যাঁরা বলেন মনুষত্ববোধ বা বিশ্বাস শব্দগুলোর আজকের পৃথিবীতে আর অস্তিত্ব নেই। তাঁরা ভুল বলেন। বিশ্বাস না হয়, এই দুই ব্যাক্তির কথা শুনুন। ঘরেতে বিপুল অর্থাভাব, সমস্যা থাকা সত্ত্বেও যাঁরা ফিরিয়ে দিতে পারেন বহুমূল্য গয়না ও নগদ টাকা ভর্তি ব্যাগ। কী হয়েছিল আসলে, শুনে নিন।
চারদিকে কান পাতলেই লুঠপাট, হানাহানির খবর। এর সম্পত্তি ছিনিয়ে নিতে কৌশল করছেন অন্যজন। কেউ বা বেছে নিচ্ছেন দুর্নীতির পথ। এ সমস্ত আশাহীনতার মধ্যেও আলো ফোটাতে জানেন কেউ কেউ। নিজের অভাব, অনটন বা ব্যাক্তিস্বার্থের কাছে কিছুতেই সততাকে মাথা নোয়াতে দেন না যাঁরা। তেমনই দুজনকে এবার সম্মান জানাল পুলিশ।
পেশায় তাঁরা সাফাইকর্মী। তবে জঞ্জাল-আবর্জনা ঘেটেও রাজহংসের মতোই জীবন কাটাতে জানেন তাঁরা। তাই বহুমূল্য সোনার গয়না, নগদ টাকার ব্যাগ পেয়েও ফেরত দিতে পেরেছেন নির্দ্বিধায়।
আরও শুনুন: পিঠেতে ঋণের বোঝা! পড়াশোনার খরচ চালাতে ডিম্বাণু বিক্রি তরুণীর
নভি মুম্বইয়ের উড়ান তালুকা এলাকার ঘটনা। রোজের কাজ করতে করতেই রাস্তার ধারে একটি হোটেলের সামনে থেকে একটি ব্যাগ খুঁজে পান ওই আসরফ আসগর শেখ ও অমিত লালজি চৌধুরি নামে ওই দুই ব্যক্তি। সেই ব্যাগটা খুলতেই বেরিয়ে আসে বেশ কিছু টাকা, একটি সোনার মঙ্গলসূত্র ও একখানা মোবাইল। না, সেসব নিয়ে নেওয়ার কথা একবারের জন্যও মাথায় আসেনি বছর আঠারোর আসরফ বা বছর তেইশের অমিতের। সঙ্গে সঙ্গে সেটি নিয়ে থানায় হাজির হন দুজনে। যদি আসল মালিকের কাছে সেগুলোকে ফেরত পাঠানো যায়।
মোবাইলটির সাহায্য নিয়েই আসল মালিকের কাছে পৌঁছয় পুলিশ। যোগাযোগও করা হয় তাঁদের সঙ্গে। থানায় যথাযথ পরিচয় জমা দিয়ে সেসব নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় পুলিশ।
পরে জানা যায়, ওই টাকা ভর্তি ব্যাগটি আসলে সুশালী ধনঞ্জয় নামে এক মহিলার। সুশালী পেশায় মাছবিক্রেতা। তাঁদের দশ বছরের মেয়ে বিধি অসুস্থ এবং হাসপাতালে ভর্তি। তার চিকিৎসার জন্যই টাকাপয়সা জড়ো করছিলেন সুশালী ও তাঁর স্বামী। মঙ্গলসূত্রটি বিক্রি করতে যাওয়ার পথে কী ভাবে যেন স্কুটার থেকে পড়ে যায় ব্যাগটি। নিজেদের শেষ সম্বল হারিয়ে মাথায় হাত পড়ে গিয়েছিল তাঁদের। মেয়ের চিকিৎসা কীভাবে করাবেন, সেই চিন্তায় উড়েছিল রাতের ঘুম।
ব্যাগটি যে এভাবে ফিরে পেতে পারেন, তা কল্পনাও করতে পারেননি সুশালী আর তাঁর স্বামী। আসগর ও অমিতকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই বলেই জানিয়েছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: অভাব, বারবার ব্যর্থতা, তবু ছাড়েননি হাল! সিভিল আদালতের বিচারকের পদে সবজিবিক্রেতার মেয়ে
মুম্বইয়ের বরি পাখারির বাসিন্দা আসগর ও অমিতের এই সততা দেখে মুগ্ধ পুলিশকর্মীরাও। ওই টাকাটা পেলে হয়তো জীবনটাই বদলে যেতে পারত ওই দুই তরুণের। তা জানা সত্ত্বেও যেভাবে সমস্ত লোভ সংবরণ করে মনুষত্বের নজির রেখেছেন তাঁরা, তাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলেই। এমনকি তাঁদের দুজনের জন্য অর্থ পুরস্কারেও ব্যাবস্থা করা হয়েছে থানার তরফ থেকে। না, সাহায্য হিসেবে নয়, তাঁদের সততার স্বীকৃতি হিসেবেই এই পুরস্কার তাঁদের হাতে তুলে দিতে চান পুলিশকর্মীরা।