পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্রকে বাঁচাতে প্লাস্টিকের ব্য়বহার বন্ধ করতেই হবে। সেই লক্ষ্যে ১ জুলাই থেকে ৭৫ মাইক্রনের কম পাতলা প্লাস্টিক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। ফলে রাতারাতি বাজার থেকে মিলিয়ে যেতে চলেছে পাতলা প্লাস্টিক। ৭৫ মাইক্রনের বেশি প্লাস্টিকের জন্য আবার ক্রেতাকে গুনতে হবে ট্যাঁকের কড়ি। সব মিলিয়ে বেজায় বিপাকে ক্রেতা এবং বিক্রেতা, উভয়পক্ষই। তবে এই লড়াই বোধহয় ততটাও কঠিন নয়। হাতের সামনেই রয়েছে প্লাস্টিকের একশোটা বিকল্প। শুধু প্রয়োজন একটু সচেতনতার। বর্তমানে কী কী হতে পারে আপনার দোকান-বাজারের সঙ্গী, রইল তারই সুলুক সন্ধান। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বাজারে বন্ধ ৭৫ মাইক্রনের থেকে পাতলা প্লাস্টিকের ব্যবহার। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে জারি করা হয়েছে নির্দেশিকা। বিধি ভাঙলে রয়েছে কড়া জরিমানার নির্দেশও। আর তার পর থেকেই মাথায় হাত ক্রেতা-বিক্রেতাদের। কারণ ৭৫ মাইক্রনের বেশি মোটা প্লাস্টিক দিতে গেলে ক্রেতাদের থেকে নিতে হবে অতিরিক্ত মূল্য। যা দিতে নারাজ বহু ক্রেতাই। ক্রেতা হারানোর ভয়ে অনেক দোকানিই তাই গোপনে দিয়ে চলেছেন পাতলা প্লাস্টিক। নজরদারি চলছে বহু জায়গাতেই। তবু বজ্র আঁটুনির ফাঁক দিয়েই চলছে প্লাস্টিকের আদানপ্রদান। কিন্তু এতে যে আখেরে ক্ষতি আমাদেরই, তা বোঝার সময় এসে গিয়েছে বোধহয়। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের তথ্য বলছে, রাজ্যের পুরসভাগুলিতে মোট যে পরিমাণ বর্জ্য জমা হয়, তার ১২ শতাংশই নাকি প্লাস্টিক। রাজ্যের সমস্ত পুরসভার বর্জ্যকে একত্রিত করলে যে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে, তা যথেষ্ট ভয়ের। আর সেই বিপুল প্লাস্টিক নালায় গিয়ে পড়লে ভেঙে পড়তে পারে গোটা রাজ্যের নিকাশি ব্যবস্থা। পরিবেশের অন্যান্য ক্ষতি তো রয়েইছে। ফলে এখনও সতর্ক হতে না পারলে বিপদ অবশ্যম্ভাবী।
আরও শুনুন: আপেল থেকেই তৈরি হবে ‘প্লাস্টিক’, তাক লাগানো আবিষ্কার বাঙালি বিজ্ঞানীদের
প্লাস্টিক ছাড়া জীবনযাপন কি একেবারেই দুঃসাধ্য? এ লড়াইকে যতটা কঠিন ভাবছেন, আসলে ততটাও কিন্তু নয়। আসুন, আপনাকে দিই তেমনই একগুচ্ছ বিকল্পের সন্ধান। যা সঙ্গে রাখতে পারলে দেখবেন প্লাস্টিকের কথা মনেও পড়ছে না আপনার। দোকানে-বাজারে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করুন সুতির কাপড়ের ব্যাগ। ওজনেও হালকা, দেখতেও সুন্দর। বাহারি প্রিন্টের এই ব্যাগের ব্যবহার যেমন আপনার ফ্যাশন স্টেটমেন্টকে বজায় রাখবে, তেমন মেটাবে সমস্যাও। ব্যবহার করতে পারেন ক্যানভাসের ব্যাগও। বাজারে বাহারি রঙের বাহারি প্রিন্টের মেলে এই ব্যাগও। প্লাস্টিকের চেয়ে অনেক বেশি মজবুতও এই ব্যাগ। এছাড়া রয়েছে সম্পূর্ণ দেশি জুটের ব্যাগও। দেখতে সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি ভারী জিনিস বইতেও কিন্তু ওস্তাদ এই ব্যাগ। ইদানীং ডেনিমের ব্যবহার সর্বত্র। ব্যাগের ক্ষেত্রেও কিন্তু আপনার পছন্দ হতেই পারে ডেনিমের তৈরি বাহারি ব্যাগ। স্টাইলের পাশাপাশি এই ব্যাগও বেশ মজবুত। ব্যবহার করতে পারেন উলজাতীয় জিনেসের তৈরি ব্যাগও। আর হালকা জিনিস বওয়ার জন্য কাগজের ব্যাগ তো রয়েইছে আপনার হাতের কাছে। উপহার দিতে হোক বা নিত্য দিনের কাজে, আপনার পছন্দ হতেই পারে এই ধরনের ব্যাগ। খুব বেশি টেকসই না হলেও সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এই ব্যাগ। পাশাপাশি শিশুদের জন্যও একেবারে নিরাপদ এই ধরনের উপাদান।
আরও শুনুন: শুধু পরিবেশেই নয়, রক্তেও বিষ ঢালছে মাইক্রোপ্লাস্টিক! হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি
এ তো গেল প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যাগের বিকল্প। ১ জুলাই থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি সমস্ত উপাদানই। শ্যাম্পু, বডিওয়াশের বোতল থেকে মিনারেল ওয়াটারের বোতল, প্লাস্টিকের তৈরি ইয়ারবাড থেকে প্লাস্টিকের চামচ, থালা বা গ্লাস কিংবা স্ট্র, এ সমস্ত কিছুতেই পরিবেশের ক্ষতি বলে জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, এ সব কিছুর বিকল্প রয়েছে আমাদের চোখের সামনেই। ইদানিং বাঁশের তৈরি জিনিসের দারুণ রমরমা। দাঁতের ব্রাশ থেকে শুরু করে কাটলারি, বহু ক্ষেত্রেই এই বাঁশ থেকে তৈরি জিনিসপত্র যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনই টেকসই। তাছাড়া কাগজের স্ট্রয়ের ব্যবহার তো শুরু হয়ে গিয়েছে বহু আগে থেকেই। প্লাস্টিকের টিফিন বক্সের বদলে ব্যবহার করুন স্টেনলেস স্টিল কিংবা মেলামাইনের তৈরি বাসনপত্র। ব্যাগে সবসময় সঙ্গে রাখুন কাচের তৈরি জলের বোতল। প্লাস্টিকের বোতলে জল খাওয়া আপনার শরীরের জন্যও একেবারে ঠিক নয়। আবর্জনা ফেলতে ব্যবহার করুন বায়োডিগ্রেডেবল উপাদান দিয়ে তৈরি ব্যাগ। আর এই সামান্য জিনিসগুলো মাথায় রাখতে পারলেই কিন্তু কেল্লাফতে।
আসলে ব্যাপারগুলো কিন্তু মোটেও তেমন কঠিন নয়। পরিবেশকে সুস্থ ও সুন্দর করে তুলতে শুধু চাই একটু সচেতনতা আর চেষ্টা। আর সে পথে পা বাড়িয়েছে প্রশাসনও। এখন সময় শুধু আপনার এগিয়ে আসার।