আফগানিস্তান দখল করার পরে প্রথমেই মেয়েদের জন্য একগুচ্ছ ফতোয়া জারি করেছিল তালিবান। সৌদি আরবের ছবিটাও ঠিক একইরকম। কিন্তু সেই নিষেধের বেড়াজালের মধ্যে দাঁড়িয়েই ডানা মেলেছিলেন রাহা মোহাররক। আসুন, শুনে নেওয়া যাক তাঁর সেই উড়ানের গল্প।
এ এমন এক দেশ, যেখানে মেয়েরা বাড়ির বাইরে পা রাখতে গেলেও বাবা কিংবা স্বামীর অনুমতি লাগে। আর পুরুষসঙ্গী ছাড়া কোথাও যাওয়া? নৈব নৈব চ। মেয়েরা গাড়ি চালাতে গেলে পুলিশ ধরে। ফুটবল খেলতে চাইলে জোটে চাবুক। পদে পদে এমনই নিষেধের বেড়া উঁচিয়ে আছে সে দেশের মেয়েদের সামনে। অথচ সেই দেশ থেকেই সোজা এভারেস্টের শিখর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন এক তরুণী। অস্বীকার করেছিলেন মেয়েদের পরনির্ভরশীল করে রাখার সামাজিক নিয়মকে। তিনিই রাহা মোহাররক। তিনিই বিশ্বের কনিষ্ঠ আরব মেয়ে এবং প্রথম সৌদি তরুণী, যিনি মাউন্ট এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেছেন।
আরও শুনুন: এভারেস্ট-সহ ছুঁয়েছেন পাঁচ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে রেকর্ড প্রিয়ঙ্কার
সৌদি আরবে বড় হওয়া মেয়েদের যেসব অনুশাসন মেনে চলতে হয়, ছোট থেকেই সেসব দেখে এসেছেন রাহা। কিন্তু নিষেধের তর্জনী তাঁর স্বপ্ন দেখার সাহসটাকে কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারেনি। শারজার আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে ভিজুয়াল কমিউনিকেশনে স্নাতক হন রাহা। কিন্তু তারপর উচ্চতর শিক্ষা অথবা সংসার, কোনও দিকেই না গিয়ে অন্য পথে হাঁটলেন এই তরুণী। নিজের লক্ষ্য হিসেবে তিনি বেছে নিলেন পর্বতারোহণকে। যে দেশে মেয়েদের শিক্ষার অধিকার, বাকস্বাধীনতার অধিকার, ভোটাধিকার, কোনও কিছুই সুলভ নয়, সেখানে নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া মোটেও সহজ কথা ছিল না। তাও এমন একটি পুরুষালি স্পোর্টসকে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে। কিন্তু সেই কঠিন কাজটাই করে দেখিয়েছিলেন রাহা।
আরও শুনুন: আশি পেরিয়েও নিশানা নিখুঁত ‘রিভলবার দাদি’-র, বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক শার্প শ্যুটার এই মহিলা
শুরুটা অবশ্য হয়েছিল হঠাৎ করেই। স্নাতক হওয়ার পরেই বন্ধুদের সঙ্গে আফ্রিকা যাওয়ার জন্য জেদ ধরেছিলেন রাহা। কিলিমাঞ্জারো পর্বত অভিযানে। এদিকে বাবা সৌদি এয়ারলাইন্সে চাকরি করার দরুন রাহা বাড়িতে সামান্য খোলামেলা পরিবেশ পেয়েছিলেন বটে, তবে মেয়েকে এতখানি স্বাধীনতা দিতে প্রস্তুত ছিল না তাঁর পরিবার। কিন্তু অদম্য জেদে সেই অভিযানে গিয়েছিলেন রাহা। আর ২০১১ সালের সেই অভিযানে কিলিমাঞ্জারো জয় করার পরেই পর্বতারোহণের নেশা চেপে ধরে তাঁকে। নেপালের কালাপাথর, ইউরোপের মাউন্ট এলব্রুস, আন্টার্কটিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট ভিনসন- পরের দুবছর ধরে একের পর এক শৃঙ্গ জয় করেছেন রাহা। আর অবশেষে তিনি পা বাড়ালেন বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের লক্ষ্যে। ২০১৩ সালের ১৮ মে এল সেই কাঙ্ক্ষিত জয়। ২৫ বছর বয়সে কনিষ্ঠ আরব মেয়ে হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের রেকর্ড গড়লেন রাহা মোহাররক।
এভারেস্টের শিখর ছুঁতে পারা রাহার কাছে কেবল এক পর্বতশৃঙ্গ জয় করা ছিল না। সৌদি আরবের সব মেয়ের সামনে যে নিষেধের পাহাড় মাথা উঁচিয়ে ভয় দেখায়, পরোক্ষে তাকেই জয় করেছিলেন রাহা। আর সেই কারণেই আজ আরব দুনিয়ার মেয়েদের কাছে স্বপ্ন দেখার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়ে উঠেছেন রাহা মোহাররক।