কাশ্মীর মানে যেমন স্বর্গ, তেমনই উত্তেজনা লেগেই থাকে সেখানে বছরভর। বিশেষত সীমান্ত এলাকাগুলিতে তো বেশির ভাগ সময়েই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বাঁচতে হয় স্থানীয়দের। সেখানেই সীমান্ত প্রহরার পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছ ভারতীয় সেনা। কীভাবে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
চারদিকে বরফ ঢাকা পাহাড়। আকাশের রং এখানে স্বচ্ছ নীল। কাশ্মীরের এমনই অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে গরম কফিতে চুমুক দেওয়ার মজাটাই যেন আলাদা। আর ঠিক তেমনই পরিবেশেই খুলে ফেলেছেন তাঁরা আস্ত একটি ক্যাফে। যেখান থেকে মিলবে হাব্বা খাতুন পর্বতের দারুণ সুন্দর ভিউ।
আর এ সবের নেপথ্যে রয়েছেন তাঁরাই, যাদের ঘাড়ে রয়েছে সীমান্ত পাহারা দেওয়ার গুরু দায়িত্ব। তার পাশাপাশিই গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে পর্যটনেরও যাতে উন্নতি হয় তার জন্যই খোলা হয়েছে এই ক্যাফে।
আরও শুনুন: ঘরের ছাদ, দেওয়াল নেই… তবু হোটেল ভাড়া ২৬ হাজার টাকা, কেন জানেন?
উত্তর কাশ্মীরের বান্দিপোরা জেলার সীমান্ত সংলগ্ন গুরেজ সেক্টরের দাওয়ার এলাকায় রয়েছে সেনাবাহিনী পরিচালিত এমনই একটি অভিনব ক্যাফে, যার নাম ‘দ্য লগ হাট ক্যাফে’। গত বছর আন্তর্জাতিক কফি দিবসে উদ্বোধন করা হয়েছিল ক্যাফেটির। যেখানে এখনও পর্যন্ত কাজ পেয়েছেন প্রচুর স্থানীয় মানুষ। না, কোনও বিরল বা বিশেষ পদ নয়। বরং পেট ভরানোর মতো ম্যাগি, পাস্তা, পিৎজাই মেলে ওই ক্যাফেতে। যা তৈরি করেন গ্রামের বাসিন্দারাই।
ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে সেনা পরিচালিত এই ক্যাফেটি। একটা সময় এই গুরেজ সেক্টরে বিশেষ হোটেল বা থাকার জায়গা ছিল না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদের বাকেট লিস্টে ঢুকে পড়েছে উত্তর কাশ্মীরের এই এলাকাও। ফলে ক্যাফেতেও বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়। আর এখানে এলে সেনার এই ক্যাফেতে আসতেই হবে পর্যটকদের জন্য।
গত বছর এই ক্যাফেতে এসেছেন কম করে হলেও ১৫ হাজার পর্যটক। আর এ বছর সেই সংখ্যাটা বেশ কিছুটা বাড়বে বলেই আশা করা যাচ্ছে। এই ক’মাসেই বারো হাজারের বেশি পর্যটক ঘুরে গিয়েছেন দ্য লগ হাট ক্যাফে থেকে। এ বছরের শেষে সেটা পঞ্চাশ হাজার ছাড়াবে বলেই মনে করছে সেনা।
আরও শুনুন: দৈর্ঘ্য ১৩৪ মিটার, ওজনে ৫ কেজি! ভাইকে লেখা দিদির ‘বড়সড়’ চিঠি-ই গড়ল রেকর্ড
প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন রকম বিশেষ অনুষ্ঠান ও সঙ্গীত সন্ধ্যারও আয়োজন করা হয় পর্যটকদের জন্য। যেখানে যোগ দেন গ্রামের লোকজনও। সেখানে অনুষ্ঠানও করেন স্থানীয়রাই। ফলে এলাকার বাসিন্দাদের সংস্কৃতিগত ভাবে আলাদা একটা মঞ্চ করে দিয়েছে এই ক্যাফে। সব মিলিয়ে সেনাবাহিনীর এই উদ্যোগে দারুণ খুশি স্থানীয়রা। কর্মসংস্থান, পর্যটনের পাশাপাশি এর ফলে সেনার সঙ্গে মানুষের সম্পর্কও অনেক সহজ হয়েছে বলেই মনে করছেন স্থানীয়দের একাংশ। এমনিতেই সীমান্ত এলাকায় সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় সেখানকার বাসিন্দাদের। আর সে সমস্ত কিছুর মধ্যেই এই ক্যাফে যেন একখণ্ড স্বস্তি হয়ে দেখা দিয়েছে গুরেজ সেক্টরের অধিবাসীদের কাছে। সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় এমন উদ্যোগ শান্তি বজায় রাখতেও সাহায্য করবে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলও।