জল খাওয়ার অপরাধে ছাত্রীকে বেধড়ক মার শিক্ষকের। এই ঘটনায় আরও একবার প্রকট হয়ে উঠল সমাজে জিইয়ে রাখা জাতপাতের বৈষম্য। কী ঘটেছে ঠিক? শুনে নিন।
স্রেফ জল খাওয়ার দরুন শিক্ষকের কাছে রীতিমতো হেনস্তার শিকার হতে হল এক ছাত্রীকে। জুটল বেধড়ক মারধরও। উত্তরপ্রদেশের এই সাম্প্রতিক ঘটনায় ফের একবার সামনে এল সেখানকার বর্ণবৈষম্যের ছবিটি।
আরও শুনুন: শহিদ হয়েছিলেন স্বামী, শিক্ষকতা ছেড়ে তবু ভারতীয় সেনাতেই যোগ দিলেন স্ত্রী
কী ঘটেছে ঠিক?
জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের মাহোবা জেলার ছিখারা গ্রামের বাসিন্দা ওই মেয়েটি স্থানীয় বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া। স্কুলে শিক্ষক এবং পড়ুয়াদের জলপান করার জন্য আলাদা আলাদা পাত্র রাখা থাকে। সেদিন পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ পাত্রে জল নেই দেখে শিক্ষকদের জন্য নির্দিষ্ট জলের পাত্রটি থেকে জল ঢেলে নিয়েছিল মেয়েটি। কিন্তু সেই জল খাওয়া অপরাধ হিসেবেই গণ্য হয়েছে অভিযুক্ত শিক্ষক কল্যাণ সিং-এর চোখে। কারণ আর কিছুই নয়, মেয়েটি দলিত। সুতরাং উচ্চবর্ণের জন্য নির্দিষ্ট পাত্র থেকে তার জল খাওয়ার অধিকার নেই, এমনটাই মনে করেন ওই শিক্ষক। আর সেই কারণে মেয়েটিকে রীতিমতো মারধর করেন তিনি। এমনকি করা হয় বেত্রাঘাতও। মেয়েটি বাড়ি ফিরে এ কথা জানালে তার বাবা এবং গ্রামবাসীরা স্কুলে গিয়ে বিষয়টি জানতে চান। কিন্তু তখনও ওই শিক্ষক তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলেই অভিযোগ। দলিত শ্রেণির প্রতি একাধিক অপমানজনক শব্দও প্রয়োগ করেন তিনি। আর এরপরেই ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা সোজা তহশিলে গিয়ে হাজির হন। সেখানে এই ঘটনার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক বলে দাবি তোলেন তাঁরা।
আরও শুনুন: মসজিদে আজান শুরু হতেই বন্ধ লাউডস্পিকার, সম্প্রীতির নজির গড়ল বিহারের মন্দির
এই দাবিকে মান্যতা দিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে খবর। অতিরিক্ত বুনিয়াদি শিক্ষা আধিকারিককে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন খোদ মহকুমাশাসক।
ইতিহাস জানায়, একই কারণে স্কুলে অপমানিত হতেন বাবাসাহেব আম্বেদকরও। উচ্চবর্ণের শিক্ষক ও ছাত্রদের জল খাওয়ার জন্য পাত্র রাখা থাকত, কিন্তু তা ছোঁয়ার অধিকার পর্যন্ত মিলত না আম্বেদকরের মতো দলিত ছাত্রদের। সে একশো বছরেরও আগেকার কথা। এদেশের সমাজ থেকে সেই অপমান দূর করার জন্য আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন আম্বেদকর। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর প্রায় সত্তর বছর পেরিয়ে গেলেও অবস্থার যে বিশেষ পরিবর্তন হয়নি, সে কথাই যেন চোখে আঙুল দিয়ে ফের দেখিয়ে দিল এই সাম্প্রতিক ঘটনাটি।