আত্মা বিক্রি করতে চান এক যুবক। না না, প্রতীকী অর্থে নয়য়। এমনকী এর সঙ্গে কোনও বিশেষ ঘরানার সাধনার যোগও নেই। স্রেফ নিজের আত্মা-ই বিক্রি করতে চান ওই যুবক। এবং একেবারে ওয়েবসাইট খুলে তার বিজ্ঞাপনও দেওয়া শুরু করেছেন। প্রত্যাশিত ভাবেই, এতে শোরগোল পড়েছে বিশ্বে। আসুন ঘটনাটা একেবারে গোড়া থেকেই শুনে নেওয়া যাক।
যে সমস্ত জিনিসের প্রয়োজনীয়তা আছে, তাই-ই বিক্রি হয়। এই হল চিরকালের ধারণা। এমনকী শখের জিনিস বলে যা কেনা হয়, তারও একরকমের প্রয়োজনীয়তা থাকে বইকি। শখ মেটানোর প্রয়োজন সেখানে বড় হয়ে ওঠে। একেবারেই প্রয়োজন নেই, এমন জিনিস কি আদৌ বিক্রয়যোগ্য? কিছুদিন আগে হলেও এ প্রশ্নের নাহয় উত্তর খুঁজে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। এনএফটি বা নন-ফাঞ্জিবল টোকেন এসে প্রমাণ করে দিয়েছে, সবকিছুই এখন বিক্রয়যোগ্য। এই ধারণা যে আধুনিক প্রজন্মের মনে কতখানি চেপে বসেছে তা প্রমাণ করে দিলেন নেদারল্যান্ডসের এক যুবক। বয়স একুশ বছর। আর একুশের দুঃসাহসেই তিনি চাইছেন, নিজের আত্মা বিক্রি করতে।
আরও শুনুন: অদ্ভুত রীতি! বিয়ের আগের রাতে কাপ-প্লেট ভাঙেন কনের বাড়ির আত্মীয়রা
ব্যাপারটা অদ্ভুত ঠিকই। এমনকী এনএফটি-র দুনিয়াও এমন অদ্ভুত জিনিস আগে কখনও দেখেনি। অকিঞ্চিৎকর ছবি, ভিডিও থেকে সামান্য মিম পর্যন্ত সেখানে বিক্রি হয়। করোনাকালীন বিপর্যয়ের পর, এর দৌলতে শিল্পীদের সামনে একটা নতুন দুনিয়া খুলে গিয়েছে বলা যায়। ডিজিটাল আর্টকে মাধ্যম করে এনএফটি-র দৌলতে বিভিন্ন সংস্থা অর্থ উপার্জনের পথ করে দিচ্ছে অনেককেই। সে তো খুব ভাল কথা। কিন্তু এখানে একটা ব্যাপার খেয়াল করার মতো। এই ডিজিটাল সম্পত্তি আর তার লেনদেন প্রমাণ করছে যে, প্রয়োজন থাকলেই যে কোনও কিছু বিক্রি হবে, ব্যাপারটা এমন সরল করে দেখার কোনও মানে নেই। শখের জিনিস বলতে এতদিন বিশ্ব যা বুঝে এসেছে তারও ধারণা বেশ বদলেছে। শখের জিনিস মানেই মূল্যবান বা অ্যান্টিক কিছু না-ও হতে পারে। হয়তো একটা মজাদার মিম কেউ কিনে রাখতে পারেন। বা ঘরে বসে কারুরু বানানো একটা ভিডিও ভালো লেগে গেল অন্য কারও, এবং তিনি তা কিনে নিতে পারেন। অর্থাৎ নয়া এই বিশ্বে প্রায় সবকিছুই বিক্রয়যোগ্য। ঠিক এই মোক্ষম জায়গাটি বুঝেই কোপ মেরেছেন এই ডাচ যুবক। স্টিজন নামে ওই যুবক তাই বিক্রির জন্য সামনে এনেছেন নিজের আত্মাকে। ক্রেতাদের উদ্দেশে তিনি জানিয়েছেন, যাঁরা আত্মার খোঁজ করছেন, তাঁরা এবার তা পেয়ে যেতে পারেন। আত্মাকে যদি বদ্ধ করে না রেখে, মুক্ত করে দেওয়া হয়, বা আত্মার বিকেন্দ্রীকরণ হয়, তাহলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াবে? এই প্রশ্ন তুলে দিয়েই যুবকটি নিজের আত্মাকে বিক্রি করতে চেয়েছেন। একটি ওয়েবসাইট খুলে সেখানে সবিস্তারে নিজের ভাবনা বর্ণনা করেছেন। আবার তৈরি করেছেন একটি চুক্তিপত্রও। ক্রেতা তাঁর আত্মাকে কী কী কাজে কীভাবে ব্যবহার করতে পারবেন, তারই খুঁটিনাটি দেওয়া আছে সেখানে।
আরও শুনুন: ২০০ বছর আগে রাতারাতি উধাও হয়ে যায় গ্রামবাসীরা! অভিশাপের জেরেই নাকি ভূতুড়ে এই গ্রাম
অভিনব এই ঘটনায় হকচকিয়ে গিয়েছেন প্রায় সকলেই। প্রশ্ন হচ্ছে, সত্যিই কি আত্মাকে ডিজিটাল সম্পত্তিতে পরিণত করা যায়? তা হয়তো নয়। কিন্তু আত্মা বলতে আমাদের চিরকালের যে ধারণা, তা থেকেই হয়তো বেরিয়ে আসতে চাইছেন যুবকটি। আত্মার বিকেন্দ্রীকরণ বলতে তিনি যে ভাবনার কথা বলছেন, তাতে হয়তো একজন মানুষের আত্মার মালিকানা শুধু তাঁর হাতে না থেকে, অন্য কারুর হাতেও থাকতে পারে। অর্থাৎ একাধিক মানুষের কাছে থাকল এক আত্মা। এমনিতে আত্মা ধারণাটি তো বিমূর্ত। তাহলে তার এরকম ব্যবহার হবে নাই-বা কেন! নিঃসন্দেহে বিমূর্ত এক বিশ্বের কথাই কল্পনা করেছেন এই যুবক। আর কল্পনাই তো খোঁজ দেয় আগামী বিশ্বের। তবে কি পৃথিবী এরকম কোনও সম্ভাবনার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে? সে উত্তর অবশ্য আপাতত সময়ের গর্ভেই তোলা।