১৯০টি দেশের ৫১টি বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা অসংখ্য পড়ুয়ার ভরসা হয়ে উঠেছেন তিনিই। এমনকি নিজের সন্তানদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে তাঁরই ক্লাসের উপরে ভরসা করেন খোদ মাইক্রোসফট উইজার্ড বিল গেটস। কে এই আশ্চর্য শিক্ষক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
পৃথিবী জুড়ে লক্ষ লক্ষ পড়ুয়া তাঁর ক্লাস করতে পারেন একেবারে বিনামূল্যে। নিছক ঘরোয়াভাবে যে ক্লাস শুরু হয়েছিল, এখন সেই ক্লাসের পড়ুয়া ১৯০টি দেশের ছাত্রছাত্রীরা। ৫১টি বিভিন্ন ভাষায় কথা বলেন তাঁরা। কিন্তু দেশ ভাষা জাতি বর্ণ সবকিছুতেই পার্থক্য থাকলেও, সাল খানের ক্লাসের প্রতি ভরসার জায়গায় তাঁরা সকলেই এককাট্টা। এমনকি, এক কনফারেন্সে খোদ মাইক্রোসফট উইজার্ড বিল গেটস জানিয়েছিলেন, নিজের সন্তানদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে সাল খানের ক্লাসের উপরেই ভরসা করেন তিনিও।
আরও শুনুন: ‘হিন্দুরাষ্ট্র করে দিলেই সব সমস্যার সমাধান!’ কেন্দ্রকে একহাত নিলেন যশবন্ত সিনহা
হ্যাঁ, ঠিক এতটাই নামডাক রয়েছে সাল খানের এই ভারচুয়াল অ্যাকাডেমির। কিন্তু কী কারণ রয়েছে তাঁর এই বিপুল খ্যাতির পিছনে? এই সময়ে দাঁড়িয়ে অনলাইন ক্লাস ব্যাপারটা তো আর নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে কোভিডকালে হঠাৎ করেই সকলের ঘরে ঘরে ঢুকে পড়েছে অনলাইনে পড়াশোনার অভ্যাস। ভবিষ্যতে পড়াশোনা কোন পথে এগোবে, এই পরিস্থিতিতে বেশ খানিকটা বদলে গিয়েছে সেই মানচিত্রও। কিন্তু তার পাশাপাশিই উঠে এসেছে আরও এক প্রশ্ন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনলাইন পড়াশোনার যা খরচ, সেই বর্ধিত ব্যয় সকলের পক্ষে বহন করা সম্ভব কি না, সেই নিয়ে চলেছে তর্কবিতর্ক। এদিকে এই ধাঁচের ঠিক উলটোদিকে দাঁড়িয়ে রয়েছে সাল খানের ভারচুয়াল অ্যাকাডেমি। যেখানে পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে থাকা পড়ুয়াদের ‘ফ্রি টিউটোরিয়াল’ দেওয়া হয়। আর ঠিক এইখানেই আরও পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে সাল খানের অনলাইন অ্যাকাডেমি। পৃথিবীর যে কোনও জায়গায় যাতে বিনামূল্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছেন তিনি।
আরও শুনুন: কোথাও পেঁয়াজ, কোথাও বা গিরগিটি! জ্বর সারানোর রকমারি টোটকায় ভরসা গোটা বিশ্বের
আসলে ব্যবসার লক্ষ্যে এই ক্লাস শুরু করেননি সাল খান। তাঁর বারো বছরের বোনকে অঙ্ক শেখাতে গিয়ে বস্তুত এই ক্লাসের সূত্রপাত। বিদেশে থাকা বোনকে টেলিফোনের মাধ্যমেই পড়াতেন তিনি। আর সেই ক্লাসগুলির দৌলতেই স্কুলে চোখে পড়ার মতো অগ্রগতি হয় তাঁর বোনের। অঙ্ক ক্লাসের সেরা পড়ুয়া হয়ে ওঠে সেই মেয়েটিই। তার সূত্র ধরেই বিদেশে থাকা আরও জনা পনেরো আত্মীয়কে পড়াতে শুরু করেন সাল খান। বিষয়টিকে সহজ করার জন্য তিনি একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে ফেলেন। পাশাপাশি অনুশীলনের সুবিধার জন্য কয়েকটি সফটওয়্যারও ডিজাইন করেন তিনি। এরপরে এক বন্ধুর পরামর্শে এই ঘরোয়া ক্লাসগুলির ভিডিও রেকর্ড করে তা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দেওয়ার কথা ভাবেন সাল খান। অবশ্য পরে তিনি স্বীকার করেছেন, তখন এই প্রস্তাব আদৌ মনে ধরেনি তাঁর। যদিও সেসব ভিডিওর দর্শকসংখ্যা অন্য কথা বলে। আর খোদ বিল গেটসের স্বীকৃতির পর, তাঁর স্বপ্নপূরণের জন্য গুগলের তরফে তাঁকে দুই মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।
কেবল ভারচুয়াল অ্যাকাডেমিতেই থেমে থাকতে চান না সাল খান। এর পাশাপাশিই ২০১৪ সালে একটি স্কুলও খুলেছেন তিনি। যেখানে বাঁধাধরা গতের বাইরে পড়ুয়াদের নিজস্ব ভাবনাচিন্তাকে প্রশ্রয় দিতে চান তিনি। বিশ্বের প্রথম ভারচুয়াল হাই স্কুলটিও তিনি গড়ে ফেলবেন খুব দ্রুত, এমনটাই স্বপ্ন দেখেন সাল খান।