বারাণসীর সিভিল আদালতে আপাতত জ্ঞানবাপী শুনানি নয়। বৃহস্পতিবার এমন নির্দেশই দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এরই মধ্যে নিম্ন আদালতে জমা পড়ে গিয়েছে সমীক্ষার চূড়ান্ত রিপোর্ট। শিবলিঙ্গ ছাড়াও মন্দিরের ভিতরে রয়েছে আরও নানা হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি, এবার এমনটাই দাবি করে বসলেন পর্যবেক্ষক দল থেকে অপসারিত অ্যাডভোকেট কমিশনার অজয় কুমার মিশ্র। আর কী কী বললেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
জ্ঞানবাপী মসজিদ মামলার জল গড়িয়েছে অনেক দূর। মসজিদের ওজুখানায় শিবলিঙ্গ মিলেছে বলে দাবি করা হয়েছিল সমীক্ষায়। যদিও সেটিকে ফোয়ারার অংশ বলে দাবি করেছে মসজিদ পক্ষের উকিল। এ নিয়ে বিতর্ক গোটা দেশ জুড়ে। যদিও ইতিমধ্যেই বারাণসীর আদালতে জ্ঞানবাপী মসজিদের শুনানির উপরে স্থগিতাদেশ জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত বারাণসী দায়রা আদালতে কোনও প্রক্রিয়া করা যাবে না বলেই জানিয়ে দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।
দিন কয়েক ধরেই জ্ঞানবাপী বিতর্কে উত্তাল দেশ। কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একটি অংশ ভেঙে সেখানে ওই মসজিদ তৈরি করিয়েছিলেন মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব। আজ যেখানে মসজিদ, সেখানে নাকি এককালে ছিল শৃঙ্গার গৌরীর মন্দির। তেমনই অভিযোগ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পাঁচ মামলাকারী।
সেই মামলায় মসজিদের ভিতরে সমীক্ষা ও ভিডিওগ্রাফির নির্দেশ দেয় বারাণসীর দায়রা আদালত। দিন কয়েক আগেই সমীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্ট জমা করেন আইনজীবীদের দল। এরই মধ্যে সমীক্ষা ও ভিডিওগ্রাফির দায়িত্বে থাকা পর্যবেক্ষক দলের অ্যাডভোকেট কমিশনার অজয় কুমার মিশ্রকে সরিয়ে দেয় আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা করার আগে সমীক্ষার রিপোর্ট ফাঁস করার জন্যই এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও শুনুন: ‘সহিষ্ণুতা আসলে অভিশাপ’, বিশ্বাস ছিল আইনজীবীর, এখন লড়ছেন জ্ঞানবাপী মামলায়
তবে পর্যবেক্ষক দল থেকে অপসারিত হলেও জমি ছাড়তে নারাজ অজয় মিশ্র। ফের একগুচ্ছ দাবি নিয়ে মুখ খুলেছেন অজয়। তাঁর দাবি, শুধু শিবলিঙ্গই নয়, মসজিদের ভিতরে মিলেছে আরও অনেক দেবদেবীর মূর্তি। মিলেছে শেষনাগের একটি পাথরের মূর্তিও। এখানেই শেষ নয়, রয়েছে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, প্রদীপ জ্বালানোর জায়গাও। সমস্ত মূর্তিগুলিতে সিঁদুর লেপার চিহ্ন রয়েছে বলেও জানান অজয়। মিলেছে একটি পাথরের বড় চাঙড়, যেটি কোনও বড় স্থাপত্যের অংশ বলেই জানিয়েছেন তিনি।
দেশের বিভিন্ন মসজিদগুলিতে হিন্দুত্বের চিহ্ন খুঁজতে উঠেপড়ে লেগেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। সেই তালিকায় রয়েছে উত্তরপ্রদেশের ইদগাহ মসজিদও। এমনকি তাজমহলের তালা বন্ধ ঘরেও হিন্দু দেবদেবী থাকতে পারে বলে দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে একটি পক্ষ। যদিও সেই আবেদন পত্রপাঠ খারিজ করে দেয় আদালত। জ্ঞানবাপী মসজিদে নিরাপত্তা বাড়ানো হলেও সেখানে নমাজ পাঠে আপত্তি জানায়নি আদালত। তবে একসঙ্গে ২০ জনের বেশি জমায়েত করা যাবে না বলেই জানিয়ে দিয়েছে আদালত। আর তাতেই ক্ষুব্ধ এআইএমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসিও। আদালতের এই নির্দেশ অন্যায্য বলে দাবি করেন তিনি। কেন্দ্রীয় সরকার দেশটাকে পিছনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। মসজিদের ভিতরে সমীক্ষা নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি ছিল তাঁর। যদিও আদালতের নির্দেশের মুখে তাঁর সেই আপত্তি ধোপে টেকেনি।
আরও শুনুন: জ্ঞানবাপীর আঁচ কর্ণাটকেও, মসজিদের ভিতরে হনুমান উপাসনার আরজি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের
ওয়াইসির বক্তব্যের সমালোচনা করে বৃহস্পতিবার তাঁকে এক হাত নিয়েছেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। টুইটারে তাঁর বক্তব্য, হায়েদ্রাবাদে যখন সচিবালয় বানানোর জন্য দুটি মসজিদ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল, তখন কোথায় ছিলেন ওয়াইসিরা। তাঁকে ধর্মান্ধ ও ভণ্ড বলেও কটাক্ষ করেন মালব্য। প্রসঙ্গক্রমে ওয়াইসি হায়দ্রাবাদের একজন এমপিও বটে।
এরই মধ্যে অবশ্য বারাণসী আদালতে জমা পড়ে গিয়েছে জ্ঞানবাপী মসজিদের অন্দরে সমীক্ষা এবং ভিডিয়োগ্রাফি সংক্রান্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট। বৃহস্পতিবার দায়রা বিচারক রবিকুমার দিবাকরের কাছে একটি মুখ বন্ধ খামে ওই রিপোর্ট জমা করে পর্যবেক্ষক দল। সুপ্রিম কোর্ট শুনানির উপরে আপাত স্থগিতাদেশ জারি করলেও সত্য সামনে আসা দরকার। এমনটাই মনে করছে আরএসএস। এদিন আরএসএসের জনসংযোগ আধিকারিক সুনীল আম্বেকর জানান, সত্যিটাকে বেশি দিন চাপা দেওয়া যায় না। সমাজের সামনে সেই সত্য প্রকাশিত হওয়া উচিত বলেই মত তাঁর। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট কি মতামত দেয়, আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ।