সাদা পাতা আর রং পেন্সিল হাতে পেলে ছবি আঁকতে কার না ইচ্ছা করে বলুন তো। ছোটবেলায় তো বটেই, তবে বড় হয়েও হাত নিশপিশ করে অনেকেরই। শখের বশেই খাতায় এঁকে ফেলেন নানা কিছু। তবে সেসমস্ত আঁকা কতটা ছবি হয়ে উঠতে পারে সন্দেহ থেকে যায়। তবে সেই হাবিজাবি আঁকার আর কেউ মর্যাদা দিক বা না দিক, তার কদর জানে এই মিউজিয়াম। কারণ বাজে, না হওয়া আঁকা সংগ্রহ করাই এই মিউজিয়ামের লক্ষ। বাজে আঁকার সংগ্রহশালা, তা-ও আবার হয় নাকি? আলবাত হয়। কোথায় আছে এই সংগ্রহশালা, আসুন, শুনে নিই।
মিউজিয়াম বা সংগ্রহশালা মানেই তাতে একটা যত্নের ছাপ। সংগ্রহকারীর যত্ন, পরিশ্রম, তার সঙ্গে এমন কিছু সংগ্রহ, যা সুন্দর, আশ্চর্য এবং বিরল। এই সংগ্রহশালায় মজুত করা জিনিসপত্র আশ্চর্য বটে, তবে তা কতটা সুন্দর বা শিল্পসম্মত তা নিয়ে সন্দেহ আছে বিস্তর। কারণ এই মিউজিয়ামে জায়গা পায় সেসব আঁকাঝোকাই, যা একেবারেই শিল্পসম্মত নয়। বরং এককথায় ‘বাজে ছবি’ বলে দেগে দেওয়া হয় যাদের, এই মিউজিয়াম ঠাসা সেই সব সংগ্রহতেই।
ভাবছেন তো? যেসব ছবির কদর নেই কোথাও, তেমন ছবি নিয়ে আস্ত একটা মিউজিয়াম! এমন আবার হয় নাকি? বিশ্বাস না হলে ঘুরেই আসুন না ম্যাসাচুসেটসের সামারভিল শহর থেকে। সেখানেই রয়েছে এমন আশ্চর্য একটি মিউজিয়াম। যার নামই মিউজিয়াম অব ব্যাড আর্টস। ছোটো করে বললে ‘MOBA’।
আরও শুনুন: জল যেন অ্যাসিডের মতো! খাওয়া তো দূর, কাঁদতে পর্যন্ত পারে না কিশোরী
বেসরকারি এই মিউজিয়ামটি প্রতিষ্ঠা করার পিছনে প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল, শিল্পীর পরিশ্রমকে স্বীকৃতি দেওয়া। যাঁদের আঁকা তথাকথিত সমঝদারমহল বা অন্য কোনও ফোরামে স্বীকৃতি পায় না, তাঁদের জন্য একটি মঞ্চ গড়ে তোলা। ১৯৯৪ সালে স্কট উইলসন নামে এক ব্যক্তি এই মিউজিয়ামটি প্রতিষ্ঠা করেন। পেশায় তিনি ছিলেন অ্যান্টিক জিনিসপত্র বিক্রেতা। প্রথমে ম্যাসাচুসেটসের দেড়হাম শহরেই তৈরি হয়েছিল সংগ্রহশালাটি। সেখান থেকে পরে সামারভিল শহরে স্থানান্তরিত করা হয় সেটিকে। বন্ধুদের ফেলে দেওয়া ছবির মধ্যে থেকে প্রাথমিক ভাবে কয়েকটি ছবি বেছে নিয়ে সংগ্রহশালাটি শুরু করেন স্কট। সেখান থেকে আজ ওই মিউজিয়ামের সংগ্রহে রয়েছে অন্তত ৭০০টি ছবি। তবে ২৫ থেকে ৩৫টি করে ছবি গ্যালারিতে সাজানো হয় দর্শকদের জন্য। স্কটের এই আশ্চর্য মিউজিয়ামের সফরে সঙ্গী হয়েছিলেন জেরি রেইলি নামে এক ব্যাক্তি। তিনি ছিলেন MOBA-র কো-ফাউন্ডার। তিনি জানান, সব দেশেই তো এক বা একের বেশি শ্রেষ্ঠ শিল্পের সংগ্রহশালা রয়েছে। তার উল্টোপথে হেঁটেই ‘বাজে’ শিল্পের একটি সংগ্রহশালা বানানোর ভাবনা এসেছিল তাঁদের মাথায়।
আরও শুনুন: এনেছিলেন ‘স্বপ্নের’ ন্যানো গাড়ি, এতদিনে তার কারণ খোলসা করলেন রতন টাটা
তবে এই সংগ্রহশালায় জায়গা করে নেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে শিল্পীকে। তাঁর আঁকা ছবি বা শিল্পকর্মটিকে হতে হবে একেবারে মৌলিক। এবং তা ইয়ার্কি বা ছ্যাবলামি করে আঁকলে হবে না মোটেও। শিশুদের দিয়ে যা খুশি আঁকিয়ে নিলেও চলবে না কিন্তু। অর্থাৎ মন থেকে বাজে না আঁকতে পারলে সেই শিল্পের জায়গা হচ্ছে না এই সংগ্রহশালায়। মিউজিয়ামের শিল্প বা ছবিগুলিকে এতটাই খারাপ হতে হবে, যা চাইলেও অবহেলা করা সম্ভব নয়। আর এটাই নীতি মিউজিয়াম অব ব্যাড আর্টসের।
সামারভিলের এই সংগ্রহশালায় এমন কিছু ছবিপত্তর রয়েছে, যা দেখলে আপনার হাসি চাপা মুশকিল হবে। তার মধ্যে রয়েছে অদ্ভুত দর্শন ‘মোনালিসা’। রয়েছে ‘ফ্রিডম বিচ’, ‘হান্টিং ডগ’, ‘ব্লু ট্যাঙ্গো’-র মতো এমন এমন সব ছবি, যা দেখলেই শিল্পীর আঁকার হাতের গুণ সম্পর্কে বিলক্ষণ বুঝে যাবেন আপনি। মোদ্দা কথা, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ খারাপ কিছু শিল্পসৃষ্টি দেখতে চাইলে এই সংগ্রহশালার কোনও বিকল্প নেই। আর সেটাই ইউএসপি এই মিউজিয়ামের। ইদানীং ম্যাসাচুসেটসের অন্যতম দর্শনীয় জায়গাগুলির মধ্যে নাম তুলে ফেলেছে এই আশ্চর্য মিউজিয়াম। আদতে ‘বাজে’ শিল্পের পরখ করতেই এই সংগ্রহশালায় দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকেরা।