ছোট থেকে যাঁকে ‘হিরো’ মনে করে বেড়ে ওঠা, তাঁর জন্য একটা বিশেষ দিন না থাকলে কি চলে? প্রতিদিনের যাপনে যে ভালবাসা মিলিয়ে থাকে, তাকেই উজ্জ্বল করে তোলে পিতৃদিবস, ওরফে ফাদার্স ডে। ভারচুয়াল দুনিয়ার সুবাদে যে দিনের কথা এখন সবারই জানা। কিন্তু এমন একটি দিবস শুরু করার কথা কে প্রথম ভেবেছিলেন, জানেন? আসুন, শুনে নেওয়া যাক সে কথাই।
না, হাল আমলের কোনও হুজুগ নয় মোটেই। ফাদার্স ডে-র বয়স দেখতে দেখতে পেরিয়ে গিয়েছে একশো বছর। অবাক হলেন বুঝি? আজ্ঞে হ্যাঁ, অতগুলো দিন আগেই বাবাদের জন্য বছর একটি বিশেষ দিন নির্দিষ্ট করার কথা ভেবেছিলেন একজন। তিনি একজন মহিলা, নাম গ্রেস গোল্ডেন ক্লেটন। তবে কেবল নিজের বাবার কথা ভেবে নয়, তাঁর মতো আরও অনেকে যাতে এই দিনটিতে বাবার কথা বিশেষভাবে মনে করতে পারে, এমনটাই চেয়েছিলেন তিনি। আর তাঁদের সকলের উদ্দেশেই তিনি চালু করেন ফাদার্স ডে-র ধারণা। ব্যক্তিগত জীবনে এক ভয়ংকর ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার পরেই এই ভাবনা তাঁর মাথায় এসেছিল। কী সেই ঘটনা? তাহলে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: আশ্চর্য মনের জোর! পক্ষাঘাতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হুইলচেয়ারে চড়েই শৃঙ্গজয় ব্যক্তির
সেটা ১৯০৭ সাল। এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় নিজের বাবাকে হারিয়েছিলেন পশ্চিম ভার্জিনিয়ার বাসিন্দা ওই মহিলা। কেবল তিনিই নন, ওই একই দুর্ঘটনায় পিতৃহারা হয় আরও অন্তত এক হাজার ছেলেমেয়ে। সে বছরের ৬ ডিসেম্বর একটি কয়লাখনিতে আকস্মিক দুর্ঘটনা ঘটার জেরে প্রাণ হারান ৩৬১ জন মানুষ। আর তাঁদের মধ্যে ২৫০ জনই ছিলেন সন্তানের বাবা। এই সন্তানদের প্রতিনিধি হিসেবেই ওই নিহত ব্যক্তিদের জন্য কিছু করার কথা ভেবেছিলেন ক্লেটন। কিন্তু সবাইকে জড়ো করে সেই ভাবনাকে রূপ দিতে দিতে কেটে গিয়েছিল আরও অনেকটা সময়। অবশেষে ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই তারিখে একটি স্মরণসভার আয়োজন করেন তিনি। আসলে ওই দিনটি ছিল তাঁর বাবার জন্মদিনের সবচেয়ে কাছাকাছি থাকা রবিবার। সেই দিনটিতেই একসঙ্গে জড়ো হয়ে ওই দুর্ঘটনায় নিহত সকল ব্যক্তিকে স্মরণ করেছিলেন তাঁদের সন্তানেরা। আর এই দিনটিকেই পিতৃদিবস উদযাপনের শুরুয়াত বলে মনে করেন অনেকে।
আরও শুনুন: পাত্রের গোঁফ-দাড়ি থাকলে বিয়েই বাতিল, আজব নিয়ম রাজস্থানের গ্রামে
তবে এই আয়োজনের খবর আঞ্চলিক গণ্ডি ছাড়িয়ে বাইরে ছড়িয়ে পড়েনি সেভাবে। বলা হয়, এর ঠিক আগের দিনই নাকি আরও দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ওই অঞ্চলেই। জুলাই মাসের ৪ তারিখেই আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়। এদিকে সেই দিনেই আবার ওই অঞ্চলের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সন্তানের মৃত্যু হয়েছিল, তার শেষক্রিয়াতেও উপস্থিত ছিলেন শহরের অনেক মানুষ। এই দুই ঘটনার প্রভাবে পিতৃদিবস পালনের ঘটনাটি সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। এমনকি শহরের পরিচালনা সমিতির কাছে আবেদন করে এই দিনটিতে সরকারি শিলমোহর দেওয়ার কথাও ভাবেননি কেউ। ফাদার্স ডে-র ভাগ্যে সরকারি স্বীকৃতি মিলতে মিলতে আরও অনেকগুলো দিন পেরিয়ে গিয়েছিল। শেষমেশ ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন আইন পাশ করে ফাদার্স ডে-কে জাতীয় দিবসের মর্যাদা দেন।
অনেকেই মনে করেন, এইসব বিশেষ দিন আসলে পুঁজিবাদের একেকটি নতুন কৌশল মাত্র। কিন্তু ফাদার্স ডে-র ক্ষেত্রে বিষয়টা আদৌ তা ছিল না। পরিবারের মুখে খাবার জোগাতে গিয়ে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছিলেন, তেমন কয়েকজন বীরকেই সম্মান জানায় এই দিনটির ইতিহাস। সেই পরম্পরা বেয়েই, পরিবারের জন্য প্রতিদিন যাঁরা প্রাণপাত করে পরিশ্রম করে চলেছেন, আজও তাঁদের কুর্নিশ জানায় এই দিন।