মনের জোর থাকলে কী না সম্ভব। এই বিশ্বাসটাকে সামনে রেখেই অসাধ্য সাধন করে ফেলেছেন এই ব্যক্তি। ডিঙিয়ে ফেলেছেন বাঁধার পাহাড়। তবে একা একা নয়। সঙ্গে ছিল তাঁর সাত বছরের একরত্তি। কী করেছেন এই বাবা-ছেলে জুটি? আসুন, শুনে নিই।
একরত্তি ছেলেটি ডাউন’স সিন্ড্রোমের শিকার। তবে সেই অসুখকে কখনও বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে দেননি মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের বাসিন্দা আদিত্য তিওয়াড়ি। আদিত্য নিজে একজন তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। তবে ব্যক্তিগত জীবনে গোড়া থেকেই তিনি ছকভাঙা।
বছর পাঁচেক আগে, ২০১৬ সাল নাগাদ অবিনাশকে দত্তক নিয়েছিলেন আদিত্য। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৬। বিয়ে পর্যন্ত করেননি। তবে ওইটুকু বয়সেই এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেছিলেন তিনি।
সমাজের চোখরাঙানি তো ছিলই। ‘বাবা বেবি ও’ ছবিতে আমরা দেখেছি ‘একা বাবা’ হওয়ার গল্প। কিন্তু তার অনেক আগেই সমাজের চোখে চোখ রেখে মস্ত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন আদিত্য। একে তো অবিবাহিত অবস্থায় সন্তান দত্তক নেওয়া, তার উপর সেই সন্তানটি যদি হয় ডাউন’স সিন্ড্রোমের শিকার! তবে তো আর কথাই নেই। কিন্তু সে সব কথায় কোনও দিনই কান দেননি আদিত্য। বরং সে সব সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে নেমে পড়েছিলেন অন্য যুদ্ধে।
আরও শুনুন: দুজনেই আক্রান্ত ডাউন সিনড্রোম-এ, ৯৫ বছরের বৃদ্ধার সঙ্গে খুদের সম্পর্কে মুগ্ধ নেটদুনিয়া
পাহাড় চড়ার যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধে শেষপর্যন্ত জিতেও গিয়েছেন সেই বাবা-ছেলে জুটি। সাত বছরের অবিনাশ বাবার হাত ধরে জয় করে এসেছে মাউন্ট এভারেস্ট। ঠিকই শুনেছেন, পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গটি। ছুঁয়ে এসেছেন মাউন্ট এভারেস্টের বেস ক্যাম্প, যেটির উচ্চতা প্রায়।
কীভাবে সম্ভব হল এই অসাধ্য কাজ? আদিত্য জানিয়েছেন, কোনও মতেই ধৈর্য হারাননি তিনি। গত ছ-মাস ধরে প্রতি মুহূর্তে প্রস্তুতি নিয়েছেন দুজনেই। সাধারণত গোটা অভিযান সারতে ১২ দিন মতো সময় নেন অন্যরা। সেখানে আদিত্য-অবিনাশের একটু বেশি সময় লেগেছে। তারা গোটা অভিযানটি সেরে এসেছেন ২১ দিনের মাথায়। প্রায় প্রত্যেকটি পয়েন্টে দু থেকে তিন দিন করে সময় নিয়েছেন তাঁরা। খেয়াল রেখেছেন, যাতে অবিনাশের শারীরিক সমস্যা না হয়। গাইড থেকে শেরপা, এমনকি প্রয়োজনে অবিনাশকে যাতে এয়ারলিফট করে আনা যায়, সেই ব্যবস্থাও করে রেখেছিলেন আদিত্য। তবে শেষপর্যন্ত তার প্রয়োজন পড়েনি। গোটা অভিযানটা দক্ষতার সঙ্গে শেষ করে নেমে এসেছেন বাবা-ছেলের এই অভিনব জুটি।
অবিনাশই বোধহয় প্রথম খুদে, যে ডাউন’স সিন্ড্রোম নিয়ে ওই উচ্চতায় ট্রেকিং শেষ করতে সফল হয়েছে। এর আগে এই ধরনের রোগসম্পন্ন কোনও শিশু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,৮০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত অভিযান শেষ করেছে বটে। তবে ৫,৩৬৪ মিটার উচ্চতায় পৌঁছনো, এই প্রথম।
আরও শুনুন: শুধুমাত্র শব্দ শুনেই জালে পৌঁছল বল, দৃষ্টিহীন কিশোরীর লক্ষ্যভেদে মুগ্ধ নেটদুনিয়া
এর আগে জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাম ও গুলমার্গেও ট্রেক করেছে অবিনাশ। সেটা ছিল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আড়াই হাজার মিটার উপরে। এমনকি অবিনাশকে নিয়ে লাদাখেও গিয়েছেন আদিত্য। শুধুমাত্র পাহাড় চড়াই নয়, ইতিমধ্যেই স্পেশাল অলিম্পিকেও অংশ নিয়েছে অবিনাশ। আপাতত মহোওয়ে সেনা স্কুলে পড়াশোনা করছে সে। অসুখকে তুচ্ছ করে জীবনের সব কটা যুদ্ধ এ ভাবেই জিতে ফিরুক অবিনাশ, বাবা হিসেবে শুধু সেটুকুই চান আদিত্য।