কাজ করতে ভাল লাগুক আর না লাগুক, টাকাপয়সা পেতে কার না ভাল লাগে! তা ছাড়া খেয়েপরে বাঁচতে গেলে কাজকর্ম না করে আর উপায় কী! তবে পৃথিবীতে এমন কিছু চাকরিও আছে, যা প্রথাগত কাজের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। এমনকি কোনও কোনও চাকরির কথা শুনলে কাজ বলেই মনে হবে না হয়তো। অথচ আকাশছোঁয়া বেতন পান এইসব কর্মীরা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক কিছু আজব চাকরির গল্প।
কুকুরকে তাক লাগানোর মতো ঘ্রাণশক্তি আছে? তাহলে এই কাজের চেয়ে সহজ চাকরি আর নেই। কী কাজ? কাজ হল কাগজের ন্যাপকিন শুঁকে দেখা। আজ্ঞে হ্যাঁ। বিদেশে যে কোনও হোটেল রেস্তরাঁ ডাক্তারখানা, সব জায়গাতেই এই জিনিসটির ছড়াছড়ি। সুতরাং পেপার ন্যাপকিন উৎপন্ন করা হয় প্রচুর পরিমাণে। কিন্তু তাতে কোনও দুর্গন্ধ আছে কি না, কিংবা ন্যাপকিনে সুগন্ধ থাকলে তা কারও অ্যালার্জির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কি না, বাজারে ছাড়ার আগে এসব জেনেবুঝে নেওয়া জরুরি। আর তাই ৪০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক বেতন দিয়েও গন্ধবিচারের জন্য পেশাদার লোক নিয়োগ করে প্রতিষ্ঠানগুলি। শুনতে যতই সোজা মনে হোক, প্রকৃতিদত্ত আশ্চর্য ঘ্রাণশক্তি না থাকলে এই চাকরি জুটবে না কোনওমতেই।
আরও শুনুন: জাঙ্কফুডের নেশা সর্বনাশা! নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠানো হল সামুদ্রিক সিলকে
এমনই আরেকটি আরামের চাকরি হল ঘুমনোর চাকরি। হ্যাঁ, কাজের জায়গায় ঘুমোলে আপনার চাকরি যেতে পারে, কিন্তু এই চাকরিতে ঘুমনোটাই হল গিয়ে কাজ। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে যেসব পালকের মতো নরম বিছানার ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে যান, সেইসব রকমারি শয্যার জলজ্যান্ত বিজ্ঞাপন এঁরা। তাই সকলের চোখের সামনে অঘোরে ঘুমিয়ে পড়াটাই এঁদের চাকরির শর্ত। তবে নির্ঝঞ্ঝাটে ঘুমোবার উপায় নেই কিন্তু। ঘুমনোর আগে কখনও এঁদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় কফির মতো কোনও ঘুমতাড়ানি খাবার, আবার ঘুমের মধ্যেই কখনও জ্বালিয়ে দেওয়া হয় চড়া আলো, কখনও জোরালো কোনও আওয়াজে ঘুমের দফারফা। তা ছাড়া ক্রেতাদের আনাগোনা, আর ওই বিছানাই দেখেশুনে দরদাম করা তো লেগেই থাকে। তবে এসবকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে যদি ঘুমোতে পারেন, বছরে লাখ পঞ্চাশেক টাকার মতো বেতন ঢুকতে পারে আপনার পকেটেই।
ঘুমনোর সুযোগ রয়েছে আরও একটি চাকরিতেও। সেটি জড়িয়ে ধরার চাকরি। অবাক হবেন না, একাকিত্বের বিশ্বজোড়া অসুখই জন্ম দিয়েছে এই পেশার। অচেনা কারও পেশাদার আলিঙ্গন থেকেই উষ্ণতা খুঁজে নিচ্ছেন নিঃসঙ্গ মানুষেরা। তাঁদের জড়িয়ে ধরে বসে থাকা, অথবা চাইলে ঘুমিয়ে পড়াটাই কাজ এই পেশার কর্মীদের। আর এর জন্য তাঁদের আয় ঘণ্টায় ৬০০০ টাকার মতো।
কেবল শোয়া নয়, খাওয়ার জন্যও বরাদ্দ রয়েছে চাকরি। না না, ফুড টেস্টার কিংবা ওয়াইন টেস্টারের মতো পরিচিত পেশার কথা বলছি না। মানুষ নয়, মানুষের পোষ্য প্রাণীদের খাবার টেস্ট করার কাজ করেন পেট ফুড টেস্টারেরা। আর এই কাজ করার পারিশ্রমিক? বছরে আন্দাজ ৩০ লক্ষ টাকা।
কেউ কেউ আবার অন্যের হয়ে শপিং পর্যন্ত করে দেন। হ্যাঁ, এই কাজটিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তাঁরা। যাঁদের শপিং করার নেশা রয়েছে, তাঁরা শুনলে খুশি হবেন, এই পেশায় আয়ের পরিমাণ ঘণ্টায় প্রায় ৫০০০ টাকা। আর যাঁরা নিজেরা কেনাকাটা করতে ভালবাসেন, কিন্তু দোকানের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখলে বিরক্ত হয়ে যান, তাঁদের জন্য রয়েছেন লাইন সিটার-রা। লাইনে আপনার হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন এঁরাই, তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে। সেই পারিশ্রমিকের পরিমাণ কত জানেন? দিনে ৮০০০ টাকার কাছাকাছি।
আরও শুনুন: পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুধার্ত মানুষ নাকি ইনি! রাক্ষুসে খিদের কারণেই হয়েছিলেন গুপ্তচরও
এতরকম আজব চাকরির কথা তো শুনলেন। এবার তবে ভেবে ফেলুন এর কোনোটা আপনার মনে ধরছে কি না। রোজকার বাঁধাধরা কাজে যদি মন নাই বসে, অন্যরকম পথেই পাড়ি দিন নাহয়!