কথায় আছে, রাখে হরি মারে কে! পোলিওর বিরুদ্ধে অবিরাম লড়াই করেই বছর বেঁচে আছেন এক বৃদ্ধ। সঙ্গী বলতে ‘আয়রন লাং’ নামে এক কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র। তাঁর সমসাময়িক সকলেই প্রায় হার মেনেছেন জীবনযুদ্ধে। কিন্তু তিনি ব্যতিক্রম। আসুন শুনে নেওয়া যাক তাঁর জীবনসংগ্রামের কাহিনি।
বয়স তখন মাত্র ৬। খেলার মাঠ থেকে ফিরে সেই যে বিছানায় শুয়ে পড়ল ছোট্ট ছেলেটি, জীবনভর আর নিজের ক্ষমতায় উঠেই দাঁড়াতে পারল না। পুরো নাম, পল আলেকজান্ডার। পোলিও মহামারীর শিকার হয়ে চিরকালের মতো কর্মক্ষমতা হারিয়েছিলেন তিনি। তবে সঙ্গী ছিল অবিশ্বাস্য মনের জোর। সারা শরীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হলেও, এই ৭৬ বছরের জীবনে একটিবারও লড়াই ছাড়েননি তিনি। আর সে লড়াইয়ের কথা শুনলে বিস্মিতই হতে হয়। কী না কী করেছেন পল! শরীরের এই অবস্থা সত্ত্বেও করেছেন ওকালতির পড়াশোনা। এমনকী ৩০ বছর কাটিয়েছেন কোর্টরুম এটর্নি হিসাবেও। এখানেই শেষ নয়। লিখেছেন একটা গোটা বইও। যেখানে লেখা আছে তাঁর জীবনসংগ্রামের প্রতিটা অধ্যায়ের কথা। তবে না, আঙুলে কলম ধরে বই লেখার সাধ্য ছিল না তাঁর। তাতে অবশ্য তিনি দমেননি। বেছে নিয়েছিলেন বিকল্প পথ। বলা যায়, অসাধ্যসাধনই করেছিলেন ইচ্ছাশক্তির জোরে। সেই কথাই লেখা আছে তাঁর আত্মজীবনীর ছত্রে ছত্রে।
আরও শুনুন: একাই একশো! ঘাঁটিতে ঢুকে ৪০ জন রুশ সেনাকে ঘায়েল করল ইউক্রেনের ছাগল
কীভাবে কাটালেন এতগুলো দিন? এ-প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে বৃদ্ধের জীবনকে যেন রূপকথার গল্প বলেই মনে হয়। গোটা শরীরটাই প্রায় মেশিনের ভিতর ঢোকানো। শুধুমাত্র মুখটুকু থাকে বাইরে। আর তা দিয়েই যাবতীয় কাজ সেরে নেন পল। দাঁত দিয়ে পেনসিল ধরে কিশোর বয়সেই আঁকতে পারতেন সুন্দর ছবি। সেভাবেই পেনসিলের সাহায্যে কি-বোর্ডে চাপ দিয়ে করতে পারেন টাইপ-ও। চিকিৎসকরা বহুবার চেষ্টা করেন তাঁকে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র থেকে বের করে সাধারণ জীবনে ফিরিয়ে আনার। প্রতিবারই ব্যর্থ হতে হয় তাঁদের। সারাদিন কোনক্রমে কাটালেও রাত্রে ওই ‘আয়রন লাং’ ছাড়া কিছুতেই থাকতে পারতেন না পল। একবার এক চিকিৎসক তাঁকে বলেন, অন্তত তিন মিনিট আয়রন লাং ছাড়া থাকতে পারলেই, তিনি পলকে একটি ছোট্ট কুকুর উপহার দেবেন। সেই তিন মিনিট বাস্তবায়িত করতে এক বছর লড়াই করেছিলেন পল। সেই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনেই নিজের বইয়ের নাম দেন ‘থ্রি মিনিটস ফর আ ডগ’। পোলিও আক্রান্ত রোগী সাধরণত এতদিন বাঁচেন না। সেখানে পল রীতিমতো হাসতে হাসতেই বলছেন তাঁর জীবনের গল্প। চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাছেও এ এক আশ্চর্য ঘটনা।
আরও শুনুন: আশ্চর্য ক্ষমতা এই জাদু-আংটির! বারবার হারালেও ফিরে আসে ঠিক মালকিনের কাছেই
আরও বাঁচতে চান পল। সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে চান জীবনসংগ্রামের লড়াই। যেখানে এত মানুষ ডিপ্রেশনের শিকার হয়ে আত্মহননের মতো পথ বেছে নেন, সেখানে তাঁর এমন অসাধারণ জীবনকথা যে সত্যিই ভীষণ প্রয়োজনীয়, তা বলাই যায়।