‘ভুলভুলাইয়া’ সিনেমার কথা মনে আছে? যেখানে শৈশবের শাসনের স্মৃতি ভুলে গিয়েও ভুলতে পারেনি নায়িকা। আর সেই অন্ধকার স্মৃতিই তাকে ঠেলে দিয়েছিল এক ভয়াবহ অসুস্থতার দিকে। অনেক আনন্দ, অনেক উল্লাসের স্মৃতি পেরিয়েও কেন ভয়ের স্মৃতি এমন জাঁকিয়ে বসে থাকে আমাদের মনে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক সে কথা।
কথায় বলে, সময় সবকিছু ভুলিয়ে দেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব স্মৃতিই কমবেশি ফিকে হয়ে আসে। কমে যায় ঘটনার তীব্রতা। কিন্তু অন্য সব ক্ষেত্রে যাই হোক, ভয় যেন কিছুতেই পিছু ছাড়তে চায় না। যেসব ঘটনা আমাদের মনে তীব্র ভয়ের জন্ম দেয়, দেখা যায়, সেইসব ঘটনা অনেকদিন পরেও মনে থেকে যায় অবিকল। বারবার স্মৃতিতে ফিরে ফিরে আসে সেই ঘটনাগুলো। ভয়-ধরানো স্মৃতিগুলোর এমনভাবে তাড়া করাকেই ‘ট্রমা’ বলে চিহ্নিত করেন বিজ্ঞানীরা। আধুনিক সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দিতে শিখেছে মানুষ, তাই এই ট্রমা থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী, তা নিয়ে চর্চা চলছেই। কিন্তু এবার এই অসুখের গোড়া ধরেই টান দিলেন গবেষকেরা। চিকিৎসাশাস্ত্রে যেমন বলা হয়, রোগ হবার আগেই সারাও, যেন সেই কথাকেই শিরোধার্য করলেন তাঁরা। খতিয়ে দেখলেন, কেন ভয়ের ঘটনাগুলি মনে এমন চিরস্থায়ী ছাপ ফেলে যায়। আর সম্প্রতি সেই কারণ আবিষ্কার করে ফেলেছেন বলেই দাবি করলেন তুলানে ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টাফটস ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষকেরা।
আরও শুনুন: ছোটবেলার কথা মনে আছে! জানেন, কেন জন্মের প্রথম বছর দুয়েকের কথা মনেই থাকে না?
কী জানিয়েছেন তাঁরা?
মানুষের মস্তিষ্কের যে অংশে এই ভয়ের স্মৃতিগুলি বাসা বাঁধে, সেই অ্যামিগডালাকে কেন্দ্র করেই গবেষণা চালিয়েছেন তাঁরা। সেই গবেষণায় তাঁরা দেখেছেন, এক বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কে ভয়ের জন্ম দেয় এক ধরনের স্ট্রেস নিউরোট্রান্সমিটার। সেগুলি অ্যামিগডালার মধ্যে থাকা এক শ্রেণির নিউরন, অর্থাৎ স্নায়ুর একককে উদ্দীপিত করে তোলে। এর ফলে সেই নিউরনগুলি ক্রমাগত বৈদ্যুতিন ক্ষরণ ঘটায়। আর এইভাবেই জন্ম নেয় ভয়। এই প্রসঙ্গে তুলানে ইউনিভার্সিটির নিউরোসায়েন্সের প্রফেসর জেফ্রি টাস্কার সশস্ত্র ডাকাতির উদাহরণ টেনেছেন। তাঁর কথায়, যদি আমাদের বন্দুকের মুখে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, আমাদের মস্তিষ্ক একগুচ্ছ স্ট্রেস নিউরোট্রান্সমিটার ক্ষরণ করবে। যেভাবে কোনও উত্তেজক পরিস্থিতিতে অ্যাড্রিনালিন রাশ হয়, তেমনই কোনও ভয়ের পরিস্থিতিতে এই ঘটনা ঘটায় আমাদের মস্তিষ্ক। আর এমন তীব্রতা নিয়ে যে ভয়ের জন্ম হয়, তা অ্যামিগডালার মধ্যে থাকা আবেগকেন্দ্রের বৈদ্যুতিন ক্ষরণের ধরনটাই বদলে দেয়। সেখান থেকেই পিটিএসডি বা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার-এর উৎপত্তি, বলে মনে করেছেন গবেষকেরা।