মানুষের নেশার অভ্যাস ছাড়াতে রিহ্যাবে পাঠানোর কথা শুনেছেন নিশ্চয়ই। তাই বলে নেশামুক্তিকেন্দ্রে চিকিৎসা চলছে একটি সামুদ্রিক সিলের, এমন আশ্চর্য কথা শুনেছেন কখনও? কিসের নেশা শুনলে তো আরও অবাক হবেন। স্যান্ডউইচ থেকে শুরু করে আইসক্রিম, এসব খাবারে নাকি মারত্মক নেশা ধরে গিয়েছে সেই সিলটির। অবস্থা এমনই সেসব ছাড়া সে মুখেই তুলতে চাইছে না কিছু। অগত্যা তাকে ধরে বেঁধে পাঠানো হয়েছে নেশামুক্তিকেন্দ্রে। সেখানেও কি কাটবে তার এমন অদ্ভুত নেশা? শুনে নিন।
পিৎজা, পেস্ট্রি, চিপস, বিস্কুট- এসব জাঙ্কফুড দেখলে খেতে ইচ্ছা হয় না, এমন সংযমী মানুষ খুব কমই রয়েছেন। এই জাঙ্কফুড খাওয়ার হাজারটা ক্ষতিকর প্রভাবের কথা জেনেও বহু সময়ই লোভ সামলাতে পারি না আমরা। তেমনই পারে না এই সামুদ্রিক সিলটিও। জাঙ্কফুডের প্রতি এমনই নেশা তার ধরেছে যে সেসব ছাড়াতে তাকে পাঠানো হয়েছে নেশামুক্তি কেন্দ্রে।
রিহ্যাবে সিল! এমন আশ্চর্য কথা শুনেছেন নাকি কস্মিন কালেও! মাদকসেবনে অভ্যস্তদের জন্য গোপনে নেশা ছাড়ানোর ব্যবস্থার কথা শোনা যায়। তাই বলে জীবজন্তুদের নেশামুক্তিকেন্দ্র। তা-ও আবার সামুদ্রিক সিলদের।
আরও শুনুন: পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুধার্ত মানুষ নাকি ইনি! রাক্ষুসে খিদের কারণেই হয়েছিলেন গুপ্তচরও
তা কী-ই বা করার! ইংল্যান্ডের ডেভন এলাকার প্লাইমাউথের সমুদ্রে থাকা এই সিলটির অবস্থা যে খুবই বিপজ্জনক। স্পিয়ারমিন্ট নামক এই সিলটির যে শুধুই জাঙ্কফুডের নেশা, তা তো নয়। তার সঙ্গে রয়েছে মানুষের প্রতি তাঁর অমোঘ আকর্ষণও। অবস্থা এমনই যে মানুষের সঙ্গ ছাড়া সে থাকতেই পারছে না একেবারেই।
তা পশুপাখিদের মানবপ্রীতি তো নতুন নয়। বহু ক্ষেত্রেই তো গৃহপালিতদের ক্ষেত্রে এমনটা হয়েই থাকে। বাড়ির মানবসদস্যদের চোখে হারায় তারা। তবে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, গৃহপালিত পশুদের কথা আলাদা। কিন্তু সামুদ্রিক আবহাওয়ায় অভ্যস্ত সিল জাতীয় প্রাণীদের জন্য এ অভ্যাস নাকি মোটেই ভাল নয়। তাতে সমুদ্রে মানিয়ে নিতে অসুবিধায় পড়তে হয় তাদের।
পর্যটকেরা ভালবেসে স্পিয়ারমিন্টকে প্রায়শই স্যান্ডউইচ, ডোনাটস, আইস ক্রিম, মাছ, বিভিন্ন রকম ভাজাভুজি খেতে দেন। আর সে সব খেতে খেতে তার এতটাই বদ অভ্যাস হয়ে গিয়েছে, যে নিজের নিয়মিত খাবার খেতে বেজায় অনিহা তার। রোজের মেনুতেও এখন সেসব জাঙ্কফুডই তার চাই-ই চাই।
স্বাভাবিক ভাবেই স্পিয়ারমিন্টকে নিয়ে বেজায় বিপাকে পড়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। ‘দ্য রয়্যাল সোশাইটি ফর প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস’ নামে একটি সংস্থার উদ্যোগে আপাতত স্পিয়ারমিন্টকে পাঠানো হয়েছে একটি নেশামুক্তি কেন্দ্র বা রিহ্যাবে। দীর্ঘদিন ধরে জাঙ্কফুড খাওয়ার ফলে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যাও দেখা গিয়েছে স্পিয়ারমিন্টের। তার কান থেকে পুঁজ জাতীয় পদার্থ বেরোচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ওই সংস্থার কর্মীরা। সেই চিকিৎসাও হবে ওই নেশামুক্তিকেন্দ্রেই। তার পরেই স্কটল্যান্ডে নিয়ে গিয়ে স্বাভাবিক সামুদ্রিক পরিবেশে ছেড়ে আসা হবে স্পিয়ারমিন্টকে।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বার নেশামুক্তিকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে। প্রথমবারও মানুষের হস্তক্ষেপের কারণেই সমস্যায় পড়তে হয়েছিল তাকে। ফের আরও একবার মানুষের কারণেই সিলটি স্বাভাবিক অভ্যাস থেকে সরে এসেছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞরা।
আরও শুনুন: চাকা নড়েও না, চড়েও না! তবু এই রেলগাড়িতে ভিড় জমান অসংখ্য জঙ্গল-যাত্রী
চিড়িয়াখানা থেকে শুরু করে জাতীয় উদ্যান, প্রায় সব জায়গাতেই বন্য পশুদেরকে অযথা উল্টোপাল্টা খাবার খাওয়াতে নিষেধ করা হয় পর্যটকদের। এর ফলে ওদের স্বাভাবিক অভ্যেস ও জঙ্গলের জীবনে প্রভাব পড়ে। বহু ক্ষেত্রে অসুখবিসুখেও পড়ে তারা। তবে বারবার সচেতনতা সত্ত্বেও বহু ক্ষেত্রেই টনক নড়ে না মানুষের। আর তারই সবচেয়ে বড় উদাহরণ স্পিয়ারমিন্ট।