মেগাস্থিনিস, হিউয়েন-সাং, ফা-হিয়েন- ইতিহাসের পাতায় ছড়িয়ে রয়েছেন এমন কত না পর্যটক। পায়ে হেঁটেই বিশ্বভ্রমণ করেছেন তাঁরা। কিন্তু এই আধুনিক যুগে পায়ে হেঁটে বিশ্বভ্রমণ! এমনটাও হয়! সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন এই ব্যক্তি। পায়ে হেঁটে ঘুরে ফেলেছেন গোটা পৃথিবী। আসুন, শুনে নেওয়া যাক এই আশ্চর্য সফরের গল্প।
সাত বছরের টানা সফর শেষ হয়েছে সম্প্রতি। পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ছুঁয়ে ঘরে ফিরেছেন এই যুবক। তিনিই পৃথিবীর দশম ব্যক্তি, যিনি পায়ে হেঁটে ঘুরে ফেলেছেন গোটা দুনিয়াটাই। সাত বছরে পাড়ি দিয়েছেন মোট ৪৮ হাজার কিলোমিটার পথ। অবশ্য তিনি একা নন। তাঁর একজোড়া পায়ের ছাপের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে নিজের খুদে খুদে পায়ের ছাপ রেখে এসেছে তাঁর পোষ্যটিও। চতুষ্পদ প্রজাতির মধ্যে প্রথম এই রেকর্ড গড়ল ওই যুবকের পোষা সারমেয় সাভানা; গোটা সফরে যে ছিল তাঁর একমাত্র সঙ্গী।
আরও শুনুন: কেন্দ্রের নির্দেশিকার পরও সার্ভিস চার্জ চাইছে রেস্তরাঁ! অভিযোগ জানাবেন কী কী উপায়ে?
কিন্তু যে সময়ে আধুনিক প্রযুক্তির সুবাদে গোটা দুনিয়াটাই চলে এসেছে হাতের মুঠোয়, মানুষের যাতায়াতের শ্রমকে ক্রমশ আরামদায়ক করে তুলেছে আধুনিক যানবাহনের ভিড়, সেখানে এমন অদ্ভুত সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছিলেন ওই যুবক? নিউ জার্সির বাসিন্দা টম টুর্কিখ তার উত্তরে জানান, তাঁর এক বন্ধুর মৃত্যুই এ কাজ করতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল তাঁকে। এক দুর্ঘটনায় মাত্র ১৭ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছিল অ্যান মারি নামের সেই বন্ধুটির। এই ঘটনা টমকে বুঝিয়ে দিয়েছিল জীবন আদতে কতটা ক্ষণস্থায়ী আর আকস্মিক। এই ঘটনার জেরে জীবনের সবকিছুকে নতুন করে মূল্যায়ন করতে শুরু করেন তিনি। এভাবেই তাঁর মনে হয়, নিজের গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে জীবনটাকে সবরকমভাবে ছুঁয়ে দেখতে হবে তাঁকে। আর প্রথমবার পায়ে হেঁটে বিশ্বভ্রমণ করে গিনেস রেকর্ড করা স্টিভেন নিউম্যান, অভিযাত্রী কার্ল বুশবি, এঁদের কথা জানার পর নিজের পরিকল্পনাও স্থির করে ফেলেন ওই যুবক।
আরও শুনুন: পঁচিশ বছরের আত্মীয়তা, হিন্দু কর্মচারীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করল মুসলিম পরিবারই
পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল প্রায় ১৫ বছর আগে। অতিরিক্ত পরিশ্রম করে এই সফরের জন্য অর্থ সঞ্চয় করতে শুরু করেছিলেন টম। অবশেষে এক স্থানীয় ব্যবসায়ী তাঁকে স্পনসর করতে এগিয়ে আসেন। নিজের ২৬ বছরের জন্মদিনের ঠিক আগে আগে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন টম। সেটা ২০১৫ সালের ২ এপ্রিল। সঙ্গে ছিল একটি স্লিপিং ব্যাগ, ল্যাপটপ, ডিএসএলআর ক্যামেরা, আর খাবার রাখার জন্য একটি প্লাস্টিক ক্রেট। নিউ জার্সি থেকে পানামা অব্দি পাড়ি দিয়েছিলেন একাই। তারপর টেক্সাসের একটি অ্যানিম্যাল শেলটার থেকে কুকুরটিকে সঙ্গী করেন টম। আর তাকে নিয়েই সফর চলে বোগোটা, কলম্বিয়া, উরুগুয়ে, অ্যান্টার্কটিকা থেকে ইউরোপ, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ইতালি- এমন সব চেনা অচেনা দেশ জুড়ে। টম-ই প্রথম ব্যক্তি যিনি গ্রিস থেকে তুরস্কে যাওয়ার পথে সুদীর্ঘ বসফরাস সেতু পায়ে হেঁটে পেরোবার অনুমতি পান। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মহাদেশে পা রাখার লক্ষ্য নিয়েই এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলেছিলেন টম।
আরও শুনুন: প্রিয়জনের মৃত্যুতে যেন জীবন না থমকায়, বার্তা দিয়ে ৯ হাজার কিমি বাইক র্যালি শহিদের স্ত্রীর
কোভিডের দরুন প্রায় বছরখানেক দীর্ঘায়িত হয়েছে এই সফর। তবুও হাল ছাড়েননি ওই যুবক। অবশেষে নিজের স্বপ্ন পূরণ করেই ঘরে ফিরলেন তিনি।