সমস্যা পূরণের জন্য ভগবানের দরজায় মানত করে সাধারণ মানুষ। এ-প্রথা বহুকালের। এই ধরনের পুজো দেওয়ার উপকরণ এবং পদ্ধতি দুই-ই বেশ বিচিত্র। কখনও সন্তানের ওজনের সমান বাতাসা বিলি, তো কখনও গোটা মন্দির চত্বর জুড়ে দন্ডি কাটা- মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য মানুষ কত কী-ই না করে! কিন্তু কখনও কি শুনেছেন যে, পুজো দেওয়া হচ্ছে খেলনা এরোপ্লেন দিয়ে? তাও আবার বিদেশ যাত্রার মনস্কামনা পূরণের জন্য! কোথায় ঘটে এমন অদ্ভুত কাণ্ড? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সাধারণত গুরুদ্বার, মন্দির বা মসজিদের বাইরের দোকানে সাজানো থাকে ফুল মিষ্টি বা পূজার প্রয়োজনীয় সামগ্রী। কিন্তু পাঞ্জাবের এক গুরুদ্বারের সামনের ছবিটা বেশ আলাদা। এখানকার দোকানগুলিতে থরে থরে রাখা আছে শুধু খেলনা বিমান। পুজোর মূল উপকরণই নাকি সেটাই। আর হবে নাই বা কেন! এখানে যাঁরা পুজো দিতে আসেন, তাঁদের মূল উদ্দেশ্যই তো বিদেশ যাওয়া! অবাক হচ্ছেন তো? পাঞ্জাবের জলন্ধরের কাছেই রয়েছে এমন এক আশ্চর্য গুরুদ্বার। প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো এই গুরুদ্বারে ভক্তরা আসেন বিদেশযাত্রার মনস্কামনা নিয়েই, আর তাই পুজো দেওয়া হয় খেলনা বিমান দিয়েই। স্থানীয়দের কাছে তাই এর নামই হয়ে গিয়েছে ‘হাওয়াইজাহাজ গুরুদ্বার’।
আরও শুনুন: ঘরের ছাদ, দেওয়াল নেই… তবু হোটেল ভাড়া ২৬ হাজার টাকা, কেন জানেন?
প্রতি বছর পড়াশোনার উদ্দেশ্যে বা কর্মসংস্থানের আশায় বিদেশে পাড়ি জমান হাজার হাজার ভারতীয়। কিন্তু বিদেশ যাওয়ার ছাড়পত্র বা ভিসা পেতে বেজায় ভোগান্তি সহ্য করতে হয়। একেক দেশের একেক রকম নিয়ম, আর তার ফলেই সুযোগ পেলেও অনেকেরই বিদেশযাত্রা আটকে যায়, কেননা বাধ সাধে ওই ভিসার গেরো। ঠিক তখনই তাঁরা শরণাপন্ন হন এই গুরুদ্বারের। বিশ্বাস এই যে, খেলনা বিমান দিয়ে এখানে পুজো দিলেই আর কোনও সমস্যা থাকবে না। ঠিক কবে থেকে এমন প্রথার শুরু হয়েছে, তার খবর অবশ্য কেউ সঠিক ভাবে বলতে পারেন না। তবে এখনও এই প্রথা সমান জনপ্রিয়। শোনা যায়, প্রতি সপ্তাহে নাকি কম করে ২০০টি খেলনা এরোপ্লেন দিয়ে পুজো দেওয়া এখানে।
আরও শুনুন: প্রকাশ্যে ঘনিষ্ঠতা ‘অপরাধ’! ভালবাসার মাশুল দিয়ে বহুবার হেনস্তার শিকার যুগল
এমনকী এর ছাদে রাখা আছে এক বিশালাকায় বিমানের মডেল। হয়তো কোনও এক ভক্তেরই দান। স্থানীয়রা যদিও আক্ষেপের সুরে বলেন, প্রতিদিন বহু মানুষ এই স্থানে খেলনা এরোপ্লেন দিয়ে পুজো দিতে আসেন; প্রত্যেকেরই মনের ইচ্ছা তাঁদের ভিসা পাওয়ার জটিলতা কেটে যাক; কিন্তু অনেকেই জানেন না কার স্মৃতির উদ্দেশে এই গুরুদ্বার তৈরি করা হয়েছে। কথায় বলে, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু; ফলে এইভাবে পুজো দিলেই যে সমস্যার সুরাহা হবে – এমনটাই বিশ্বাস করেন বহু মানুষ। তাতে সত্যিই সমস্যার সুরাহা হয় কিনা, সে প্রশ্ন আলাদা। তবে এই সুবাদে স্থানীয় বাচ্চাদের ঘরে জমা হয় অনেক খেলনা বিমান। কারণ ঈশ্বর নন, পুজোর শেষে সেগুলির আসল মালিক হয় তারাই।