সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় শ্রুতি শর্মা প্রথম স্থান অধিকার করার সঙ্গে সঙ্গেই আলোচনায় উঠে এসেছে তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামও। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী শ্রুতি। একাধিক আন্দোলনের জেরে বারবার যে বিশ্ববিদ্যালয়টির দিকে তোপ দাগেন এখনকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব, পড়াশোনার ক্ষেত্রে বারবার কৃতিত্বের ছাপ রেখে গিয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানটি। আসুন, চোখ রাখা যাক সেই খতিয়ানে।
সোমবার প্রকাশ পেয়েছে ২০২১ সালের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার ফলাফল। প্রথম তিনে জায়গা করে নিয়েছেন তিন কন্যা। শীর্ষ স্থান অধিকার করেছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী শ্রুতি শর্মা। শ্রুতির সাফল্যের পর ফের আলোচনায় দিল্লির এই খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। প্রতিবাদ, আন্দোলনের জেরে ইদানীং বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় তথা জেএনইউ। ‘আন্দোলনের আঁতুড়ঘর’ বলে এর দিকে কটাক্ষও ছুঁড়ে দিয়েছেন অনেকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের দিকে তোপ দেগেছেন নেশাড়ু, দেশদ্রোহী, অশ্লীল ইত্যাদি নানারকম তকমা দিয়ে। কিন্তু যা-ই বলা হোক না কেন, পড়াশোনার ক্ষেত্রে যে এই প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের জয়যাত্রা অব্যাহত, ফের তা-ই যেন প্রমাণ করে দিল ইউপিএসসি পরীক্ষার এই ফলাফল।
আরও শুনুন: হজে যাওয়া নয়, ঘরহারা মানুষের আশ্রয়েই পুণ্য… সরকারকে জমি দান করে নজির দম্পতির
তবে এই প্রথমবার নয়। দেশে বিদেশে সাফল্যের নিরিখে বরাবরই কৃতিত্বের ছাপ রেখেছেন জেএনইউ-এর পড়ুয়ারা। বিশেষ করে দেশের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এর আগেও বারবার দেখা মিলেছে জেএনইউ-এর প্রাক্তনীদের। যাঁদের দিকে বারবার দেশদ্রোহের তির ছোঁড়ে গেরুয়া শিবির, দেশকে সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সেই পড়ুয়াদের একাংশের উপরে রীতিমতো ভরসা করতে হয় সরকারকে। এমনকি ব্যতিক্রম নয় বর্তমানের কেন্দ্র সরকারও। নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভার দুই গুরুত্বপূর্ণ পদ অধিকার করে রয়েছেন জেএনইউ-এর দুজন প্রাক্তনী। একজন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। আরেকজন বিদেশমন্ত্রী সুব্রাহ্মনিয়াম জয়শঙ্কর, যিনি এর আগে আমেরিকা, চিন, চেক প্রজাতন্ত্রে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের ভূমিকাও পালন করেছেন। ইন্দো-মার্কিন পারমাণবিক সমঝোতার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা ছিল তাঁরই। এমনকি তালিবান আফগানিস্তান দখল করার পর ভারতের পরিস্থিতি বুঝে নিতে তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে বসেছেন এই ধুরন্ধর কূটনীতিক। জেএনইউ থেকে এমফিল এবং পিএইচডি ডিগ্রি পাওয়া জয়শঙ্কর ছাড়াও, আন্তর্জাতিক মঞ্চে সন্ত্রাস ও হিংসা প্রসঙ্গে দৌত্যের জন্য সৈদ আসিফ ইব্রাহিমের উপরে ভরসা করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। আইবি-র প্রাক্তন ডিরেক্টর এবং বর্তমানে পশ্চিম এশিয়ার লিয়াজঁ অফিসার ইব্রাহিমও স্নাতকোত্তর করেছেন জেএনইউ থেকেই। এদিকে দেশের ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজর অরবিন্দ গুপ্তাও জেএনইউ থেকেই তাঁর ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তনী হারুন রশিদ খান বর্তমানে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ডেপুটি গভর্নর। আরেক প্রাক্তনী অমিতাভ কান্ত সরকারের নীতি আয়োগের বর্তমান সিইও।
আরও শুনুন: কোভিডে মৃত প্রিয়জনদের জন্য স্মৃতিসৌধ গড়েও পুড়িয়ে দিলেন নাগরিকেরা
কেবল রাজনীতিকেরাই নন, ম্যাগসেসে পুরস্কার প্রাপ্ত সাংবাদিক পি সাইনাথ, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তালাত আহমদ-ও জেএনইউ-এর প্রাক্তনী। ২০১৯ সালে নোবেল পুরস্কারজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়-ও স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েই। শুধু দেশেই নয়, বিশ্বের দরবারেও যে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা, সাম্প্রতিক কালে তা ফের প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনিই।