সিনেমার পর্দায় নানা রোম্যান্টিক কাহিনির আনাগোনা। সেখানে নায়িকার জন্য কী-না-কী করে থাকেন নায়করা। ঐতিহাসিক প্রেমের গল্পের দিকে তাকান। সেখানে রাজ্যজয় থেকে স্মৃতিসৌধ গড়ার মতো বড়সড় ব্যাপার। আর সেইসব অতি উজ্জ্বল ঝাড়বাতির পাশেই যেন জোনাকির মতো জ্বলে ওঠে সাধারণ প্রেমের গল্পগুলি। যেখানে এক ভিক্ষুকও টাকা জমিয়ে স্ত্রী জন্য কেনেন উপহার। আসুন আজ সেই ছাপোষা প্রেমের গল্পখানাই শুনে নিই।
পা দুটো একেবারেই নড়ে-চড়ে না সন্তোষ সাহুর। এমন এক প্রতিবন্ধকতায় তিনি আক্রান্ত, যার জেরে হাঁটাচলারই উপায় নেই তাঁর। পরিশ্রম করে উপার্জনের পথও বন্ধ। প্রায় বাধ্য হয়েই ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিতে হয়েছিল সন্তোষকে। সঙ্গী, তাঁর স্ত্রী মুন্নি সাহু। ভিক্ষাবৃত্তি হলেও, জীবনধারণের জন্য হাড়ভাঙা খাটনিই তাঁদের খাটতে হয়। একটা তিন চাকার গাড়িতে বসে থাকেন সন্তোষ। আর পিছন থেকে ঠেলে ঠেলে সেই গাড়িটিকে এগিয়ে নিয়ে যান মুন্নি। যথেষ্ট পরিশ্রমসাধ্য এই কাজ। সন্তোষ খেয়াল করে দেখেছিলেন, সারাদিন গাড়ি ঠেলার দরুন ভীষণ পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন মুন্নি। রাস্তাঘাটের অবস্থাও সব জায়গায় ভাল নয়। গাড়ি ঠেলতে বেশ বেগ পেতে হয় মুন্নিকে। আর ঝড়বৃষ্টি হলে তো দুর্ভোগের শেষ নেই।
আরও শুনুন: কুতুব মিনার কি আদৌ দিল্লিতে ছিল! বিষ্ণুর সঙ্গেই বা কী যোগ এই স্তম্ভের?
তাঁর জন্য মুন্নির এই অকথ্য পরিশ্রম এবং কষ্ট সহ্য করা যেন কাঁটা হয়ে বিঁধছিল সন্তোষের অন্তরে। মুন্নির এই ক্লান্তি দেখতে দেখতে তাঁর একটা ভাবনা আসে। ঠিক করেন, একটা যদি ছোট মোটর সাইকেল কেনা যায়, তাহলে মুন্নির এই কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে। স্ত্রীকে এই উপহার দেবেন বলেই মনস্থ করেন সন্তোষ। তবে, বললেই তো আর করা যায় না। সারাদিনে মেরেকেটে উপার্জন বলতে ৩০০ টাকা, বড়জোর ৪০০। রেলস্টেশন, বাজার, মন্দির, মসজিদের সামনে ভিক্ষা করে এর বেশি মেলে না দম্পতির। মন্দির-মসজিদ থেকে অবশ্য কোনও কোনও দিন খাওয়া-দাওয়া মিলে যায়। অর্থাৎ সাধ থাকলেও সাধ্য ছিল না। তবু দমে যাননি সন্তোষ। খরচখরচা বাঁচিয়ে একটু একটু করে অর্থ জমাতে শুরু করেন। লক্ষ্য একটাই, স্ত্রীকে একটা ছোট মোটরসাইকেল বা মপেড কিনে দেবেন।
আরও শুনুন: শাহজাহান একা নন, ‘তাজমহল’ বানিয়েছিলেন আরও অনেকেই! কোথায় কোথায় রয়েছে সেগুলি?
অবশেষে সে স্বপ্ন সফল হয়েছে। চার বছরের তিলে তিলে সঞ্চয়ে জমেছিল ৯০ হাজার টাকা। তা দিয়ে নগদেই মপেড কিনেছেন সন্তোষ। উপহার দিয়েছেন স্ত্রী সন্তোষকে। মধ্যপ্রদেশের ছাপোষা গ্রামের এই দম্পতির প্রেমকাহিনি মুগ্ধ করেছে নেটিজেনদের। প্রেমের বড় বড় কাহিনি তো অনেকেই শোনা যায়। তবে এই যে ভিক্ষার উপার্জনেও স্ত্রীকে উপহার, তাঁর কষ্ট লাঘবের চেষ্টা, তার মাধুর্যই বা কম কীসে!