প্রথম সিজনে তাঁকে মাত্র এক ঝলক দেখা গিয়েছিল। তবে ওই এক ঝলকেই দর্শকদের মন জিতে নিয়েছিল পঞ্চায়েত প্রধানের মেয়ে রিঙ্কি। দ্বিতীয় সিজনে সেই জনপ্রিয়তাকে তুঙ্গে পৌঁছে দিতে চেষ্টার ত্রুটি করেননি অভিনেত্রী। পর্দার রিঙ্কি বাবা-মার বাধ্য হলেও বাস্তবের রিঙ্কি কিন্তু ততটাই জেদি। বাবা-মাকে মিথ্যে বলে একদিন মুম্বইতে চলে এসেছিলেন অডিশন দিতে। সেখান থেকে হাঁটা শুরু করে সেই রিঙ্কি ওরফে সানভিকা আজ জাতীয় ক্রাশ। ‘পঞ্চায়েত টু’-এর তুমুল সাফল্যের পরে লোকের মুখে মুখে ঘুরছে তাঁর কথা। কেমন ছিল তাঁর শুরুর গল্পটা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
জলের ট্যাঙ্কি, ভরদুপুরে গরম চা, ব্যাজার সচিবজির মুখে হঠাৎ হাসি! এ সব অঙ্ককে মেলাতে বসলে হাতে যা পড়ে থাকে তা হল প্রেমের একটা সন্দেহজনক গন্ধ। আর সেই গন্ধটা বেশ ভালই টের পেয়েছিল পঞ্চায়েত সহায়ক বিকাশ। সে কথা জানিয়েছিল পঞ্চায়েত উপপ্রধান প্রহ্লাদকেও।
এ সব প্রেমের কানাকানি যাঁকে নিয়ে তিনি আর কেউ নন, পঞ্চায়েত প্রধানের মেয়ে রিঙ্কি। প্রথম পর্বে যার গলা একাধিক বার শুনেছে দর্শক। তাঁর বিয়ে নিয়ে নানা কথাবার্তা শুনতে শুনতে একাধিক স্বপ্নও ততদিনে দেখে ফেলেছিলেন তাঁরা। ‘পঞ্চায়েত’ ওয়েব সিরিজের প্রথম সিজনের শেষে রিঙ্কিকে একঝলক দেখে সেই জল্পনাই উস্কে উঠেছিল নতুন করে। তবে কি দ্বিতীয় সিজন সেজে উঠবে রিঙ্কি আর পঞ্চায়েত সচিবের প্রেমের রঙে।
প্রত্যাশা মতোই সেই প্রেমের কানাকানি দিয়েই শুরু হয়েছিল পঞ্চায়েতের দ্বিতীয় মরসুম। তবে ডিরেক্টর সাহেব অবশ্য সরাসরি সেই পথে হাঁটার বান্দাই নন। তিনি ধরলেন গল্পের অন্য রাস্তা। সেই রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে অন্য রিঙ্কিকে চিনল দর্শক। আর রিঙ্কির ভূমিকায় মন কেড়ে নিলেন অভিনেত্রী সানভিকা।
আরও শুনুন: একজন করেছেন তুলো বিক্রি, অন্যজন আচমকাই অভিনয়ে… এই দুজনের জাদুতে এখন বুঁদ দর্শক
উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলার ছোট্ট গ্রাম ফুলেরা। সেই ফুলেরার পঞ্চায়েত প্রধানের মেয়ে রিঙ্কি। জব্বলপুরের মেয়ে সানভিকা ওরফে পূজা সিংয়ের জন্য কতটা কঠিন ছিল চরিত্রখানা?
ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পরে বেঙ্গালুরু যাওয়ার নাম করে মুম্বই চলে এসেছিলেন সানভিকা। হ্যাঁ, বাবা-মাকে মিথ্যে কথাই বলেছিলেন সেদিন তিনি। কারণ কর্পোরেটের দশটা-পাঁচটার চাকরি করতে কোনওদিনই চাননি তিনি। মুম্বইয়ে এসে শুরু হল লড়াই। না, অভিনেত্রী হিসেবে নয়, প্রথম এই দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন অ্যাসিস্টেন্ট কস্টিউম ডিরেক্টর হিসেবে। সেখান থেকে হঠাৎই অভিনয়ে আসা হঠাৎই। চেষ্টা করতে করতে একদিন অডিশনে পাশ করে গেলেন সানভিকা। বিজ্ঞাপনের একটি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ এল তাঁর হাতে।
না, এই জগতেও যে কেরিয়ার গড়তে পারে মেয়ে, এমনটা ভাবতেই পারেননি সানভিকার মা-বাবা। তাই চাকরিবাকরির জন্য চাপ দিতে থাকলেন তাঁরা। এরই মধ্যে টিভিএফের তরফে একদিন অডিশনে ডাকা হল তাঁকে, ছোট্ট একটি চরিত্রের জন্য। সেটা যে ‘পঞ্চায়েত’ সিরিজ তখনও জানতেনই না সানভিকা। তাঁকে বলা হল, প্রথম সিজনে তাঁর ছোট্ট একটি ঝলক দেখা গেলেও পরবর্তী সিজনগুলিতে অনেক বেশি অভিনয়ের সুযোগ পাবেন সানভিকা।
আরও শুনুন: হাসির পাত্র নন, দ্বিতীয় পর্বে বেশ ছকভাঙা ‘পঞ্চায়েত’-এর প্রধানজি, খেয়াল করেছেন?
মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে তাঁর বেড়ে ওঠা আসলে তাঁকে সাহায্যই করেছে রিঙ্কি হয়ে উঠতে। খুব সহজেই চরিত্রটিকে বুঝতে পেরেছে সে। আর সেই চরিত্রের দৌলতেই আজ জাতীয় ক্রাশ সানভিকা। রঘুবীর যাদব ও নীনা গুপ্তের মতো জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতাদের সঙ্গে রীতিমতো টক্কর দিয়েছে সে এই গল্পে।
তাঁর এই সাফল্যে খুশি বাবা-মা, জানালেন সানভিকা। বললেন, অবশেষে হোয়াটসঅ্যাপে, মেসেজে কর্মখালির খবর পাঠানো বন্ধ করেছেন তাঁরা। শেষমেশ তাঁরাও বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছেন, অভিনয়কে মূল পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া যায়। আর সেই রাস্তায় সাফল্যও আসতে পারে। সব মিলিয়ে খুশির হাওয়া সানভিকার পরিবারে। আচ্ছা, ব্রিজভূষণ আর মঞ্জুদেবীর মতোই তাঁরাও কি বাস্তবের রিঙ্কির জন্য পাত্র খুঁজতে ব্যস্ত? একরাশ হেসে সানভিকা জানালেন, নিশ্চয়ই অনেক সম্মন্ধই আসছে। তবে সেসব বাবা-মা খারিজ করে দিচ্ছেন বলেই তাঁর বিশ্বাস। ‘পঞ্চায়েত টু’-এর সাফল্যের পরেই হুড়মুড়িয়ে বেড়েছে তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা। ইতিমধ্যেই হাতে এসেছে আরও কাজের সুযোগও। এসময় বিয়ের কথা টথা মোটেই ভাবতে চাইছেন না সানভিকা। আপাতত অভিনয়টাই মন দিয়ে করতে চান পর্দার রিঙ্কি।