হচ্ছে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি। সম্প্রতি সেই তালিকায় নয়া সংযোজন কানওয়ার যাত্রার প্রেক্ষিতে দিল্লি পুলিশের প্রস্তাব।
আরও শুনুন: ‘রাজ্যে নীচু জাত কোনটি?’ প্রশ্ন খোদ পেরিয়ারের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়েই, ঘনাল বিতর্ক
আসলে উত্তর ভারতে কানওয়ার যাত্রা একটি বড় তীর্থযাত্রা। এই যাত্রায় দেশের উত্তর অংশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিব-ভক্তরা পাড়ি দেন হিন্দু ধর্মের পরম তীর্থ হরিদ্বারের দিকে। এই তীর্থযাত্রায় তাঁরা গঙ্গা থেকে জল নিয়ে যান মন্দির ও নিজেদের বাড়িতে। করোনা পরিস্থিতিতে দু’বছর এই যাত্রার আয়োজন করা যায়নি। ফলে চলতি বছরের কানওয়ার যাত্রা ভক্তদের কাছে সবদিক দিয়েই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই যাত্রা যাতে নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করা যায়, তা নিশ্চিত করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ এবং প্রশাসন। কিন্তু সমস্যা হল, মাঝে মাঝে এই অতি সক্রিয়তা বিপাকে ফেলছে অন্যদের। যেমন যাত্রা শুরুর আগেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ফতোয়া জারি করেন, কানওয়াড় যাত্রার পথে প্রকাশ্যে মাংস বিক্রি করা যাবে না। পুলিশ এ বিষয়ে মাংস বিক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সম্মতি পেয়েছে বলেই জানিয়েছিল। যদিও এই নিষেধাজ্ঞার জেরে বেশ কিছু মানুষের পেশা কার্যত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সাময়িকভাবে। কিন্তু কেবল মাংস বিক্রি করা বা কেনায় নিষেধাজ্ঞা নয়, আরও বড়সড় বদলের দিকে হেঁটেছে দিল্লি পুলিশ। মাংস খান বলেই এক শ্রেণির মানুষকে রীতিমতো ঠাঁইনাড়া করার উদ্যোগ নিয়েছে তারা।
আরও শুনুন: ধর্মীয় ভাবাবেগে লাগতে পারে আঘাত, সাইনবোর্ড থেকে ‘গোমাংস’ শব্দ মোছার নির্দেশ রেস্তরাঁগুলিকে
জানা গিয়েছে, সেই অঞ্চলে রাস্তার পাশেই বাস করেন কামার সম্প্রদায়ের মানুষেরা। আমিষজাতীয় খাবারই খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে তাঁদের। কিন্তু সেখানে আবর্জনা ফেলার যথাযথ ব্যবস্থা নেই বলে উচ্ছিষ্ট হাড় মাংস আশেপাশেই ফেলে দেন তাঁরা। সেইসব উচ্ছিষ্ট নিয়ে আপত্তি জানাতে পারেন কানওয়ার যাত্রীরা, এমনটাই মনে করছে দিল্লি পুলিশ। আর সেই কারণেই ওই মানুষদের আপাতত সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ভেবেছে তারা। আর এই পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্যে আসার পরই উঠছে প্রশ্ন। কারও সুবিধা অসুবিধার দিকে লক্ষ রাখার মতো সহমর্মিতা দেখানোতে যে কোনও সমস্যা নেই, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু তা করতে গিয়ে অপর কারও প্রতি অবিচার হয়ে যাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন মহলে।