মানুষের তৃষ্ণার সময় তাঁর মুখে জল তুলে দেবে অন্য জন। এটাই তো হওয়ার কথা। এটাই তো হয়ে এসেছে। চারদিকে ধর্মীয় হানাহানি, অসহিষ্ণুতার মাঝে যখন মানুষ সেই মানবিকতার গল্পগুলো ভুলতে বসেছে, সেই কথাই ফের মনে করিয়ে দিয়েছে মুম্বইয়ের এক দল মানুষ। হিন্দুদের ধর্মীয় মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে ঘেমে নেয়ে ওঠা বন্ধুদের মুখের সামনে জলের বোতল এগিয়ে দিয়েছে একদল মুসলিম পড়শি। আর সেই সম্প্রতির ছবিখানাই ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। শুনে নিন।
খবরে কান পাতলেই ইদানীং কেবল সাম্প্রদায়িক হিংসা, মারামারির খবর। বাতাসে ছড়াচ্ছে ধর্মীয় বিদ্বেষের বিষবাষ্প। অথচ এ দেশটা তো বরাবর এমন ছিল না। সমস্ত হিংসা, হানাহানি, দলাদলিকে ছুড়ে ফেলে বরাবরই এখানে পাশাপাশি বাস করে এসেছেন বিভিন্ন ধর্ম, বিভিন্ন ভাষা, বিভিন্ন মতের মানুষ। সমস্ত বিভেদের মুখের উপর দিয়ে সবসময় ফুল ফুটিয়েছে সেই ঐক্যের সুরই।
আরও শুনুন: সাম্প্রদায়িক বিভাজনের সামনে ‘ঝুঁকেগা নেহি’, বৃদ্ধার মনোবল দেখে অবাক মহারাষ্ট্র
লাউডস্পিকার থেকে শুরু করে হনুমান চল্লিশা বিতর্ক, সাম্প্রতিক কালে বারবার নানাভাবে উসকে উঠেছে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা। দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরী থেকে শুরু করে আরও কিছু জায়গায় বিচ্ছিন্ন ভাবে মাথাচাড়া দিয়েছে অশান্তি। সেই সময় যে আশার গল্প একেবারেই নেই, তা বললে বোধহয় ভুল হবে।
দিন কয়েক আগেই ভোপালে হিন্দুদের মিছিলে পুষ্পবৃষ্টি করতে দেখা গিয়েছিল মুসলিম বাসিন্দাদের। কর্নাটকে আবার রীতিমতো নিয়মকানুন মেনে হিন্দু পড়শির শেষকৃত্য করলেন মুসলিম পড়শি। করেছেন হিন্দু মতে শ্রাদ্ধের কাজও। আর এটাই তো আসল ভারতবর্ষ। ঠিক যেমন ছবি দেখা গেল মুম্বইয়ে। হিন্দুদের একটি ধর্মীয় মিছিলে জল বিতরণ করতে দেখা গেল মুসলিম ভাইয়েদের।
দীর্ঘসময় পর্যন্ত বিধর্মীদের হাতে জল খাওয়া নিয়ে ছুৎমার্গ ছিল বহু জায়গাতেই। তবে সেই দিন গিয়েছে। বরং গরমের সময় মিছিলে ঘেমেনেয়ে ওঠা মানুষদের মুখের সামনে ধরা ওই বোতলের জলটুকু হয়ে উঠেছে অমৃতসমান। খুশিতে ঝলমল করে উঠেছে সকলের মুখ। মুসলিম ভাইটিকে জড়িয়ে ধরেছেন মিছিলের মানুষগুলো। আর জনৈকের ক্যামেরা বন্দি করে রেখেছে সেই মিলনের মুহূর্তখানা। যা পরে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আরও শুনুন: হিংসা নয় চাই সম্প্রীতি, জাহাঙ্গিরপুরীতে জাতীয় পতাকা হাতে একযোগে মিছিল হিন্দু-মুসলমানদের
সম্প্রতি সেই ভিডিয়োটি টুইটারে ফের একবার শেয়ার করেন প্রাক্তন আইপিএস অফিসার যশোবর্ধন ঝাঁ আজাদ। তাঁর প্রশ্ন, গোটা ভারত জুড়েই তো এই ছবিটাই দেখা যাওয়ার কথা। তবে তাল কাটছে কেন?
সত্যি তো, এটাই তো দেশের আসল ছবি। আর সেটাকে নিজেদের সুবিধায় নষ্ট করতে চাইছে একদল সুযোগসন্ধানী। রাজনৈতিক স্বার্থে সেই ঐক্যের সুরটাই কাটতে চাইছে কেউ কেউ। তবে এই সব ছবিই বারবার প্রমাণ করে দেয়, যতই সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিক না কেন, তাকে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে আম-আদমিরাই। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে পাশাপাশি বাস করেছেন। সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিয়েছেন একে অপরের সঙ্গে। আর সেই সম্প্রীতির সুরটাই যে আসল ভারতবর্ষ। তাকে নষ্ট করার ক্ষমতা কারওর নেই।