সারাদিন ধরে একটা বিশেষ গানের কলি ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। চেষ্টা করেও তাকে তাড়াতে পারছেন না কিছুতেই। চেয়ে বা না চেয়েও আপনি গুনগুনিয়ে ফেলছেন সেটা। কখনও ভেবে দেখেছেন কেন হয় এরকম? কোন ম্যাজিকে আচমকা মাথায় ঢুকে যায় আস্ত একটা গানের লাইন? কী বলছেন বিশেষজ্ঞেরা? শুনে নিন।
‘আজ গুন গুন গুন কুঞ্জে আমার একি গুঞ্জরন’… গানের সুরে সবসময় প্রাণের নিমন্ত্রণ না পেলেও মাঝেমধ্যেই কিন্তু বিনা নেমন্তন্নে মাথার মধ্যে সিঁধিয়ে যায় গানের দু-একটা কলি। দিনরাত মাথার মধ্যে চলতেই থাকে সেসব সুর। এমটা হতেই পারে সেই গানটা আপনি নিজে খুব মন দিয়ে শুনেছেন তা নয়। হয়তো চলার পথে কোথাও কানে এসেছে, বা পাশে বসে কেউ একটা গুনগুন করে ভেজেছে সেই গানের সুর। ব্যাস। অমনি সেই গানের রোগে সংক্রমিত হয়ে গেলেন আপনিও। এমনটা তো আখছারই ঘটে। কখনও কখনও বেশ বিরক্তিরও কারণ হয়ে ওঠে সেই গুনগুনানি। কিন্তু কেন হয় এমনটা? ভেবেছেন কি কখনও! আজকাল তো ভাইরালের যুগ। ‘কাঁচা বাদাম’ থেকে শুরু করে কত গানই তো মুহূর্তে ছড়িয়ে যাচ্ছে নেটদুনিয়ায়। লোকজনের মুখে মুখে ফিরছে সেসব গান। এই যে এক লহমায় দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়ে যাচ্ছে কোনও কোনও গান, তার পিছনেও আসলে রয়েছে সেই একই কারণ।
আরও শুনুন: তেলের দামে লাগছে ছেঁকা! অল্প তেলেও দিব্যি হয় রান্না, রইল সাশ্রয়ের উপায়
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ইনভলন্টারি মিউজিক্যাল ইমেজারি বা INMI। অনেকে আবার বলেন ইয়ারওয়ার্ম। কেউ কেউ আবার ব্রেনওয়ার্ম বা স্ট্রাক সং সিন্ড্রোমও বলে থাকেন একে। শুনতে কঠিন হলেও তেমন বড় কোনও সমস্যা নয় এটি। আমরা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও সময় এই গানের গেরোয় পড়েছি। কিন্তু কিসের জন্য কোনও একটা বিশেষ গান এভাবে মাথায় বসে যায়। কোন কোন গুণ থাকলে সহজে জনপ্রিয় হতে পারে কোনও একটি গান? কী বলছেন বিশেষজ্ঞেরা।
তার প্রথম কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করেছেন সেই গানটির মাত্রা বা তালটিকেই। অনেক সময়েই দ্রুত লয়ের গান বেশি দাগ কাটে মানুষের মনে। আবার কখনও কখনও সেই গানের সুর বা কথাও এর জন্য দায়ী।
দেখবেন অনেক সময়েই কোনও একটা গান শুনে আপনাআপনিই কোমর বা পা দুলে ওঠে আমাদের। এটা তখনই হয়, যখন আপনার কাজের ছন্দের সঙ্গে মিলে যায় সেই গানের তালটিও। আর তখনই হয়ে যায় ম্যাজিক। কখনও কখনও গানটির মধ্যে নিহিত অনুভূতি আপনাকে এমন ভাবে ছোঁয়, যার সঙ্গে নিজেকে মেলাতে অসুবিধা হয় না। কোনও একটা গানের ইয়ারওয়ার্ম হয়ে ওঠার প্রাথমিক শর্তই হল সেটা। আর কোনও গানে এইসব গুণের কোনও একটি থাকলেই তা জনপ্রিয় হয়ে যেতে পারে রাতারাতি।
আরও শুনুন: শুধু পরিবেশেই নয়, রক্তেও বিষ ঢালছে মাইক্রোপ্লাস্টিক! হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি
কারণ তো বোঝা গেল, কিন্তু কীভাবে তাড়াবেন এই কানের পোকা থুড়ি গানের পোকাকে? বিশেষজ্ঞেরা বাতলেছেন তার পথও। মগজে চেপে বসা কোনও একটা গানকে দূরে সরাতে আপনি শুনে দেখতে পারেন অন্য ধরনের কোনও গান। যা জায়গা নিতে পারে পুরনো ইয়ারওয়ার্মের।
আরও একটা উপায় রয়েছে ইয়ারওয়ার্ম তাড়ানোর। যে গানটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, সেই গানটাই মন দিয়ে আর একবার শুনে দেখুন। অনেকেই জানিয়েছেন, তাতে নাকি আসলেই মুক্তি পাওয়া গিয়েছে মগজে গেঁথে যাওয়া গানের হাত থেকে। আর তাতেও যদি কাজ না হয়, এটা চুইং গাম মুখে নিয়ে চিবোতে থাকুন। অবাক করা হলেও নতুন গবেষণায় জানা গিয়েছে এমনই আশ্চর্য কথা। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আমাদের চোয়ালের নড়াচড়া নাকি ইয়ারওয়ার্ম তাড়াতে বড় রকমের সাহায্য করে।
তবে ইয়ারওয়ার্ম নিয়ে এত ভাবনাচিন্তারও কোনও কারণ নেই। সাধারণ ভাবে ২৪ ঘণ্টার বেশি মস্তিষ্কে ইয়ারওয়ার্মের অস্থিত্ব থাকে না। তবে তার পরেও যদি মাথার মধ্যে লাগাতার ঘুরঘুর করতে থাকে কোনও একটি বিশেষ গানের অংশ, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া প্রয়োজন। অনেক সময় নাকি কোনও রকম ব্রেন সিস্টেম ডিজঅর্ডারের লক্ষণ হতে পারে এই ইয়ারওয়ার্ম। আর তাছাড়া সবসময়ে ইয়ারওয়ার্ম মানেই যে বিরক্তির কারণ, তাও তো নয়। সত্যি বলতে, মনের ভিতরে পছন্দের গানের এই ঘুরপাক কিন্তু মাঝেমধ্যে দিব্যি ভালও লাগে।