নদীর উপরে ছোট্ট একটা ওভারব্রিজ। আর সেই ব্রিজে দাঁড়িয়েই প্রথম চুম্বন। শুধু তাই নয়। নিজেদের সম্পর্কের ডোরটিকে রীতিমতো তালা বন্ধ করে এক একটি গাছেদের কাছে রেখে আসেন প্রেমিক-প্রেমিকারা। তার পর সেই চাবিটি ছুঁড়ে ফেলে দেন নদীর জলে। সেই চাবি ভাসতে ভাসতে কতদূর! কিংবা নদীর অতলেই তল খুঁজে পায় সেই চাবিখানা। আর এসবে নাকি আরও মজবুত হয় সেই প্রেম। কোথায় রয়েছে আশ্চর্য এই পার্ক, যা বহু যুগের বহু যুগলের প্রেমের সাক্ষী। আসুন, শুনে নিই।
লাভার্স লেন বা প্রেমের অলিগলির কথা তো শুনেছেন। এ দেশে আস্ত একটা সেতু উৎসর্গ করা হয়েছে প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্যই। সেই সেতুর নীচ দিয়ে তিরতির করে বয়ে যায় নদী। আর সেতুর ওপরে রয়েছে এক আশ্চর্য পার্ক। যার নাম নাকি প্যাডলক ট্রি পার্ক।
কেন এমন নাম? প্যাডলক মানে তো তালা! সেই তালার আবার গাছ আর সেই গাছের আবার পার্ক। তেমনও হয় নাকি!
আরও শুনুন: সস্তায় দাঁতের ডাক্তার দেখাতে ৬ হাজার মাইল পাড়ি! হিসেবি দম্পতির কীর্তিতে অবাক নেটিজেনরা
তবে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় সত্যিই রয়েছে এমনই আশ্চর্য পার্ক। বহু বিয়ের রীতিতেই বরবধূর চুম্বন বাধ্যতামূলক। তা সেই চুম্বন বিয়ের আসরে খাওয়ার চল নেই এখানে। তার জন্য রয়েছে মস্কোর এই বিখ্যাত ব্রিজ লুজকভ। যাকে ব্রিজ অব কিসও বলে থাকেন অনেকে। পাশেই ক্রিস্ট দ্যা স্যাভিয়ার ক্যাথিড্রাল। সেখানে বিয়ের অনুষ্ঠান সেরেই এক ছুট্টে এই ব্রিজে চলে আসেন সদ্যবিবাহিতরা। বিবাহের পরে প্রথম চুম্বনটি খাওয়ার পরে তারা তাঁদের সম্পর্কের তালাটি বেঁধে ফেলেন গাছের ডালে। এই ব্রিজ যে কত মানুষের ভালবাসার সাক্ষী, তার আর ইয়ত্তা নেই। সাক্ষী সেইসব প্যাডলক গাছেরাও। না, সত্যিকারের গাছ নয়। সেখানে বেশ কয়েকটি ধাতব গাছ।
নিজেদের ভালবাসাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতেই নাকি সেসব গাছেই নিজেদের নাম লেখা তালা ঝুলিয়ে দেন যুগলেরা। এর ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে প্রাচীন লোককথায়। সেখান থেকেই এই রীতি আয়ত্ত করেছে রুশরা। আর রুশদের নিজস্ব রুপকথা ও লোককথা নিয়ে ভালোবাসার কথা তো সর্বজন বিদিত। সেই থেকেই চলে আসছে গাছে তালা ঝোলানোর সেই আশ্চর্য রীতি। না, শুধু তালা ঝোলালেই হবে না। নিজেদের নাম লেখা তালা গাছে আটকে দেওয়ার পরে তার চাবিটি ছুড়ে ফেলে দিতে হবে মস্কোভা নদীর জলে। সেই নদীই যত্ন করে বুকে লুকিয়ে রাখবে ভালবাসার চাবিটিকে।
তবে আগে নাকি ওই সেতুর শরীরেই তালা ঝোলাতেন প্রেমিকপ্রেমিকারা। তবে তাতে নাকি সেতুর শরীরের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ায় কড়া ব্যবস্থা নেন স্থানীয় প্রশাসন। লাগিয়ে দেওয়া হয় ওই ধাতব গাছ।
আরও শুনুন: মা কুকুরের স্নেহ-আদরেই দিব্যি বড় হচ্ছে তিনটি বাঘের বাচ্চা, দেখে মুগ্ধ নেটদুনিয়া
তবে ওই সেতুকে ঘিরে কিন্তু দীর্ঘদিনের বিশ্বাস স্থানীয় মানুষের। একবার তালা ঝুলিয়ে সেই চাবি নদীর জলে ফেলতে পারলেই সেই সম্পর্ক অটুট বলেই মনে করেন সেখানকার মানুষ। এবার সম্পর্ক সেই সম্পর্ক ভাঙতে গেলে নদী থেকে চাবি খুঁজে এনে খুলতে হবে তালাটি। আর নদীর তলায় শুয়ে থাকা কয়েক লক্ষ কোটি চাবির মধ্যে নিজের চাবিটি খুঁজে পাওয়া যে সহজ কথা নয়, তা তো বলাই বাহুল্য।
শুধু প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্যই নয়, পর্যটকদের কাছেও বেশ পছন্দের জায়গা এই প্যাডলক ট্রি পার্ক। তার একটা কারণ অবশ্যই এর সৌন্দর্য, তার পাশাপাশি যদি নিজেদের প্রেমকে মজবুত করতে একটা প্রেমের তালা বেঁধে আসাই যায়, সেটাও বোধহয় মন্দ হয় না। আর সেই অটুট প্রেমের প্রার্থনাতেই এই পার্কে ভিড় জমান অসংখ্য মানুষ।