একেই বলে নিয়মের গেরো। আর সেই ঝঞ্ঝাটের কেন্দ্র হয়ে উঠল একটি আপাতনিরীহ অন্তর্বাস। তার জেরেই মাঠে নেমেও খেলা প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল এক খেলোয়াড়ের। অবস্থা এমনই ঘোরালো হয়ে ওঠে যে শেষমেশ এমন একটি ব্যক্তিগত জিনিস তাঁকে অন্যের থেকে ধার নিতে হয়। কী ঘটেছিল ঠিক? শুনে নেওয়া যাক সেই কাণ্ড।
নারীর ক্ষেত্রে অন্তর্বাস কেন বাধ্যতামূলক, এই নিয়ে অনেক সময়েই সরব হয়েছেন মেয়েরা। অনেকেরই মতে, এই বিষয়টিও একপ্রকার লিঙ্গবৈষম্যকেই চিহ্নিত করে। তার চেয়েও বড় কথা, মেয়েরা কী পরবে তা ঠিক করে দিতে চাওয়া আদতে তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতার ক্ষেত্রেই হস্তক্ষেপ করা। সে হিজাবের মতো সর্বাঙ্গ ঢাকা পোশাকই হোক কি অন্তর্বাসই হোক, নিজের পোশাক নির্বাচনের অধিকার একমাত্র সেই মানুষটিরই রয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা। কিন্তু সম্প্রতি উইম্বলডনের কোর্টে ঘটল প্রায় উলটো ঘটনাই। যার জেরে নিজের কোচের থেকে অন্তর্বাস ধার করে পরতে বাধ্য হলেন এক মহিলা খেলোয়াড়।
আরও শুনুন: রাত্রিযাপনে খরচ নেই এক পয়সা, তবু কেউ থাকতে নারাজ এই হোটেলে! কেন জানেন?
কী ঘটেছে ঠিক? তাহলে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: ঘরের ছাদ, দেওয়াল নেই… তবু হোটেল ভাড়া ২৬ হাজার টাকা, কেন জানেন?
বিশ্বের সব টেনিস খেলোয়াড়দের কাছেই পাখির চোখ ঐতিহ্যশালী উইম্বলডন টুর্নামেন্ট। এই টুর্নামেন্টে প্রবেশাধিকার পাওয়ার জন্য প্রাণপণ অনুশীলন করেন তাঁরা। কিন্তু সে তো খেলার মাঠের যোগ্যতা নির্ধারণ করবে। তার বাইরে? মুশকিল হল, মাঠের নিয়মের ক্ষেত্রে উইম্বলডন যতটা কড়া, খেলার বাইরের বিষয়গুলির ক্ষেত্রেও সে ততটাই নিয়ম মেনে চলতে ভালবাসে। আর এই কঠোর নিয়মাবলির জেরেই অনেকসময় সমস্যায় পড়তে হয়েছে খেলোয়াড়দের। সম্প্রতি সেই তালিকাতেই নয়া সংযোজন রোমানিয়ার মহিলা খেলোয়াড় মিহায়েলা বুজারনেস্কু। বিকিনি-প্রিয় ওই খেলোয়াড়ের কাছে পেশাদার পোশাকের উপযোগী অন্তর্বাস এমনিতেই কম ছিল। তবে উইম্বলডনের কঠোর পোশাকবিধি মেনে টেনিস আউটফিটের সঙ্গে যথাযথ অন্তর্বাসও পরেছিলেন তিনি। কিন্তু গোলমাল বাধল তার রং নিয়ে। পোশাকবিধির ক্ষেত্রে উইম্বলডন বরাবরই শুদ্ধতাবাদী। একসময় সেখানে মহিলা খেলোয়াড়দের মাঠে নামতে হত গোড়ালি-ছোঁয়া পোশাক পরে। কালের বিবর্তনে তা শর্টস বা স্কার্টে উন্নীত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু উইম্বলডনের কড়া নিয়ম, সে পোশাকের রং হতে হবে ধবধবে সাদা। এমনকি অন্তর্বাস পর্যন্ত হতে হবে ওই রঙেরই। মিহায়েলার কালো রঙের অন্তর্বাস নাকচ হয়ে গেল সেই নিয়মেই। এদিকে ম্যাচ শুরু হওয়ার সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। এমন একটি আপাত তুচ্ছ কারণে খেলাই বন্ধ হতে বসেছিল সেদিন। শেষরক্ষা করলেন মিহায়েলার কোচ। ঘটনাচক্রে তিনিও মহিলা। তাঁর থেকে ধার করা অন্তর্বাসের দৌলতেই শেষ পর্যন্ত উইম্বলডনের কোর্টে পা রাখার অধিকার পেলেন মিহায়েলা। তারপর অবশ্য আর তাঁকে দমিয়ে রাখা যায়নি। মাঠের বাইরে যা-ই হয়ে থাক না কেন, কোর্টে নেমেই স্ট্রেট সেটে বিপক্ষকে হারিয়ে জেতার পয়েন্ট তুলে নিয়েছেন ৩৪ বছরের এই টেনিস খেলোয়াড়।