অতিমারি ও লকডাউন পরিস্থিতিতে কর্মীস্বার্থের কথা না ভেবেই ছাঁটাইয়ের পথে হেঁটেছিল ছোটবড় বহু সংস্থাই। সে নিয়ে সমালোচনাও কম হননি। বাড়ি থেকে কাজ, অনলাইনের হাজার রকম গেরোয় এমনিতেই বিপাকে পড়তে হয়েছে বহু কর্মীকে। তার উপরে ছাঁটাই যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া। করোনাকালীন সময়ে জুমকলে একসঙ্গে ৯০০ জন কর্মীকে ছেঁটে রীতিমতো শিরোনামে এসে গিয়েছিলেন ইন্দো-মার্কিন এক সংস্থার সিইও। ব্যাপারটি নিয়ে প্রচুর বিতর্কও হয়। এবার সেই অনৈতিক কাজেরই মাশুল গুণতে হচ্ছে সেই ব্যক্তিকে। সংস্থারই এক প্রাক্তন কর্মী তাঁর বিরুদ্ধে আনলেন গুরুতর অভিযোগ। কী অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কথা নেই, বার্তা নেই। একটি মাত্র জুম কলে একসঙ্গে ৯০০ কর্মীর হাতে বরখাস্তের চিঠি ধরিয়ে দিয়েছিলেন ইন্দো-মার্কিন এই সংস্থাটির সিইও। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ওই ব্যক্তির এই কাজের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন নানা ক্ষেত্রের মানুষ। উঠেছিল সমালোচনার ঝড়।
করোনাকালীন সময়ে এমনিতেই বড়সড় বদল এসেছে কাজের জগতে। অফিস উঠে এসেছে বাড়িতে। অনলাইনের হাজার রকম কারিকুরি, তার উপর ঘরের কাজ সামলে অফিস, সবটা সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে বহু কর্মীকেই। তেমনই পরিস্থিতিতে বেটার ডট কম সংস্থার কর্ণধার বিশাল গর্গ হঠাৎ করেই ৯০০ জন কর্মীকে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন। জুমকলেই ঘোষণা করে দেন সে কথা। স্বাভাবিক ভাবেই কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন সংস্থার কর্মীরা। ওই সময়ে আমেরিকা ও ভারত মিলিয়ে অন্তত ৩ হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করেছিল ওই সংস্থা। বেটার ডট কম আদতে একটি ডিজিটাল মর্টগেজ সংস্থা। যেখানে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিজেদের বাড়ি-ঘর বন্ধক রাখতে পারেন গ্রাহকেরা। সুদের হার কমে যাওয়ার ফলে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়েছে সংস্থাটি। সেই ক্ষতি সামলাতেই ছাঁটাইয়ের পথ বলে সেসময়ে সাফাই গাওয়া হয়েছিল সংস্থার তরফে। শুধু বেটার ডট কমই নয়, তাঁদের মতোই একই পথে হেঁটেছিল বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার সংস্থা।
আরও শুনুন: জীবনের সব পরীক্ষায় প্রথম! NEET পরীক্ষাতেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন দিল্লির তরুণী
তবে সেই কর্মীবিরোধী ও অমানবিক সিদ্ধান্তের মাশুল যে বিশালকে এ ভাবে গুনতে হবে, তা বোধহয় আশাও করেননি তিনি। এবার তাঁর সংস্থারই এক প্রাক্তন কর্মী বিশালের বিরুদ্ধে আনলেন গুরুতর অভিযোগ। নিজের সংস্থাকে নিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছে নাকি ডাঁহা মিথ্যে কথা বলেছেন বিশাল। তাঁদের দিকভ্রষ্ট করার চেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগ।
সারাহ পিয়ার্স নামে প্রাক্তন ওই কর্মী ইতিমধ্যেই বিশালের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করেছেন। আগে বেটার জট কমের সেলস বিভাগের এগজিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্টে হিসেবে কাজ করতেন সারাহ। করোনাকালীন সময়ে বিশালের হাত থেকে বরখাস্তের চিঠি পান সারাহও। বেটার ডট কম সংস্থার সেই কর্ণধার বিশালই বড়সড় প্রতারণা করেছেন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে। তাঁদেরকে সংস্থার ব্যাপারে কিছুই ঠিক করে জানাননি বিশাল। এমনকি সংস্থার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ওই অর্থবর্ষের মোট লভ্যাংশের ব্যাপারেও মিথ্যে কথা বলেছেন তিনি বিনিয়োগকারীদের।
আরও শুনুন: না ডাক্তার, না ছুরিকাঁচি! প্রশান্ত মহাসাগরের বুকেই সন্তানের জন্ম দিলেন মহিলা
অরোরা অ্যাকুইজিশন কর্প নামে একটি স্পেশাল পারপাস অ্যাকুইজিশন সংস্থার (SPAC) সঙ্গে সম্প্রতি প্রায় ৭৭০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি করে বেটার ডট কম। গত মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কের একটি মার্কিন জেলা আদালতে বিশাল গর্গের বিরুদ্ধে তথ্য বিকৃতি ও প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন সারাহ। বিশালের ওই কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তের জন্য বড়সড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণও দাবি করেছেন তিনি। যদিও সারাহ-র সমস্ত অভিযোগই অমূলক বলে মন্তব্য করেছেন বেটার ডট কমের আইনজীবী। অভিযুক্ত সংস্থার তরফে অবশ্য এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি কেউই। নিজের অমানবিক ও কর্মীবিরোধী সিদ্ধান্তের কোপ যে এভাবে নিজের উপরেই এসে পড়বে তা বোধহয় ঘুনাক্ষরেও আঁচ করতে পারেননি বিশাল গর্গ নামে ওই সিইও। একেই বোধহয় এক কথায় বলে কর্মফল, বলছে নেটদুনিয়ার একাংশ।