ক্লাচ ছিল না তাঁর কাছে। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর সাহসে ভর করেই রোজ স্কুলে যেত বিহারের ছোট্ট মেয়েটি। তাঁর এক পায়ে কষ্ট করে স্কুলে পৌঁছনোর ভিডিওই ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অনেকেই। যার মধ্যে ছিলেন বলিউড তারকা সোনু সুদও। ছোট্ট মেয়েটিকে ডেকে নিয়েছিলেন নিজের কাছে। তাঁরই সৌজন্যে কৃত্রিম পা পেল সেই খুদে। আর এক পায়ে নয়, এবার থেকে দু-পায়েই সে রওনা হবে তাঁর স্বপ্নের পথে।
তাঁর ইচ্ছাশক্তির কাছে আগেই হার মেনেছিল প্রতিবন্ধকতা। পড়াশোনা শিখে বড় হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি তাঁর এক পা না-থাকা। বরং সেই অসুবিধাকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েই বাড়ি থেকে স্কুলের রাস্তাটুকু পেরোত বছর দশেকের খুদে। না ছিল তাঁর কাছে ক্রাচ, না অন্য কিছু। এক কিলোমিটার রাস্তাটুকু সে যেত এক পায়ে লাফাতে লাফাতেই। তার অদম্য জেদের ছবি সম্প্রতি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা দেখে মুখ থেকে কথা সরেনি অনেকেরই।
আরও শুনুন: বোনকে কোলে নিয়েই স্কুলে, খুদের পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে শিক্ষার ভার নিলেন মন্ত্রী
না, এই দেশে সাহায্যের অভাব হয়নি কোনওদিনই। বিহারের ফতেপুরের এলাকার ছোট্ট সীমার এই লড়াইয়ের গল্প ভাইরাল হতে না হতেই তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় অনেকেই। জামুইয়ের জেলাশাসক অনিশ কুমার ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্তা মিলে তাঁর জন্য ব্যবস্থা করে দেন একটি ট্রাইসাইকেলের। এরই মধ্যে ওই ভিডিওটি চোখে পড়েছিল সোনু সুদের। কোভিডের সময় থেকেই অসংখ্য মানুষের অসুবিধায় পাশে দাঁড়িয়েছেন বলিউড এই অভিনেতা। বিহারের ওই দশ বছরের খুদেটিকে সঙ্গে সঙ্গে নিজের কাছে ডেকে নেন সোনু। পাঠান টিকিটও। জানান, এক পায়ে কষ্ট করে চলার দিন তাঁর শেষ। এবার দু-পায়েই লাফিয়ে ঝাঁপিয়েই আর পাঁচ জনের মতোই স্কুলে যাবে সে-ও।
আরও শুনুন: এক পায়েই যেত স্কুলে, কিশোরীর লড়াই দেখে আপ্লুত সোনু, আশ্বাস পাশে দাঁড়ানোর
নিজের কথা রেখেছেন সনু। অবশেষে নিজের দু-পায়ে দাঁড়িয়েছে সেই কন্যা। কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে আপাতত দৌড়তে প্রস্তুত সীমা। সৌজন্য সোনু। তাঁর দু-পায়ে দাঁড়ানোর সেই ছবিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর সেই ছবি টুইটারে প্রকাশ করেছেন আইপিএস অফিসার স্বাতী লকরা। জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার এক অভূতপূর্ব পজিটিভ শক্তি রয়েছে, যা পা-হীন মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে পারে স্বাভাবিক জীবনে। আর তার জন্য কুর্নিশ জানাতেও ভোলেননি স্বাতী।
আরও শুনুন: দেশের অধিকাংশ পড়ুয়াকেই এখনও স্কুলে যেতে হয় পায়ে হেঁটে, জানাল সরকারি সমীক্ষা
পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় ছোট্ট সীমা। বরাবরই শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। দু-বছর আগে ট্রাক্টরের চাকার তলায় পিষে গিয়েছিল তাঁর একটি পা। বাবা-মা দুটো টাকার জন্য কাজ করেন ভিনরাজ্যে। কোনও মতে টেনেটুনে সংসার চলে তাঁদের। তার মধ্যে সীমার জন্য় বিকল্প পা বা ক্লাচের মতো অন্য কোনও সাহায্যের ব্যবস্থা করার সামর্থ ছিল না পরিবারের। তবে পা হারিয়ে প্রতিবন্ধীর জীবন কাটাতে রাজি ছিল না সীমা। তাই এক পা সম্বল করেই লাফাতে লাফাতে স্কুলের পথে রওনা হত মেয়েটি। কোনও সীমাই যে সীমাকে বেঁধে রাখার পক্ষে যথেষ্ট নয়, সে কথাটাই প্রমাণ করে দিয়েছিল ছোট্ট মেয়েটি। তবে তার সেই কষ্টের দিন বোধহয় শেষ হল। এবার কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে সে-ও ছুটে বেড়াতে পারবে তাঁর স্বপ্নের আকাশে।