এক দেশ, একটি ভাষা- এমনই দাবিতে সরব যখন একপক্ষ, তখন বারবার বহুমত, বহুস্বরের পক্ষেই সওয়াল করেছেন শুভবুদ্ধিসম্পন্নরা। দিন কয়েক ধরেই হিন্দি বিতর্কে উত্তাল দেশ। আঞ্চলিক ভাষার উপরে হিন্দির আধিপত্যর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন দক্ষিণী অভিনেতা সুদীপ কিচ্চা। বলিউড তারকা অজয় দেবগনের সঙ্গে এ নিয়ে রীতিমতো বাগযুদ্ধে জড়ান তিনি। দলীয় বিভাজন, মতানৈক্য ভুলে সুদীপের পাশে দাঁড়িয়েছিল কার্যত গোটা কর্ণাটক। এবার সেই বিতর্কে সুদীপের পাশেই দাঁড়ালেন বিখ্যাত গায়ক সোনু নিগম। হিন্দি আগ্রাসন নয়, আঞ্চলিক বিভিন্নতাকেই স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বললেন গায়ক। ঠিক কী বলেছেন সোনু, আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
থেমেও যেন থামার নাম নিচ্ছে না হিন্দি ভাষা বিতর্ক। মাস কয়েক আগে হিন্দি ভাষার উপর প্রাধান্য দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার পর থেকে মাঝেমধ্যেই ফের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে এই বিতর্ক।
এ দেশ নানা ভাষাভাষীর। মাতৃভাষার দাবিতে এর আগেও বহু আন্দোলন, রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সাক্ষী ভারত। আঞ্চলিক ভাষার উপরে হিন্দির আগ্রাসনকে কোনও দিনই ভাল চোখে দেখেনি মানুষ। তবে কোথাও কোথাও একটা ভ্রান্ত ধারণা রয়ে গিয়েছে যে হিন্দি ভারতের রাষ্ট্রভাষা। অনেকেই সেই ধারণার উপরে ভিত্তি করেই হিন্দিকে প্রাধান্য দেওয়ার ব্যাপারে জোর দিয়ে ফেলেন। যেমনটা করে ফেলেছিলেন বলিউড তারকা অজয় দেবগনও। টুইটারে দক্ষিণী তারকা সুদীপ কিচ্চার সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন অজয়। সে নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি।
এই বিতর্কে ঘি ঢেলেছিল উত্তরপ্রদেশের এক মন্ত্রীর বক্তব্য। হিন্দি না জানলে ভারতে থাকার অধিকার নেই বলে মন্তব্য করে বিপাকে পড়েন তিনি। শেষমেষ বিতর্কে রাশ টানতে আসরে নামেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। আদালতে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারে জোর দিয়ে বিতর্কে সাময়িক বিরতি টেনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আরও শুনুন:‘হিন্দি বলতে না-পারলে অধিকার নেই দেশে থাকার’, বিতর্কিত মন্তব্য উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রীর
এ বার হিন্দির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরাসরিই মুখ খুললেন সোনু নিগম। আস্থা রাখলেন আঞ্চলিক বিভিন্নতার উপরেই। নিজের কেরিয়ারে হিন্দি-সহ অন্তত ৩২টি ভাষায় গান গেয়েছেন এই গায়ক। ফলে তিনি যে বহু মত, বহুস্বরের প্রতিই আস্থা রাখবেন, তাতে আর আশ্চর্য কী! সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সোনু জানান, তিনি যতদূর জানেন, ভারতীয় সংবিধানে কোথাও হিন্দি ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া নেই। বরং এটা বলা যেতে পারে, যে হিন্দিতে ভারতের সব চেয়ে বেশি মানুষ কথা বলেন।
পাশাপাশি তাঁর প্রশ্ন, অন্যান্য দেশের সঙ্গে এ দেশের সমস্যা কি কিছু কম রয়েছে? যে ভাষার মতো বিষয়ে বিতর্ক তৈরি করে নিজের দেশের সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গায়কের মতে, মানুষ কোন ভাষায় কথা বলবেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার সম্পূর্ণ তাঁর। ভারতীয় সংবিধান তাঁকে সেই অধিকার দিয়েছে। ভাষার মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে বিধিনিষেধ চাপানো একেবারই উচিৎ নয়। তাঁর মতে, প্রতিটি ভাষাভাষীর মানুষ নিজের ভাষায় কথা বলবেন, এটাই কাম্য।
একই সঙ্গে ইংরেজি ভাষাকে বিদেশি ভাষা বলে যাঁরা আক্রমণ করেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন সোনু। তাঁর কথায়, কেউ যদি ইংরেজি ভাষায় স্বচ্ছন্দ হন, তাহলে তাঁর সেই ভাষাতেই কথা বলার স্বাধীনতা রয়েছে। অফিস-আদালত থেকে শুরু করে বহু জায়গাতেই ইংরেজি ভাষার ব্যবহারের চল রয়েছে। তবে এই ভাষার প্রতি বিরূপতা কেন?প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন তিনি।
আরও শুনুন: ভিডিও-সমীক্ষায় ঘোর আপত্তি মসজিদ কমিটির, জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে এবার আসরে বিশ্বহিন্দু পরিষদ
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তারকা মহল, এমনকি রাজনীতির আঙিনাও ভাষা বিতর্কে তোলপাড়। এর আগে সংস্কৃতকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন কঙ্গনা রানাউত। অমিত শাহের হিন্দি আধিপত্যর বিরুদ্ধে একাধিক বার সরব হয়েছেন তামিল নাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন থেকে শুরু করে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তেলঙ্গানার মন্ত্রী কেটি রামা রাও-ও রুখে দাঁড়িয়েছিলেন হিন্দি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে এই বিতর্ক চলছেই। আর তাতে যে এখনই দাঁড়ি পড়ার নয়, সে-ও এক রকম পরিষ্কার।