‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নিয়ে মন্তব্যের জেরে বুধবারই হামলা হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাসভবনে। অভিযোগের তির বিজেপি সমর্থকদের দিকেই। ঘটনায় শোরগোল পড়েছে দেশের রাজনীতিতে। একটি ছবি নিয়ে মন্তব্যের কারণে একজন মুখ্যমন্ত্রীর উপর হওয়া হামলা, স্বাভাবিক ভাবেই নানা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এবার তা নিয়ে মুখ খুললেন স্বয়ং কেজরিওয়াল। কী বললেন তিনি? আসুন শুনে নিই।
কেজরিওয়াল গুরুত্বপূর্ণ নন, গুরুত্বপূর্ণ হল দেশ। সেই দেশের জন্য তিনি প্রাণ দিতেও তৈরি। বাসভবনে হামলা প্রসঙ্গে এই প্রতিক্রিয়াই দিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সাফ জানালেন, এই ধরনের গুন্ডাগিরি বাঞ্ছিত নয়। এভাবে দেশের অগ্রগতি হতে পারে না।
আরও শুনুন: ৫ বছরে দেশে সাম্প্রদায়িক অশান্তির ঘটনা প্রায় ৩৪০০টি, জানাল কেন্দ্র
দিল্লি বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছিলেন কেজরিওয়াল। তাঁর নিশানায় ছিল বিজেপিই। কেজরিওয়াল দাবি করেছিলেন, কাশ্মিরী পণ্ডিতদের যন্ত্রণাকে ঢাল করে একদিকে কেউ কেউ ব্যবসা করে চলেছেন। অন্যদিকে ছবিকে সামনে রেখে বিজেপি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণ করছে। তাই নেতাদের দিয়ে পোস্টার লাগানোর কাজ করাচ্ছে। এই মন্তব্যেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। হিমন্ত বিশ্বশর্মার মতো বরিষ্ঠ নেতা তো বলেই দেন যে, কেজরি যেন হিন্দুদের কাটা ঘায়ে নুন না ছেটান। অন্যদিকে কেজরির উপর খাপ্পা হন ছবির কলাকুশলীরাও। বর্ষীয়ান অভিনেতা অনুপম খের বলেন, আরও বেশি সংখ্যক মানুষ ছবিটি দেখলেই কেজরির মন্তব্যের উচিত জবাব দেওয়া হবে। পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীও একহাত নিয়েছিলেন। কেজরির দলের মানবিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন। তবে স্রেফ মন্তব্যের চাপানউতোরে বিষয়টি থেমে থাকল না। বুধবার কেজরির বাসভবনে হামলা হয়, অভিযোগ ওঠে বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধেই। পুলিশ জানায়, বিজেপি যুব মোর্চার সদস্য সমর্থকরা মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সঙ্গে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল। তাঁদের দ্রুত সরিয়ে দেওয়া হয়, ৭০ জনকে আটকও করা হয়। যদিও উপ-মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন কেন্দ্রের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও। তাঁর অভিযোগ, পাঞ্জাবে কেজরিওয়ালওকে হারাতে না পেরেই বিজেপি তাঁকে হত্যার ছক কষছে। পরে আপের তরফে ঘটনার সত্যতা সামনে এনে একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়। পুলিশের সামনেই নজরদারি ক্যামেরা এবং ব্যারিকেড ভাঙা হয় বলে আবারও অভিযোগ তোলে আপ।
আরও শুনুন: ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নিয়ে কথা উঠতেই ক্ষিপ্ত! কেজরিওয়ালের দলের ‘মানবিকতা’ নিয়ে প্রশ্ন পরিচালকের
এই প্রেক্ষিতেই এবার আসরে স্বয়ং কেজরিওয়াল। বৃহিস্পতিবার তিনি জানান, “কাল আমার উপর হামলা হয়েছে। দেশের জন্য আমি প্রাণ দিতেও প্রস্তুত। কিন্তু আমি নই, দেশই গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের গুন্ডাগিরি ঠিক নয়। এইভাবে কি দেশের অগ্রগতি সম্ভব? সম্ভব নয়য়। তার চেয়ে বরং আসুন সবাই মিলে দেশের জন্য কাজ করি।”
পাঞ্জাবে জয়ের পর থেকেই বিজেপি বিরোধিতায় দেশে অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছেন কেজরিওয়াল। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নিয়ে তাঁর প্রায় রসিকতা করে বলা মন্তব্যের যেভাবে কড়া জবাব দিয়েছলেন বিজেপি নেতারা, তাতে বোঝা গিয়েছিল, কেজরিওয়ালের বক্তব্যকে মোটেই লঘুভাবে নেননি তাঁরা। ঠিক তার পরেই এই হামলা ঘটনায় নয়া রাজনৈতিক মাত্রা আরোপ করল। প্রতিক্রিয়ায় কেজরিওয়াল যেভাবে নিজের প্রাণকে তুচ্ছ জ্ঞান করে দেশের স্বার্থে সকলকে এগোতে বললেন, তাও যথেষ্ট রাজনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণ। ঠিক এভাবেই ব্যক্তিকে পিছনে ফেলে দেশকে এগিয়ে রাখে বিজেপি নেতৃত্ব। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজেপির অস্ত্রেই বিজেপিকে ঘায়েল করার পথ তৈরি করছেন কেজরিওয়াল। জাতীয় ক্ষেত্রে তিনি যে শক্তপোক্ত বিরোধী, বুঝিয়ে দিচ্ছেন সে কথাও।