রুপোলি দুনিয়ার শাহেনশা তিনি। আশি বছরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও এতটুকু ফিকে হয়নি অমিতাভ বচ্চনের ম্যাজিক। কিন্তু জানেন কি, এই ম্যাজিকই তাঁকে বাধ্য করেছিল সুপারহিরো সাজতে? তবে সিনেমার পর্দা নয়, বইয়ের পাতায়। আসুন, শুনে নেওয়া যাক অমিতাভ বচ্চনের সেই অজানা গল্প।
ব্যাটম্যান, সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, ফ্যান্টম- কমিকসের দুনিয়ায় সুপারহিরোদের জয়জয়কার। পৃথিবীটা যত জটিল হয়েছে, ন্যায়-অন্যায়ের ধারণাগুলো যত গুলিয়ে যেতে শুরু করেছে, ততই মানুষ কোনও সর্বশক্তিমান অতিমানবের কাছে আশ্রয় খুঁজতে চেয়েছে। আর সেই কারণেই তার কল্পনার জগৎ থেকে বারবার উঠে এসেছে এমন সুপারহিরোরা, যারা একইসঙ্গে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করার ক্ষমতা রাখে। বইয়ের পাতা হোক কি সিনে দুনিয়া, মানুষের কল্পজগতে পাকাপাকিভাবে বসত গড়েছে এরা। সেই সূত্র ধরেই আটের দশকের ভারতে আবির্ভাব ঘটেছিল এক নতুন সুপারহিরোর। তফাত একটাই, তিনি আসলে কোনও কাল্পনিক চরিত্র নন। তবে সিনেমার কল্পদুনিয়ায় তাঁর ইমেজকে কাজে লাগিয়েই লেখা হয়েছিল এই নয়া সুপারহিরোর চিত্রনাট্য। তিনি আর কেউ নন, বলিউডের শাহেনশা অমিতাভ বচ্চন।
আরও শুনুন: আক্রান্ত সেরিব্রাল পালসিতে, অভিনয়ও সেই চরিত্রে, ‘জলসা’র খুদে অভিনেতার প্রশংসায় সিনেমহল
সেই সময়ে একের পর এক সুপারহিট ছবিতে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গিয়েছে অমিতাভের ‘অ্যাংরি ইয়ংম্যান’ ইমেজ। যিনি একা হাতে দশ-বিশজন শত্রুর মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখেন। যিনি ক্ষমতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার সাহস রাখেন। তিনি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রুপোলি পর্দার রবিনহুড। আর এই বাজারটাকেই ধরতে চেয়েছিলেন ইন্ডিয়া বুক হাউসের ‘মুভি ম্যাগ’ পত্রিকার সম্পাদক পাম্মি বক্সি। বলিউড কাঁপানো অভিনেতাকে তিনি এবার নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন কমিকসের পাতায়। যেখানে সিনেমার মতোই ‘ডুয়েল রোল’ থাকবে অমিতাভের। একদিকে তাঁকে দেখা যাবে বাস্তবের অমিতাভ বচ্চনের ভূমিকাতেই, আরেকদিকে তাঁর দ্বিতীয় সত্তা গুন্ডা-বদমাশদের হাত থেকে রক্ষা করবে সমাজকে। অর্থাৎ সিনেমায় যা করতেন অমিতাভ, বাস্তবে ঠিক তা-ই করবে এই দ্বিতীয় অমিতাভ। এমনকি কমিকসের অনেক চরিত্রকে ভাবা হয়েছিল তাঁর সিনেমার সূত্র ধরেই। সুপারহিরোর দুই সঙ্গী ছিল বিজয় এবং অ্যান্টনি। বচ্চনপ্রেমী মাত্রেই বুঝবেন এই দুটি নাম অমিতাভের অভিনীত চরিত্র থেকেই ধার করা। আর ‘কুলি’ সিনেমার মতোই সুপারহিরোর সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল একটি বাজপাখি।
এই নয়া সুপারহিরোর নামটিও এসেছিল সিনেদুনিয়া থেকেই। ‘পুকার’ ছবির সেটে অমিতাভ বচ্চনের থেকে সম্মতি আদায় করতে যান পাম্মি বক্সি। সেখানে তিনি দেখেছিলেন, অমিতাভকে ‘সুপ্রিমো’ বলে ডাকেন রণধীর কাপুর। সেই নামটিই তিনি তুলে নিয়েছিলেন নিজের পরিকল্পিত এই সুপারহিরোর জন্য। আর খোদ গুলজারের কলমে ১৯৮৩ সাল থেকে হিন্দি এবং ইংরেজি দুই ভাষায় বেরোতে শুরু করে ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ অমিতাভ বচ্চন’। অমিতাভের কোনও সিনেমার শ্যুট চলাকালীন সেটেই বিপদের খবর নিয়ে আসত বাজপাখিটি। আর সঙ্গে সঙ্গে সবার আড়ালে সুপারহিরো সুপ্রিমোর পোশাক পরে নিয়ে ছুটে যেতেন অমিতাভ। তাই বইয়ের শুরুতেই ছোটদের মনে করিয়ে দিতেন তিনি, “কাউকে বোলো না, আমিই সুপ্রিমো”।
আরও শুনুন: ‘সঞ্জীব কুমার নন, আমিই যোগ্য’, গুলজারকে জানিয়েছিলেন স্কুলপড়ুয়া নাসিরুদ্দিন শাহ
নিজেকে কমিকসের পাতায় দেখতে আপত্তি করেননি বিগ বি। তবে একটি ছোট্ট শর্ত রেখেছিলেন তিনি। বইটির কিছু কপি দান করতে হবে হাসপাতাল ও অনাথ আশ্রমের শিশুদের জন্য, এই ছিল তাঁর দাবি। বাস্তবে কোনও সুপারহিরো নাই বা থাকুক, ওই অসহায় শিশুদের কাছে সুপারহিরোর মতোই আশার আলো পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন।