রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনা নিয়ে ইতিমধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়েছে ভারত। মূলত মার্কিন মুলুক ও পশ্চিমী থেকেই ধেয়ে এসেছে সমালোচনা। তবে সে সব উড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সাফ জানালেন, এক্ষেত্রে দেশের স্বার্থই সবার আগে বিবেচ্য।
জ্বালানি সংকটের মুখে দেশ। কেন্দ্রের দেওয়া এই তথ্যে বেড়েছিল উদ্বেগ। তার মধ্যেই রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। সেই প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গিয়েছে। প্রত্যাশিত ভাবেই এই নিয়ে সমালোচনা ধেয়ে আসে মার্কিন মুলুক থাকে। ইতিমধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনে একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তারা। তার মধ্যে ভারতের এই সিদ্ধান্ত বুঝিয়ে দিচ্ছে, স্পষ্টতই ভারত তার মিত্র দেশ রাশিয়ার দিকেই ঝুঁকে। রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনের যে প্রক্রিয়া ভারত শুরু করেছে তাকে ‘হতাশাজনক’ বলেই ব্যাখ্যা করেছিল মার্কিন মুলুক। প্রস্তাবিত ‘রুবল-রুপি’ মেকানিজম নিয়েও বিস্তর আপত্তি উঠেছে। কিন্তু সেই সমালোচনার সামনে নত হয়নি ভারত। বরং জোর দিয়েছে রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়ে।
আরও শুনুন: গলার কাছে উঁচিয়ে আছে আততায়ীর ছুরি! প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বোনকে বাঁচালেন তরুণী
এই প্রসঙ্গেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ সাফ জানালেন, এ ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থই সবার আগে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি জানান, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে ইতিমধ্যেই তেল কেনা শুরু করেছে, এবং এই প্রক্রিয়া জারি থাকবে। তাঁর বক্তব্য, ” জ্বালানি তেল নিয়ে দেশের নিরাপত্তার কথাই আমি আগে ভাবব। আর যদি আমি সস্তায় তেল পাই তাহলে রাশিয়ার কাছ থেকে তা কিনব না কেন?” ভারতের এই সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই ঝড় তুলেছে বিশ্ব রাজনীতিতে। পশ্চিমী দেশগুলির নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক যে নতুন খাতে বইতে শুরু করেছে, তা নিয়ে চুপ করে থাকেননি বিশ্বের তাবড় নেতারা। এর ফলাফল যেন ভারত মনে রাখে, এরকম হুঁশিয়ারিও শোনা যাচ্ছিল। ব্রিটেনের বিদেশ সচিব অবশ্য সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘ভারত একটি সার্বভৌম দেশ। সে ঠিক কী করবে, তা তো আমি বলে দিতে পারি না।’ কিন্তু এই কথার অন্য তাৎপর্য আছে বলেই মনে করেছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। পশ্চিমী দেশগুলির একযোগে রাশিয়াকে একঘরে রাখার মধ্যে ভারতের এই অবস্থান নিয়ে তাঁরা যে অখুশি, এ বার্তাই ক্রমে স্পষ্ট হয়েছে। যদিও বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর স্পষ্টই জানিয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। সেক্ষেত্রে ভারত যেখানে সুবিধমতো প্যাকেজ পাবে, সেখান থেকেই তো তেল কিনবে। এ নিয়ে চাপের মুখে যে সরে আসার কোনও পরিকল্পনা নেই, তা বিদেশমন্ত্রীর কথাতেই স্পষ্ট।
আরও শুনুন: হিজাবের পক্ষেই হরনাজ, ব্যক্তিগত পছন্দে হস্তক্ষেপ চান না মিস ইউনিভার্স
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে বরাবরই নিরপেক্ষ অবস্থা বজায় রেখেছে ভারত। ন্যাটোর আওতায় থাকা দেশগুলির হ্যাঁ-তে হ্যাঁ মেলানো থেকেও দূরত্ব জারি রেখেছিল। তা নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। এর মধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক লেনদেন এবং তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থার সন্ধান অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের অবস্থান নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে। যদিও অর্থমন্ত্রী এবং বিদেশমন্ত্রী একযোগে জানিয়ে দিলেন, ভারত তার অবস্থানে অনড়। দেশের স্বার্থে যা গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ তাই-ই করা হয়েছে। এবং আপাতত এই অবস্থানেই যে থিতু থাকবে ভারত, সে কথা প্রায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন তাঁরা।