আমাদের শরীরে যে আস্ত একখানা কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি আছে, জানেন কি সে কথা? না না, ভয় পাবেন না। রাসায়নিকের কারখানা বটে, তবে তা শরীরের জন্য উপকারী। শরীরের যত দূষিত পদার্থ শরীরের বাইরে বের করে দিয়ে অন্দরমহলের রাসায়নিকের মাত্রা ঠিক রাখাই তার কাজ। আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিক এই কাজটাই করে আমাদের দেহের যকৃৎ, অর্থাৎ লিভার। কিন্তু আপনার পছন্দসই খাবার খাওয়ার জেরে সেই লিভারটিই অকেজো হয়ে পড়ছে না তো? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
খাবার না খাওয়ার জেরে যেমন শরীরে বাসা বাঁধে একাধিক রোগ, তেমনই কোনও কোনও খাবারও শরীরকে রীতিমতো ব্যতিব্যস্ত করে তুলতে পারে। কেবল শরীরে অবাঞ্ছিত পদার্থের ভিড় বাড়ানোই নয়, শরীর থেকে সেসব পদার্থের বাইরে যাওয়ার পথটিও বন্ধ করে দিতে পারে এইসব খাবার। অর্থাৎ, যকৃতের কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে, এমনকি একেবারে বন্ধও করে দিতে পারে। আসলে মুশকিল হল, অনেকটা দেরি হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত আমরা বুঝেই উঠতে পারি না যে শরীরের ভিতরে কী সমস্যা ঘটে চলেছে। আর ততদিনে ভিতরে ভিতরে জাঁকিয়ে বসে রোগ। তাই দেরি হওয়ার আগেই শুনে নিন, লিভার ভাল রাখার জন্য কোন কোন খাবারকে এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আরও শুনুন: রং দিয়েই যায় চেনা… ট্রেনের গায়ে নীল-হলুদ-সবুজ রঙের ডোরা আসলে কী বোঝায়?
যকৃৎকে রীতিমতো জখম করতে পারে যেসব খাবার, তার মধ্যে একাধিক খাবারের দেখা মেলে আমাদের রোজকার খাদ্যতালিকায়। যেমন ধরুন, চিনি। মাত্রাতিরিক্ত হারে চিনি খাওয়ার অভ্যাস লিভারের বড়সড় ক্ষতি করতে পারে। শুধু শুধু চিনি খাওয়া ছাড়াও, চিনি আছে এমন কোনও খাবার- যেমন মিষ্টি, ক্যান্ডি, কুকিজ, সোডা খেলেও হতে পারে ক্ষতি। এইসব খাবারের মধ্যে থাকে হাই ফ্রুকটোজ কর্ন সিরাপ, যা লিভারে ফ্যাট জমিয়ে দিতে পারে। তবে শুধু সোডা কিংবা সফট ড্রিংকসই নয়, বেশি মাত্রায় অ্যালকোহলও লিভারের চিরতরে ক্ষতিসাধন করতে পারে।
শুধু চিনিই নয়, ময়দাও আমাদের দৈনন্দিন রান্নার উপকরণের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু ময়দায় প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলের দেখা মেলে না। উলটে এই জিনিসটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার, যেমন- সাদা পাউরুটি, বিস্কুট, পাস্তা, পিজ্জা এড়িয়ে চলাই ভাল।
আরও শুনুন: ব্রণর সমস্যা পিছু ছাড়ছে না! জরায়ুতে সিস্টের লক্ষণও হতে পারে, সতর্ক থাকুন
অবশ্য পাস্তা, পিজ্জার মতো ফাস্ট ফুড এমনিতেও লিভারের জন্য খুব একটা উপকারী নয়। মুখরোচক বলে যে ফাস্ট ফুডগুলি প্রায়শই আমাদের খাবারের প্লেটে জায়গা করে নেয়, তা চপ কাটলেটই হোক কি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বার্গার- সেগুলি পরিপাক করতে আমাদের লিভারকে রীতিমতো কসরত করতে হয়। এইসব খাবারের দৌলতে যেমন ফ্যাটি লিভারের সম্ভাবনা বাড়ে, তেমনই স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং মন্দ কোলেস্টেরলের দৌলতে হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। একই কথা খাটে রেড মিটের ক্ষেত্রেও। কচি পাঁঠার ঝোল বাঙালি জিভে যতখানি ভাল লাগে, বাঙালি অবাঙালি নির্বিশেষে যে কারও যকৃতে ততখানিই সমস্যা তৈরি করতে পারে এই প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্যটি।
শরীরের এক অঙ্গ বিগড়োলে, অন্য সব কলকবজাতে সমস্যা দেখা দিতেও বেশিক্ষণ লাগে না। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে এইসব সমস্যাকে ডেকে আনি আমরাই। সময় থাকতে সাবধান হওয়াই ভাল, তাই নয় কি?