ফের বদল সর্বভারতীয় পাঠক্রমে। গুজরাট হিংসা কিংবা জরুরি অবস্থার মতো একাধিক সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনা বাদ পড়ল নয়া সিলেবাসে। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাসে যা যা বদল ঘটেছে, বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে তার তালিকা জানাল NCERT। কর্তৃপক্ষের তরফে পড়ুয়াদের চাপ কমানোর যুক্তি দেওয়া হলেও এর মধ্যে অন্যরকম ইঙ্গিত রয়েছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। ঠিক কীভাবে বদলে গেল নতুন পাঠক্রম? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্য বই থেকে বাতিল করা হল ২০০২ সালের গুজরাট হিংসার অধ্যায়। বাদ পড়ল ইন্দিরা গান্ধীর আমলে দেশে জারি করা জরুরি অবস্থার কথাও। একই সূত্রে নকশাল আন্দোলন এবং আরও একাধিক রাজনৈতিক আন্দোলনের কথাও বাদ পড়েছে নয়া সিলেবাসে। ‘স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতে রাজনীতি’ শীর্ষক অধ্যায়ে এতদিন পড়ানো হত এই বিষয়গুলি। এখানেই শেষ নয় অবশ্য। পরিবর্তনের আওতা থেকে বাদ যায়নি মধ্যযুগও। দ্বাদশ শ্রেণির পাঠক্রম থেকে মুঘল আমলের দরবার ও বিচারসভার প্রসঙ্গ এবং একাদশের পাঠক্রম থেকে এশিয়া-আফ্রিকায় মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তারের অধ্যায় বাদ পড়েছে নতুন সিলেবাসে। নয়া শিক্ষানীতি মোতাবেক ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সিলেবাসে এই পরিবর্তনগুলি আনা হয়েছে, এই মর্মে সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ওরফে NCERT।
আরও শুনুন: বিতর্কের আবহেই বাণিজ্য, কুয়েতে বিপুল পরিমাণ গোবর রপ্তানি ভারতের
এই প্রথম নয়, বরং ইদানীং কালে বারে বারেই কোপ পড়েছে স্কুল-কলেজের সিলেবাসে। কখনও উত্তরপ্রদেশের পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা প্রবন্ধ, কখনও দিল্লি ইউনিভার্সিটির ইংরেজি কোর্স থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে মহাশ্বেতা দেবীর লেখা দলিত মহিলার কাহিনি, কখনও আবার খোদ দলিত কবি-সাহিত্যিকদের লেখাই বাদ পড়েছে পাঠক্রম থেকে। চলতি বছরেই সিবিএসই পাঠক্রম থেকে বাদ পড়েছিল উর্দু কবি ফৈজ আহমেদ ফৈজের দুটি কবিতা, লাহোর জেলে বন্দি থাকার সময় যা লিখেছিলেন তিনি। তা ছাড়া রাজনৈতিক ইতিহাস থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছিল একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ। দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সিলেবাস থেকে বাদ পড়েছিল ‘কোল্ড ওয়ার এরা অ্যান্ড নন-অ্যালাইন্ড মুভমেন্ট’, যেখানে মূলত দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরুর শাসনকাল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। এবারে সেই বদলের তালিকায় নয়া সংযোজন গুজরাটের হিংসাত্মক ঘটনার সেই কালো অধ্যায়। ওই অধ্যায়টিতে লেখা ছিল, “গুজরাট হিংসা দেখিয়েছিল যে প্রশাসনও সাম্প্রদায়িক উসকানি দিতে পারে। রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করার ফল যে কী বিপজ্জনক হতে পারে, আমাদের সে বিষয়ে সতর্ক করেছিল গুজরাট। গণতান্ত্রিক রাজনীতির পক্ষে যা সর্বনেশে।” কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দিক যখন বারেবারেই ধর্মীয় পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে, সেই সময়ে কেন্দ্রীয় দপ্তরের তরফে এই বিশেষ অধ্যায়টি পাঠক্রম থেকে বাদ দেওয়াকে সহজভাবে নিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
আরও শুনুন: রুখে দিয়েছিলেন মহম্মদ ঘোরির জয়রথ, পৃথ্বীরাজই কি ভারতের শেষ হিন্দু শাসক?
নিজের পছন্দমতো শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রচলন করে তার মাধ্যমে নিজের আদর্শ প্রচার ও বিপক্ষের আদর্শ মুছে দিতে চায় সরকার, এমনটাই বলে থাকেন তাত্ত্বিকেরা। পরোক্ষে নিজের দল ভারী করার এই কৌশলকে তাঁরা চিহ্নিত করেন আইডিয়াল স্টেট অ্যাপারেটাস বলে। পাঠক্রমের এই বদলকে তেমনই এক পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও সিলেবাস মেদবর্জিত করতেই এহেন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি NCERT-এর। তবে এই পরিবর্তনগুলি শিক্ষায় গৈরিকীকরণের চেষ্টাকেই চিনিয়ে দিচ্ছে বলে অভিমত শিক্ষা মহলের একাংশের।