টাকার খুব টানাটানি। এদিকে কর্মীদের দাবি মাইনে বাড়াতে হবে! কী উপায়? কোনও পথ খুঁজে না পেয়ে শেষমেশ পড়শিকেই অপহরণ করলেন এক রেস্তরাঁ মালিক। গুজরাটের এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় রীতিমতো হতবাক সকলে। আসুন, শুনে নিই।
ব্যবসায় মন্দা। অবস্থা খুব একতা সুবিধের নয়। কিন্তু কর্মীরা সে কথা শুনবেন কেন! তাঁদের তো বেতন দিতে হবে। সেই সঙ্গে ইনক্রিমেন্টের দাবি-দাওয়া আছে। এই চাপের মুখেই এক রেস্তরাঁ মালিক ঘটিয়ে ফেললেন আজব কাণ্ড। টাকার বন্দোবস্ত করতে অপহরণ করলেন পড়শিকে। ভেবেছিলেন, মুক্তিপণের টাকায় ব্যবসার আর্থিক ঘাটতি মিটিয়ে নেবেন। কিন্তু বিধি বাম! শেষ মুহূর্তে সব পরিকল্পনাই বানচাল হয়ে যায়। আপাতত মালিকের হাতে হাতকড়া।
আরও শুনুন: বিক্রি করতে চান নিজের ‘আত্মা’, যুবকের সিদ্ধান্তে হতবাক নেটদুনিয়া
ঘটনা গুজরাটের। অভিযুক্ত এই রেস্তরাঁ মালিকের নাম মিতুল প্যাটেল। আর্থিক সমস্যায় তিনি ছিলেন জেরবার। আর তা থেকে বেরোতে একদিন কষলেন অপহরণের ছক। সঙ্গী হিসাবে পেলেন তাঁরই চার কর্মীকে। প্ল্যান হল, পাশের বাড়ির বয়স্ক মহিলাকে অপহরণ করা হবে। মহিলার নাম অলকা রাস্তোগি। বয়স ৫৬ বছর। দিনের বেশিরভাগ সময় একা একাই থাকতেন তিনি। তাঁর স্বামী প্রদীপ রাস্তোগি একটি কারখানায় কাজ করেন। পরিকল্পনা মাফিক একদিন দরজার ঘণ্টি বেজে ওঠে অলকার বাড়িতে। এক যুবক জানান যে, তিনি বাড়ির সোলার প্যানেল চেক করতে এসেছেন। যেই না অলকা দরজা খুলেছেন, অমনি ঘরের মধ্যে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে আরও কয়েকজন। টেপ দিয়ে প্রথমেই অলকার মুখ বন্ধ করা হয়। হাত-পা বেঁধে তাঁকে অপহরণ করা হয় একেবারে ফিল্মি কায়দায়। সেই সময় মুক্তিপণের জন্য তাঁর স্বামীকে ফোন করা হয়। কিন্তু ঘটনাচক্রে তাকে ফোনে পাওয়া যায় না।
আরও শুনুন: ‘দেশের স্বার্থ সবার আগে’, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনা প্রসঙ্গে সাফ কথা নির্মলার
এদিকে প্রদীপ রাস্তোগি বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে দেখতে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। খোঁজাখুঁজি করেও যখন পেলেন না, তখন সোজা চলে যান পুলিশের কাছে। নিখোঁজ অভিযোগ পেয়ে পুলিশ আসে রাস্তোগি পরিবারে। আর তাতেই পিলে চমকায় রেস্তরাঁ মালিকের। যতই নাটকীয় ভাবে অপহরণ করুক না কেন, পাকা হাতের কাজ তো নয়। ফলে, ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর কে না জানে, পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা! ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে রেস্তরাঁ মালিকের। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে তিনি অলকাকে একটা নির্জন জায়গায় রেখে আসেন।
আরও শুনুন: হিজাবের পক্ষেই হরনাজ, ব্যক্তিগত পছন্দে হস্তক্ষেপ চান না মিস ইউনিভার্স
সেখান থেকে কোনক্রমে ওই মহিলা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তারপর একজন দোকানির সাহায্যে তাঁর স্বামীকে ফোন করেন। দুজনেই পুলিশের দ্বারস্থ হন। তদন্তে নেমে পুলিশ একটি গাড়ির খোঁজ পায়। যে গাড়িতে করে এসেছিল অপহরণকারীরা। একটু এদিক ওদিক খোঁজ নিতেই জানা গেল, সে গাড়ির মালিক পাশেই রেস্তরাঁ চালান। এর পর আর অঙ্ক মেলাতে বিন্দুমাত্র দেরি করেননি পুলিস অফিসাররা। হাতে হাতকড়া পড়ে রেস্তরাঁ মালিকের। আর জেরার সময় তিনি কবুল করেন যে, অর্থনৈতিক সমস্যায় তাঁর দিনরাত প্রায় এক হাত চলেছে। মুক্তিপণের টাকায় রেস্তরাঁ বাঁচানোর জন্যই এতকিছু করে ফেলেছেন তিনি। আর এ কাজে তাকে পরামর্শ দিয়েছেন এবং সহায় হয়েছেন তাঁরই কর্মচারীরা। আপাতত বাকিদের খোঁজ করছে পুলিশ। মাইনে বাড়া বা বাড়ানো তো দূর অস্ত, এবার যে শ্রীঘরেই সকলের ঠাঁই হতে চলেছে, তা প্রায় নিশ্চিত।