কিংবদন্তি বলে, আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়ে আবার তা থেকেই ফের জন্ম নেয় ফিনিক্স পাখি। মৃত্যুর মধ্যেই যে লুকিয়ে থাকে জীবনের অনন্ত সম্ভাবনা, সে কথারই ইঙ্গিত দেয় এই মিথ। আর এই মিথের অনুষঙ্গ টেনেই যেন এবার কোভিডে মৃত প্রিয়জনদের স্মরণ করলেন কিছু মানুষ। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
‘যে যায়, তাকে যেতে দেওয়াই সবচে ভাল’- এ কথা কবি বলতে পারেন। কিন্তু যে মানুষ তার প্রিয়জনকে হারায়, তার পক্ষে কি সেই শোকের মুহূর্ত সহজে পেরিয়ে ওঠা সম্ভব? প্রিয়জনের স্মৃতি আঁকড়ে ধরেই তাই দিন গুজরান করে চলে সে। কোভিডকালে এমনই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য মানুষ। আর তাঁদের কথা ভেবেই এবার নেওয়া হল অদ্ভুত এক উদ্যোগ। গড়ে তোলা হল কোভিড মেমোরিয়াল, আবার চোখের সামনেই পুড়িয়ে নষ্টও করে দেওয়া হল সেই স্মৃতিসৌধ।
আরও শুনুন:
কিন্তু কেন এহেন কাজ করা হল? আর কোথায়ই বা গড়ে তোলা হয়েছিল সেই স্মারক? তাহলে খুলেই বলা যাক।
চলতি মাসেই ইংল্যান্ডের ওয়ারউইকশায়ার অঞ্চলে গড়ে তোলা হয়েছিল কাঠ দিয়ে বানানো এই কোভিড মেমোরিয়াল। স্যাংচুয়ারি নামের এই সৌধটির নকশা করেন প্রখ্যাত শিল্পী ডেভিড বেস্ট। এক সপ্তাহ পরে, ২৮ মে তা পুড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হল ফের। ৬৫ ফুট উঁচু এই সৌধটি সাজিয়ে তোলা হয়েছিল কোভিডে মৃত মানুষদের উদ্দেশে বিভিন্ন স্মারক দিয়ে। সৌধের দেওয়ালে দেওয়ালে মৃত প্রিয়জনদের প্রিয় কোনও জিনিস, অথবা তাঁদের উদ্দেশে লেখা কোনও বার্তা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন এলাকার মানুষেরা। এভাবেই কোভিডে মৃত প্রিয়জনদের স্মরণ করেছিলেন তাঁরা।
আরও শুনুন: ফের মসিহা সোনু! বিহারেরই আরেকটি শিশুকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে উদ্যোগ অভিনেতার
আসলে কোভিডকালে কেবল রোগের সংক্রমণ নয়, ব্যক্তিগত শোকের জীবাণুও তাড়া করে বেরিয়েছে বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য মানুষকে। মারণ রোগে প্রিয় মানুষ বা মানুষদের হারিয়েছেন তাঁরা। এমনকি সেইসব মানুষদের একবার শেষ দেখার সুযোগও মেলেনি অনেকের। মৃত প্রিয়জনের অন্তিম সৎকারের সময়ও উপস্থিত থাকতে পারেননি তাঁরা। চোখের সামনে প্রিয়জনের দেহের ক্ষয় না দেখার ফলেই হয়তো, মনের মাঝে আরও জাঁকিয়ে বসেছে তাঁদের স্মৃতি। সেইজন্যেই এমন একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ওই এলাকার নাগরিকদের তরফে। এই স্মৃতিসৌধটির পুড়ে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে যেন তাঁদের ব্যক্তিগত শোক দহন করেছেন তাঁরা। পাশাপাশি যেমন আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর সেই ছাই থেকেই ফের জন্ম নেয় ফিনিক্স পাখি, তেমনই পুনর্জন্মেরও প্রতীক হিসেবে এই দহনকে দেখছেন ওই মানুষেরা।