তারকারা প্রভাবিত করেন তরুণ প্রজন্মকে। তাঁদের চলন-বলন, স্টাইল নকল করে থাকেন অনুগামীরা। সেই তারকারাই যখন তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী সংস্থার হয়ে বিজ্ঞাপন করেন, অভিযোগ ওঠে যে আসলে তাঁরা তরুণ প্রজন্মকেই মন্দ অভ্যাসের দিকে ঠেলে দেন। এই নিয়ে সম্প্রতি বেধেছে জোর বিতর্ক। এবার তার আঁচ বাড়িয়েই এই তারকাদের পদ্ম সম্মান কেড়ে নেওয়ার দাবি জানালেন এক বিজেপি নেতা।
তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন করছেন যে সব বলি তারকারা, তাঁদের পদ্ম সম্মান ফিরিয়ে নেওয়া হোক। সরকারের কাছে এই আবেদন করলেন বিজেপি নেতা শেখর সলকর। তিনি নিজেও চিকিৎসক। তাঁর বক্তব্য, দেশের তরুণ প্রজন্মকে যাঁরা এই অভ্যাসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন এবং একই সঙ্গে মারণব্যাধির দিকে এগিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের নিন্দা জানানোর ভাষা নেই তাঁর কাছে। মূলত অক্ষয় কুমারকে সামনে রেখেই তিনি একযোগে আক্রমণ করেন অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান এবং অজয় দেবগণকেও।
আরও শুনুন: কোভিড নয়, রাস্তায় ঘুরছে ‘মানুষখেকো পিশাচ’! লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিলেন গ্রামবাসীরাই
অজয় দেবগণ দীর্ঘদিন ধরেই একটি ব্র্যান্ডের পানমশলা বা এলাচের বিজ্ঞাপন করেন। এই ব্র্যান্ডটি আবার তামাকজাত দ্রব্যও বিক্রি করে বলে দাবি অনেকের। পরে সেই একই ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে যুক্ত হন শাহরুখ খান। মাঝে কিছুদিন খোদ বিগ বি-কেও এই ধরনের পণ্যের বিজ্ঞাপনে দেখা যায়। জোর বিতর্ক শুরু হলে, তিনি সরে দাঁড়ান। এবার ফের বিতর্ক মাথাচাড়া দেয় যখন এই ধরনের ব্র্যান্ড বা দ্রব্যের বিজ্ঞাপনে অক্ষয় কুমারও অংশ নেন। অক্ষয় কুমার দেশভক্ত হিসাবেই পরিচিত। নিজে ছবি করার ক্ষেত্রেও এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন তিনি। সেই অক্ষয় কুমারকে তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী সংস্থার বিজ্ঞাপনের মুখ হিসাবে মেনে নিতে পারেননি ভক্তরা। তার উপর আবার অক্ষয় নিজে সরকারী বিজ্ঞাপনে তামাকবিরোধী প্রচার করে থাকেন। ফলে অভিনেতার এই কাজ অনেকটা স্ববিরোধীও বটে। বিতর্ক এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছায় যে, অক্ষয় রাতারাতি এই বিজ্ঞাপন থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তার আগেই তারকাদের নিশানা করলেন এই বিজেপি নেতা।
আরও শুনুন: বেহাল অর্থনীতির হাল ফেরাতে দেশে আয়োজন মহা কুবের যজ্ঞের
তাঁর বক্তব্য, নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে কেবল উপার্জনের কথা ভাবেন এই তারকারা। সাধারণ মানুষ এইসব হীন মনের তারকাদের বিশ্বাস করেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম তাঁদের অনুকরণ করতে গিয়ে তামাকের নেশার কবলে পড়ে। যা ক্যানসারের অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, যেখানে ভারত সরকার দেশের সুস্থতার লক্ষ্যে একের পর এক প্রকল্প আনছে, মানুষকে সচেতন করছে, সেখানেই এই তারকারা শুধু অর্থের কারণে তাঁদের নিজেদের কাজে সমস্তটাই ভেস্তে দিচ্ছেন। প্রভাবিত করছেন তরুণ প্রজন্মকে। আসলে তাঁরা ক্যানসারের মতো মারণব্যাধির দিকেই মানুষকে ঠেলে দিচ্ছেন বলে দাবি করেন শেখর। তাঁর আক্ষেপ, এই সব তারকাই আবার পদ্ম সম্মানে ভূষিত। অমিতাভ বচ্চন পেয়েছে পদ্মভূষণ, অজয় দেবগণ এবং অক্ষয় কুমার দুজনেই পেয়েছেন পদ্মশ্রী। বিজেপি নেতার প্রশ্ন, আদৌ কি এই তারকারা পদ্ম সম্মানের যোগ্য? তাঁর তাই দাবি এই ধরনের কাজ যে তারকারা করছেন তাঁদের জাতীয় সম্মান কেড়ে নেওয়াই উচিত। যদিও তারকাদের দাবি, তাঁরা সরাসরি তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন করেন না।
আরও শুনুন: সাম্প্রদায়িক অশান্তির জেরে শ্রীলঙ্কার থেকেও বেহাল হতে পারে দেশের অর্থনীতি, আশঙ্কা সঞ্জয়ের
বিজেপি নেতার মতো পদ্ম সম্মান কেড়ে নেওয়ার দাবি না করলেও নেটদুনিয়াতে বহু মানুষ এই ধরনের বিজ্ঞাপনে তারকাদের অংশ নেওয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। যেখানে দক্ষিণের নায়ক আল্লু অর্জুন তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপনে এক কথায় না বলে দিতে পারলেন, সেখানে কেন বলি তারকারা এই ধরনের ব্র্যান্ডের পণ্যকে প্রমোট করছেন? এ প্রশ্ন অনেকেরই। বিতর্কের মুখে কেউ কেউ সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেও, বাকিরা অবশ্য তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন করছেন না বলেই খানিকটা দায় সেরেছেন।