যদি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটায় একা হয়ে যায় তাঁদের সন্তান। কিছু বোঝার আগেই যদি মৃত্যু এসে কেড়ে নিয়ে যায় বাবা-মা, পরিবারকে। তখন অনাথ হয়ে কোথায় ঘুরবে সেই একরত্তি! কে দেখবে তাঁকে। কী পরিচয়ে বাঁচবে সে? এমন হাজারটা দুশ্চিন্তা অবিরত তাড়া করে ফিরছে ইউক্রেনের এই পরিবারটিকে। তাই সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খুদের উন্মুক্ত পিঠে নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর লিখে রাখলেন মা। সেই ছবিই ছড়াল সোশ্যাল মিডিয়ায়। রুশ সেনার ভয়ঙ্কর নৃশংসতার সামনে কেমন আছে ইউক্রেনের শিশুরা? শুনে নিন।
“আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে”- সন্তানের জন্য আর কী বা চাওয়ার থাকতে পারে বাবা-মায়ের। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে দুধে-ভাতে থাকার স্বপ্নটাও বোধহয় আজ অলীক। প্রাণে বেঁচে থাকাটাই এখন সেখানে মস্ত বড় কিছু। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গিয়েছে চল্লিশ দিন। ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে কথাবার্তা একটু যেন থিতিয়ে পড়েছে। বদলে উঠে এসেছে নতুন নতুন ঘটনা। আর তাতেই মজছে নেটদুনিয়া। তবে ইউক্রেনে যুদ্ধের কিন্তু বিরাম নেই। একের পর এক শহর তছনছ করে দিয়েছে রুশ সেনা। দিন কয়েক আগেই সামনে এসেছে ইউক্রেনের গণকবরের ছবি। যা দেখে কার্যত শিউরে উঠেছে গোটা বিশ্ব। তবে এসব বোধহয় ইউক্রেনে এখন খুব সাদামাটা ব্যাপার। অন্তত গত দেড় মাস ধরে তো বটেই।
ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন অসংখ্য ইউক্রেনবাসী। প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্তে প্রতিদিন বেড়েই চলেছে শরণার্থী স্রোত। যাঁরা পালাতে পারেননি তাঁদের মাথার উপর চক্কর কাটছে মৃত্যুভয়। সত্যি কথা বলতে, কাউকেই রেয়াত করছে না রুশ সেনা। বাচ্চা বুড়ো নির্বিশেষে চালানো হচ্ছে গুলি। দু-দিন আগেই হাত-পা বাঁধা শবদেহের ছবি ঘুরেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁদের কয়েক জনকে মুখের ভিতর গুলি করে মারা হয়েছে বলেও অভিযোগ।
আরও শুনুন: অপুষ্টির জেরে ১৩,০০০ নবজাতকের মৃত্যু আফগানিস্তানে, উদ্বিগ্ন বিশ্ব
এই পরিস্থিতিতে আদৌ বাঁচবেন কিনা সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন বাসিন্দাদের কাছে। রাজধানী কিয়েভ দখল করতে না পারলেও ইতিমধ্যেই রুশ হামলায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে মারিওপোল, বুচা, বরোদিয়াঙ্কার মতো শহরগুলি। তার মধ্যেও দেশ ছাড়ার প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দেশে আটকে পড়া বাসিন্দারা। কিন্তু সত্যিই যে প্রাণটুকু নিয়ে দেশ ছাড়তে পারবেন এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। তবু তো আশা নিয়েই বাঁচে মানুষ। তাই খুদে সন্তানের পিঠে নাম-ধাম-পরিবারের মানুষের ফোন নম্বর লিখে রাখলেন ইউক্রেনের এক মা। যুদ্ধের দেশে যদি তাঁরা আর না বাঁচেন! যদি এক মুহূর্তে অনাথ হয়ে যায় একরত্তি শিশুটি। তখন যেন একটা ঠিকানা খুঁজে পায় তাঁদের সন্তান। এইটুকুই আশা যুদ্ধবিধ্বস্ত মা-বাবার।
এক সাংবাদিকের তোলা এই ছবিটিই সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা দেখে বাকরুদ্ধ নেটিজেনরা। ওই সাংবাদিক এ-ও জানিয়েছেন, আপাতত সুরক্ষিত ওই পরিবারটি। তার পরেও আতঙ্ক পিছু ছাড়েনি। প্রতিমুহূর্তে তাড়া করে বেড়াচ্ছে মৃত্যুভয়। নাম, ঠিকানা লেখা কাগজের টুকরো তাই এখনও বুকে আগলে রাখছেন তাঁরা। যদি কিছু হয়ে যায়, এই ভয় বুকে নিয়ে। শুধু এই পরিবারটি নয়, ইউক্রেনের আরও অসংখ্য পরিবারের অবস্থাটা ঠিক এমনই।
আরও শুনুন: বন্ধুত্বের আবার ‘দেশ’ হয় নাকি! ইউক্রেনের শরণার্থী শিশুকে জড়িয়ে ধরে স্কুলে স্বাগত জানাল খুদেরা
ইউক্রেনের ছবিটা আসলে সত্যিই ভয়াবহ। ছোট ছোট বাচ্চাদের হিউম্যান শিল্ড করে পালানোর চেষ্টা করছে রুশ সেনা। সামনে এসেছে এমনও ছবি। চেরনিভের কাছে একটি গ্রামে দেখা গিয়েছে, এক বাস ভর্তি শিশুদের ট্যাঙ্কের সামনে রেখে দিয়েছে রুশ সেনা, যাতে হামলা হলে প্রথম কোপটা পড়ে তাদের উপরেই। যুদ্ধের নিন্দা করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আক্রমণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁকে ‘যুদ্ধবাজ’ আখ্যাও দিয়েছেন তিনি। বারবার আলোচনা টেবিলে বসার পরেও সমাধানসূত্র বের করতে পারেনি রাশিয়া ও ইউক্রেন। সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনেস্কি জানিয়েছেন, রুশ বাহিনী মারাত্মক অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনবাসীর উপরে। সেই ছবি সামনে আনতে বিভিন্ন সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের ইউক্রেনে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ইউক্রেন থেকে সেনা কমানোর দাবি করলেও রাশিয়া আদৌ সেই পথে হাঁটছে না বলেই অভিযোগ। বরং উত্তরোত্তর হামলার ঝাঁজ বাড়িয়েই চলেছে পুতিনের বাহিনী। কবে শান্তি ফিরবে ইউক্রেনে! সেই প্রশ্নটার বোধহয় উত্তর জানে না কেউই।