বিয়ে হয়ে গিয়েছে দেখাশোনা করেই। বাপের বাড়ি, বরের বাড়ি মিলিয়ে মাস দশেক কেটেও গিয়েছে দাম্পত্য জীবনের। আর এতগুলো দিন পেরিয়ে এসে স্ত্রী আচমকা বুঝতে পারলেন, যাঁকে তিনি স্বামী বলে ভেবে এসেছেন, তিনি আসলে পুরুষই নন; তিনি পুরুষের ছদ্মবেশে একজন নারী। নাহ, গল্পকথা বা পৌরাণিক কোনও কাহিনী নয়। একেবারে বাস্তবেই এহেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন এক মহিলা, আসুন শুনে নেওয়া যাক তাঁর কথা।
বৈবাহিক সম্পর্কে কাউকে জড়িয়ে, সেই সূত্র ধরে প্রতারণা চক্র চালানো- খুব নতুন কিছু নয় এ-কথা। আমাদের মনে পড়তে পারে, সুবোধ ঘোষের ‘ঠগিনী’-র কথা, যা উঠে এসেছিল সিনেমার পর্দাতেও। কিন্তু পর্দার বাস্তব আর বাস্তবের পর্দা-ওঠা জগতের মধ্যে ফারাক বিস্তর। বাস্তবে যে প্রতারণা কত বিচিত্র ধরনের হতে পারে, তা জেনে, আমাদের হতবাকই হতে হয়। যেমন বাকরুদ্ধ হয়েছেন জনৈক মহিলা। বিয়ের মাস দশেক পরে তিনি বুঝতে পেরেছেন, জীবনে মস্ত প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি। কেননা তাঁর স্বামী পুরুষই নন। পুরুষের ছদ্মবেশে এক নারী-ই তাঁকে মাস দশেক ধরে ঠকিয়েছে, আর তিনি ঘুণাক্ষরেও তা টের পাননি।
আরও শুনুন: ‘নারী যৌন ইচ্ছার কারণ’! আয়ুর্বেদ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে চাওয়া হল এর ব্যাখ্যা, ঘনাল বিতর্ক
অথচ বিয়েটা হয়েছিল বেশ ভালভাবেই। একটি অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় তথাকথিত পাত্র আর এই পাত্রীর। সেই সময়, ছদ্মবেশী পাত্র জানিয়েছিলেন, তিনি একজন ব্যবসায়ী। এবার বিয়ে করবেন মনস্থ করেছেন, তাই পাত্রী খুঁজছেন। এরপর স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যেভাবে এগোয়, সেভাবেই গড়াতে থাকে সম্পর্কের জল। একসময় পাত্রী অর্থাৎ প্রতারণার শিকার হওয়া মহিলা ঠিক করে ফেলেন, এই পাত্রকেই তিনি বিয়ে করবেন। ২০২১-এ বিয়েও হয়ে যায় দুজনের। তবে, সোশ্যাল ম্যারেজ হলে, আইনি প্রক্রিয়ার বিবাহ খানিকটা থমকে যায়। কেননা, পাত্রের কাগজপত্রে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এই কারণেই পাত্রীর মা-বাবার খানিকটা খটকা লাগে। যদিও জামাইকে তখন তাঁরা কিছুই বলেননি।
আরও শুনুন: যোগা করেন যে মহিলারা তাঁরাই বেশি ঠকান সঙ্গীকে! আজব সমীক্ষায় অবাক নেটিজেনরা
দাম্পত্যের একেবারে গোড়ার দিকে ঘরজামাই হয়ে বেশ কিছুদিন ছিলেন এই প্রতারক পাত্র বা ছদ্মবেশী নারী। সেই সময় ছুতো-নাতায় স্ত্রী-র মা-বাবার থেকে টাকাও চাইতেন তিনি। এতে জামাইয়ের উপর সন্দেহ আরও গাঢ় হয়। এর কিছুদিন পর গুণধর ছদ্মবেশী জামাই আবার তাঁর বউকে নিয়ে পাড়ি দেন অন্যত্র। সেখানে নিজের ঘরে থাকতে শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু থাকা বলে থাকা! নির্যাতিতা পরে জানিয়েছেন, একরকম বন্দি হয়েই থাকতে হত তাঁকে। কারও সঙ্গে কথাবার্তা আর দেখাসাক্ষাতের বালাই ছিল না। এই খবর পেয়ে আর দেরি করেননি মেয়েটির মা-বাবা। সোজা যোগাযোগ করেন পুলিশের সঙ্গে। আর তারপরেই ফাঁস হয় আসল তথ্য। পুলিশি তদন্ত এগোতেই ধরা পড়ে যায় ওই ছদ্মবেশী নারী তথা গুণধর স্বামী। বোঝা যায়, এটা আসলে একটা প্রতারণা চক্রের সাজানো ঘটনা। পরিকল্পনামাফিক ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে, এভাবেই টাকা হাসিল করে তারা।
আরও শুনুন: অন্তর্বাসের নেই লিঙ্গভেদ! প্যান্টি পরে এবার প্রথা ভাঙলেন পুরুষ মডেল
সম্প্রতি নিজের জীবনের এই বিপর্যয়ের কথা জানিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার এই মহিলা। আর তা জানতে পেরে চোখ কপালে উঠেছে সকলের। সবারই প্রশ্ন, একজন নারী পুরুষ হিসাবে অভিনয় করে গেল, আর মহিলা তা ধরতে পারলেন না! ধরতে যে পারেননি, তা তো সত্যি। আরও কিছু প্রশ্ন উঠেছে। এই দশমাসে নবদম্পতির যৌনজীবন কেমন ছিল? তাতেই তো সবটা ফাঁস হয়ে যাওয়ার কথা। এর উত্তর দিয়েছেন নির্যাতিতা। জানিয়েছেন, যৌনতার মুহূর্তে বরাবর আলো নিভিয়ে দিতেন তাঁর তথাকথিত স্বামী। তারপর বিকল্প উপায়ে, মহিলার সন্দেহ, সেক্স টয় বা ওই জাতীয় কোনও কিছুর মাধ্যমেই লিপ্ত হত সঙ্গমে। ফলে তিনি আভাস পেলেও, প্রতারণার সবটা ধরতে পারেননি। যখন সব স্পষ্ট হল, ততদিনে পেরিয়ে গিয়েছে ১০ মাস।
প্রতারণার এই বহর যে সিনেমাকেও হার মানায়, তা বোধহয় বলাই যায়।