প্রযুক্তি থেকে শুরু করে সাজসজ্জা, সব কিছুই তার আন্তর্জাতিক মানের। শুধু তাই নয়, বিলাসবহুল ক্রুজ হিসেবেও এককালে এই জাহাজের দাম ছিল আকাশছোঁয়া। বিশ্বের বৃহত্তম ক্রুজ জাহাজ হিসেবেও ছিল খ্যাতি। তবে সেই দিন ফুরিয়েছে। তাই আজ সেই বিশ্বমানের জাহাজের জায়গা হতে চলেছে আস্তাকুঁড়ে। কেন? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
উদ্দাম সমুদ্রের বুকে ভেসে যাওয়ার সেসব সোনালি দিন আর নেই। নেই সিগালদের চোখে চোখ রেখে অবিরাম ঢেউ গোনা। আজ শুধু আস্তাকুঁড়ে যাওয়ার দিন গোনে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রুজ জাহাজ ‘গ্লোবাল ড্রিম-টু’। এককালে অন্তত ৯০০০ জন যাত্রীকে বুকে নিয়ে ভেসে যেত এই জাহাজ। ঘুরে বেড়াত এ মহাদেশ থেকে সে মহাদেশ। অন্তত হাজার দু’য়েক জাহাজকর্মী কাজ করতেন তাতে। তবে সেসব আজ অতীত। জার্মানির বাল্টিক উপকূলের শিপইয়ার্ডে এখন একা পড়ে থাকে ‘গ্লোবাল ড্রিম-টু’।
আরও শুনুন: বিয়ের খরচ ২৩ লাখ টাকা উপহার দিন নিমন্ত্রিতরাই! অদ্ভুত আবদার নবদম্পতির
কীই বা করার! জাহাজটির নির্মাণকারী সংস্থা এমফো ওয়েরফটেন নিজেই যে দেনার দায়ে বিপর্যস্ত। এ বছরের জানুয়ারি মাসে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে সংস্থাটি। আর তার সঙ্গেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ‘গ্লোবাল ড্রিম-টু’-র ভবিষ্যৎও। বহু চেষ্টা করেও জাহাজটির জন্য একজনও ক্রেতা খুঁজে বের করতে পারেনি সংস্থাটি। কেউ-ই কিনতে চায়না তাকে। জার্মান জাহাজ ক্রুজ ইন্ডাস্ট্রি বোর্ড জানিয়েছে, তাই বাতিলের দামে বিকিয়ে যেতে চলেছে জাহাজের কাঠামোটি। বাকি অংশগুলিরও ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গিয়েছে।
বাতিলের খাতায় তো সে চলে গিয়েছে কবেই। শিপইয়ার্ডে যে জায়গাটি দখল করে ছিল সে, সেটিও ছাড়ার সময় এসে গিয়েছে তার। কারণ ওই অংশটিও তো বিক্রি হয়ে গিয়েছে ‘থাইসেনক্রাপ’ নামে একটি সংস্থার নৌ-শাখার কাছে। সেখানে সেনাবাহিনীর নৌকা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কথা মাথায় রেখে আপাতত প্রতিরক্ষাতেই বেশি জোর দিতে চাইছে জার্মানি।
আরও শুনুন: শুধু নাক-মুখ নয়, পায়ুপথেও সম্ভব শ্বাসক্রিয়া, চমকপ্রদ আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের
আর ‘গ্লোবাল ড্রিম-টু’-র জায়গা নিতে এগিয়ে এসেছে ‘গ্লোবাল ড্রিম’ নামে অন্য একটি জাহাজ। জার্মানির উত্তরে উইসমারের ডকে আপাতত নোঙর তোলবার প্রস্তুতি সারছে সে। অথচ এই দুটি জাহাজেরই শুরুটা হয়েছিল একই সংস্থার হাত ধরে। তবে মধ্যিখানে বাধ সাধে করোনা। অতিমারীর দাপটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পর্যটন শিল্পে। আর তার প্রভাবেই আস্তাকুঁড়ে ঠাঁই হতে চলেছে ‘গ্লোবাল ড্রিম-টু’-র।
আসলে যে সংস্থা এই দুটি জাহাজ বানাতে শুরু করেছিল, করোনার কারণে সেটি পড়ে বিপর্যয়ের মুখে। হংকংয়ের অন্য় একটি সংস্থার সঙ্গে মিলে যেতে বাধ্য় হয় সংস্থাটি, ফলে স্বপ্নের ক্রুজ বানানোর স্বপ্নেরও দফারফা।
বোর্ড জানিয়েছে, এশিয়ার ওই সংস্থাটিই একমাত্র আগ্রহী ছিল জাহাজটি নিয়ে। এদিকে, নতুন সংস্থাটি সিঙ্গাপুরের একটি নতুন ক্রুজ ব্র্যান্ডের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ব্যবসা এগোতেই বেশি আগ্রহী। তার উপরে পর্যটন নিয়ে চিনের কড়া বিধিনিষেধের জেরে আরও মার খায় ক্রুজের ব্যবসা। সব মিলিয়ে কপাল পোড়ে ‘গ্লোবাল ড্রিম-টু’-র। জানা গিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহেও যদি কোনও খরিদ্দার না পাওয়া যায়, জাহাজের বিভিন্ন অংশের নিলাম শুরু হয়ে যাবে। আর ইতিহাসের তলায় তলিয়ে যাবে ২০৮ হাজার টনের এই বিলাসবহুল জাহাজ।