লাউডস্পিকার বিতর্কে উত্তাল গোটা দেশ। মহারাষ্ট্র থেকে উত্তরপ্রদেশ – ধর্মস্থানে লাউডস্পিকারের ব্যবহার নিয়ে প্রায় আড়াআড়ি বিভাজিত দুই সম্প্রদায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও পরস্পর যুযুধান। কেউ লাউডস্পিকার রাখার পক্ষে, কেউ নন। এই পরিস্থিতিতেই মোক্ষম প্রশ্ন তুললেন, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। ধর্মাচরণের সঙ্গে লাউডস্পিকার মিশিয়ে ফেলে পুরো পরিস্থিতিটাই যে জটিল করে তোলা হচ্ছে, সেদিকেই ইঙ্গিত তাঁর। কী বললেন তেজস্বী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ধর্মস্থানে লাউডস্পিকার ব্যবহার নিয়ে ঘনিয়ে ওঠা বিতর্কে সদ্য একেবারে জল ঢেলে দিয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। জানিয়েছেন, ‘পুরোটাই ননসেন্স। এ নিয়ে কথা না বলাই ভালো।’ প্রায় একই সুর আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের গলাতেও। তাঁরও বক্তব্য, অযথা এই নিয়ে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের পথ প্রশস্ত করা হচ্ছে। আরও এক ধাপ এগিয়ে তেজস্বীর প্রশ্ন, ‘যখন লাউডস্পিকার ছিল না, তখন কি ভগবান ভক্তের প্রার্থনা শুনতেন না?’
আরও শুনুন: ‘বেকারত্বের উপর বুলডোজার চালাবেন কবে?’, তরুণীর ‘সাহসী’ প্রশ্ন বিজেপি মুখপাত্রকে
তেজস্বী সাফ জানিয়েছেন, এই বিতর্ক আসলে মানুষকে বিপথে চালিত করছে। যাঁরা এই বিতর্ক তুলছেন, তাঁদের উদ্দেশে একটি প্রশ্ন রেখেছেন তেজস্বী। সাল-তারিখ তুলে তিনি জানান, ১৯২৫ সাল নাগাদ লাউডস্পিকার আবিষ্কৃত হয়। ১৯৭০ সাল নাগাদ ভারতবর্ষের মসজিদগুলিতে তার ব্যবহার শুরু হয়। তাঁর তাই প্রশ্ন, ‘এর আগে কি ঈশ্বরের অস্তিত্ব ছিল না? নাকি ঈশ্বর তখন প্রার্থনা শুনতেন না?’ তেজস্বী অবশ্য লাউডস্পিকার ব্যবহারের পক্ষে বা বিপক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেননি। তবে এই পুরো বিতর্কটাই যে অনর্থক, তাই-ই প্রমাণ করতে চেয়েছেন। নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, ‘সত্যিকার সমস্যা থেকে মানুষের নজর এর ফলে অন্যদিকে ঘুরে যাচ্ছে। বিপথে চালিত হচ্ছেন মানুষ।’
আরও শুনুন: ‘হিন্দি বলতে না-পারলে অধিকার নেই দেশে থাকার’, বিতর্কিত মন্তব্য উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রীর
মসজিদে লাউডস্পিকারের ব্যবহার নিয়ে ঘোর আপত্তি তুলেছিলেন রাজ ঠাকরে। শিব সেনার উদ্দেশে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছিলেন, যদি এই ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তাহলে তিনি লাউডস্পিকারে হনুমান চালিশা পাঠের ব্যবস্থা করবেন। আজান বনাম হনুমান চালিশা – বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে উত্তরপ্রদেশ ও অন্যান্য রাজ্যেও। যোগী রাজ্যে ধর্মস্থান থেকে খুলে ফেলা হয়েছে বহু বেআইনি লাউডস্পিকার। আওয়াজ যাতে ধর্মস্থানের বাইরে না বেরোতে পারে, তারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপাতত লাউডস্পিকার বিতর্ক গোটা দেশেই বড় প্রভাব ফেলেছে বলা যায়। ঠিক তার মধ্যেই ব্যতিক্রমী হয়ে উঠল বিহার। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ শরিক হয়েও তিনি এই বিতর্ককে একরকম উড়িয়ে দিয়েছেন। প্রায় একইরকম ভাবে গোটা বিতর্কের অসারতা প্রমাণ করে দিলেন তেজস্বী যাদবও।