রাজনৈতিক ডামাডোলের বড়সড় প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতেও। আর তার জেরেই অনাহার আর অপুষ্টির থাবা আফগানিস্তান জুড়ে। এমনকি রেহাই পাচ্ছে না নবজাতকেরাও। হাজার হাজার সদ্যোজাত শিশু ঢলে পড়ছে মৃত্যুর মুখে। তালিবান-অধিকৃত দেশটি সম্পর্কে জানা গিয়েছে এমনই ভয়াবহ খবর। শুনে নেওয়া যাক।
১৩,৭২৬। এত বড় সংখ্যাটা কীসের সূচক, জানেন? সংখ্যাটা আসলে মা ও শিশুর মৃত্যুর। চলতি বছরে আফগানিস্তানে যতজন প্রসূতি এবং নবজাতকের মৃত্যু ঘটেছে, তার মোট যোগফল এই সংখ্যা। মৃত্যুর কারণ অন্য কিছু নয়, অনাহার এবং তার জেরে অপুষ্টিই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে তাদের, জানাচ্ছে সমীক্ষা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তালিবান-অধিকৃত আফগানিস্তানে চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছে আমজনতার দুর্দশা। সে দেশের মানবিক এবং অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে তাই উদ্বেগ বাড়ছে বিশ্ব জুড়ে।
আরও শুনুন: হল না কেক কাটা, জন্মদিনেই দেশছাড়া হতে হল ইউক্রেনের খুদেকে
নতুন বছর শুরু হওয়ার পরে কেটেছে মাত্র তিনটি মাস। তার মধ্যেই মৃত্যু ২৬ জন প্রসূতির। আর অপুষ্টির জেরেই মারা গিয়েছে ১৩,৭০০টি নবজাতক শিশু। বস্তুত, আফগানিস্তানের ৯৫ শতাংশ মানুষের পাতেই পরিমিত খাবার জুটছে না বলে খবর। অনাহারে ভুগছেন প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। শোনা গিয়েছে, খিদের জ্বালায় নিজেদের কিডনি বিক্রি করে দিতে চাইছেন দরিদ্র আফগানরা। এমনকি খাবারের সংস্থান করার জন্য নিজের সন্তানকে, বিশেষ করে ছোট ছোট মেয়েদের বিক্রি করে দিতেও পিছপা হচ্ছেন না কেউ কেউ। তালিবান-অধিকৃত দেশটিতে মানবিকতার এহেন অবক্ষয় দেখে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বিশ্বের রাজনৈতিক মহল।
আরও শুনুন: যুদ্ধের বলি শৈশব, রাশিয়ার আক্রমণের জেরে নিহত ইউক্রেনের শতাধিক শিশু
গত বছরের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছিল তালিবান। ক্ষমতা দখলের আগের যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং পরবর্তী কালের টালমাটাল অবস্থা অশান্ত করে তুলেছিল তৃতীয় বিশ্বের এই দেশটিকে। দু’দশকের যুদ্ধ, অসহায়তা, যন্ত্রণা সহ্য করার পরেও ওই সময়টাকেই আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় সংকটকাল বলে চিহ্নিত করেছিলেন খোদ রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব, আন্তোনিও গুতেরেস। সত্যি হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই আশঙ্কাই। তালিবানের শাসন জারি হওয়ার পর থেকে বহু মানুষ ঘরছাড়া। ভেঙে পড়েছে আমজনতার জন্য বরাদ্দ প্রাথমিক পরিষেবাগুলিও। রাজনৈতিক টানাপোড়েন, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ফসল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাজারদর। এদিকে ক্রমশ বেড়ে চলেছে দারিদ্র্যের হার। নিয়মিত কাজ হারিয়েছেন অনেকেই। বিশেষ করে মেয়েদের উপর ফের তালিবানি ফতোয়া জারি হওয়ার দরুন তাঁদের চাকরি করার পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ জার্নালিস্টস-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মিডিয়াজগতে কাজ করা মেয়েদের মধ্যে অন্তত ৬০ শতাংশ মহিলাই কাজ হারিয়েছেন। আর তাঁদের মধ্যে ৯০ শতাংশ মেয়েই তাঁদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে অনিবার্যভাবেই ঘোর দুর্দশার মুখোমুখি হয়েছেন দেশের আমজনতা। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে যথাযথ পথ্য ও শুশ্রূষা না পাওয়ার কারণেই মৃত্যু হচ্ছে প্রসূতিদের, বলে জানিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রাক্তন জনস্বাস্থ্যমন্ত্রী ডঃ ওয়াহিদ মাজরু। কিন্তু এই ব্যাপক সংকটের সমাধান কীভাবে হতে পারে, সে বিষয়ে কোনও আশার আলো দেখাতে পারেননি রাষ্ট্রসংঘের আধিকারিকেরাও। অনাহার, দারিদ্র্য আর মৃত্যুর সঙ্গে প্রতিদিন পাঞ্জা লড়াই তাই আপাতত আফগানিস্তানের নিয়তি।