গবেষকেরা মনে করেন, সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই প্রাচীন সমাজে বিয়ের প্রথা শুরু হয়েছিল। কিন্তু আধুনিক পৃথিবীতে ফের ফিরে এসেছে তার আগের অভ্যাস। বিয়ে না করেও অনেকেই একে অপরের সঙ্গে গড়ে তুলছেন সংসার। এক্ষেত্রে সম্পত্তির বিভাজন হবে কীভাবে? সম্প্রতি সেই প্রশ্নেরই উত্তর দিল দেশের শীর্ষ আদালত। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বিয়ে না করে সহবাসে থাকলেও সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না সন্তান। এক মামলার প্রেক্ষিতে এমনটাই নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। স্বভাবতই লিভ-ইন দম্পতিদের স্বস্তির হদিশ মিলেছে এই রায়ে।
ঠিক কী জানিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত?
আরও শুনুন: চলতি বছরে দেশ ছাড়তে চাইছেন অন্তত ৮০০০ জন বিত্তশালী, জানাল সমীক্ষা
সম্প্রতি এক ব্যক্তির সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত মামলায় কেরল হাই কোর্টের রায়কে নাকচ করে নয়া রায় দানের পথে হেঁটেছে সুপ্রিম কোর্ট। ঘটনাচক্রে ওই ব্যক্তি এমন এক দম্পতির সন্তান, যাঁরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেননি। আর সেই কারণেই ওই ব্যক্তিকে অবৈধ বলে দাগিয়ে দিয়ে, তাঁকে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কেরল হাই কোর্টও সেই মর্মেই রায় দিয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে জাস্টিস এস আবদুল নাজির এবং বিক্রম নাথের বেঞ্চ সম্প্রতি জানায়, বিয়ে না করলেও দীর্ঘদিন একসঙ্গে বাস করেছেন ওই নারী ও পুরুষ। যা তাঁদের সম্পর্ককে বিবাহিত দম্পতির মতোই মর্যাদা দিয়েছে, এমনটাই মনে করেন বিচারপতিরা। এভিডেন্স অ্যাক্ট-এর ১১৪ ধারা অবলম্বনে এমনটাই সিদ্ধান্ত টানা যায় বলে মত তাঁদের।
আরও শুনুন: বিতর্কের আবহেই বাণিজ্য, কুয়েতে বিপুল পরিমাণ গোবর রপ্তানি ভারতের
আসলে আদিম মানুষ আত্মরক্ষার প্রয়োজনে দল বেঁধে থাকতে শুরু করলেও, মানবসমাজে বিয়ের ধারণা আসতে আরও অনেক সময় লেগেছে। বস্তুত গবেষকেরা মনে করেন, পিতৃত্ব নির্দিষ্ট করা, সম্পত্তির বিভাজন যাতে নিজের পরিবারেই সীমাবদ্ধ থাকে তা দেখা- এমন সব কারণেই মানুষ বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানটির কথা ভাবতে শুরু করেছিল। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতে অনেকেই মনে করছেন, সম্পত্তি বিভাজনের মতো ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়, বরং ভালবাসাই হতে পারে একসঙ্গে থাকার সবচেয়ে জোরালো কারণ। আবার কেউ হয়তো প্রতিষ্ঠানের কড়া বাঁধনে ধরা দেওয়ার আগে যাচাই করে নিতে চাইছেন একে অন্যকে। সব মিলিয়ে বাড়ছে লিভ-ইনের প্রবণতাও। কিন্তু সেক্ষেত্রে লিভ-ইন দম্পতির অর্জিত সম্পত্তি অথবা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিতে তাঁদের সন্তানের কতটুকু অধিকার থাকবে, আদৌ থাকবে কি না, এ নিয়ে সংশয় রয়ে গিয়েছে অনেকের মনেই। তাঁদের নতুন আলোর সন্ধান দিল দেশের শীর্ষ আদালতের এই রায়, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা চলে।