রাজনীতি রাজার নীতি। দাবার চালের মতোই রীতিমতো বিচার-বিবেচনা করে সেখানে চাল দেওয়ার প্রয়োজন। দানে একটু ভুল হলেই ভরাডুবি। আজকাল সেই রাজনীতির ক্ষেত্রে শিক্ষিত, পড়াশোনা করা মানুষজনের অভাব রয়েছে বলে প্রায়শই অভিযোগ শোনা যায়। এদিকে, একটা গোটা দেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যতই দাঁড়িয়ে থাকে রাজনীতির উপরে। সেখানে ইদানীং শিক্ষিত লোকের বেশ অভাব। কার্যত সেই সুরেই এবার গলা মেলালেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। কী বললেন তিনি? আসুন, শুনে নিন।
এক সময় রাজনীতি করার প্রথম শর্তই ছিল বিপুল পড়াশোনা। রাষ্ট্র ও সমাজবিজ্ঞানের যথেষ্ট ধারণা এবং শিক্ষা না থাকলে যে কোনও ভাবেই রাজনীতির গুটি সামলানো সম্ভব নয়, এমন একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিল সমাজে। তবে সেই সময় পাল্টেছে। রাজনীতির ময়দানেও ঢুকে পড়েছে বেনো-জল। বর্তমান রাজনীতিতে শিক্ষিত বা উচ্চশিক্ষিত লোক তো ছাড়, মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকের চৌহদ্দি না পেরনো নেতা বা নেত্রীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। মাঝেমধ্যেই সেসব নিয়ে জোর চর্চা চলে আবার ধামাচাপাও পড়ে যায় সেসব।
আরও শুনুন: ‘হিন্দুরাষ্ট্র করে দিলেই সব সমস্যার সমাধান!’ কেন্দ্রকে একহাত নিলেন যশবন্ত সিনহা
তবে সামগ্রীক ভাবে রাজনীতির ময়দানে আজকাল শিক্ষিত লোকের অভাব যে বেশ বেশি, তা স্বীকার না করলেই নয়। আর এ কথা কার্যত মেনে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলও।
সম্প্রতি নয়াদিল্লির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে হাজির হন মন্ত্রী। আর সেই অনুষ্ঠানেই তাঁর বক্তৃতায় শোনা গেল আক্ষেপের সুর। রাজনীতির ময়দানে আজকাল তেমন ব্যতিক্রমী ভাবনাচিন্তা করার মতো যোগ্য ব্যক্তির অভাব রয়েছে বলেই মত তাঁর। দেশকে সঠিক পথে চালনা করা, বিশ্বের মঞ্চে দেশকে তুলে ধরার মতো কাজকে সফল ভাবে করতে যথেষ্ট শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান গয়াল।
আরও শুনুন: দেশে বন্ধ হতে চলেছে প্লাস্টিকের ব্যবহার, কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি কেন্দ্রের
পড়ুয়াদের উদ্দেশে রাখা বক্তব্যে পীযূষ গোয়েল জানান, সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে এবং দেশ গড়ার জন্য রাজনীতিতে নতুন ভাবনা-চিন্তার প্রয়োজন। চেনা রাস্তার বাইরে হেঁটে দেখা দরকার। ছাত্রছাত্রীদের কাছে তাঁর আরজি, শুধুমাত্র ভাল, সুরক্ষিত সরকারি চাকরির পিছনে না ছুটে, তেমনই ছকভাঙা পথে হাঁটুক নতুন প্রজন্ম। মন্ত্রীর মত, এটাই যথাযথ সময় পরীক্ষানিরিক্ষার। নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে নতুন ধরনের কিছু উদ্যোগ নিতে শিখুক পড়ুয়ারা। তবেই দেশে উন্নতি আসবে।
পাশাপাশি ব্যর্থতাকে ভয় না পাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন গোয়েল। আজকের দুনিয়ায় বহু ক্ষেত্রেই বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু সেই পথটুকু খুঁজে নেওয়ার দরকার বলেই মনে করেন মন্ত্রী।
আজকের পড়ুয়াদের কেউ কেউ আগামী দিনে রাজনীতির ক্ষেত্রেও পা রাখবেন বলেই আশাবাদী তিনি। তাঁর মত, রাজনীতির ময়দানে আরও বেশি করে শিক্ষিত মানুষের প্রযোজন। যতক্ষণ না সত্যিকারের শিক্ষিত মানুষেরা এই দুনিয়ায় পা রাখবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত দেশে বদল আসবে না। কারণ দেশের সামগ্রীক উন্নতির অনেকখানিই নির্ভর করে রাজনীতির উপরে। বর্তমান রাজনীতিতে তেমন নতুন এবং ব্যতিক্রমী ভাবনা ভাবার মানুষের অভাব রয়েছে বলেই মত মন্ত্রীর। আর সেই বদল আনতে পারেন নতুন প্রজন্মই।