বিতর্কের নাম ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’। এমনিতে তো ছবি ও ছবির বিষবস্তু নিয়ে বিতর্ক চলছেই। সেই বিতর্ক নয়া মাত্রা পেয়েছে, যখন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই প্রসঙ্গে মুখ খোলেন। তারপর থেকে কেজরিওয়াল বনাম কাশ্মীর ফাইলস যেন দ্বন্দ্বযুদ্ধ চলছে। এবার এই প্রসঙ্গে খোঁচা দিলেন পরিচালক স্বয়ং। কী বললেন বিবেক অগ্নিহোত্রী? আসুন শুনে নিই।
‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছবিটিকে সামনে রেখে বিজেপি তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করে চলেছে। নেতাদের দিয়ে দেওয়ালে দেওয়ালে পোস্টার লাগানোর কাজ করাচ্ছে। ঠিক এইভাবেই বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বিজেপি নেতাদের দিকে তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। হাসতে হাসতে বললেও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর সেই কথা সহজে মেনে নিতে পারেননি বিজেপির শীর্ষ নেতারাও। জল ইতিমধ্যে গড়িয়েছে অনেকদূর। এবার স্বয়ং পরিচালকের খোঁচার মুখেই পড়লেন কেজরিওয়াল। বিবেক অগ্নিহোত্রী প্রশ্ন তুললেন কেজরিওয়ালের দলের মানবিকতা নিয়েই।
বিজেপি বিরোধিতার প্রসঙ্গেই কেজরিওয়াল তাঁর বক্তব্যে টেনেছিলেন ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছবিটিকে। বলেছিলেন, যদি ছবিটিকে সবাইকে দেখাতে হয়, তবে ইউ টিউবে তুলে দিলেই হয়। খামোখা রাজ্যে রাজ্যে করমুক্ত করা হচ্ছে কেন? একদিকে বিজেপির কর্মকাণ্ড অন্যদিকে কাশ্মিরী পণ্ডিতদের ঢাল করে ব্যবসা – এক ঢিলে দুই পাখিকেই নিশানা করেছিলেন কেজরিওয়াল। প্রত্যাশিত ভাবেই এর জবাব দেন বিজেপি নেতারা। হিমন্ত বিশ্বশর্মা সরাসরি জানান, বিধানসভায় দাঁড়িয়ে কাশ্মিরী পণ্ডিতদের নিয়ে বিদ্রূপ করা রীতিমতো হতাশাজনক। হিন্দুদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে না দিতেই তিনি অনুরোধ করেছিলেন কেজরিওয়ালকে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অভিনেতা অনুপম খের বলেছিলেন, কেজরিওয়াল যে অসংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, তার জবাব হল আরও বেশি সংখ্যক মানুষের ছবিটি দেখতে যাওয়া। বিজেপি নেতা এবং ছবির কলাকুশলীদের আক্রমণের মুখে কেজরিওয়াল পালটা বিবৃতি দেন। তিনি জানান, ছবিটিকে তিনি অপমান করেননি। আর কাশ্মিরী পণ্ডিতদের অবস্থা নিয়ে রসিকতাও করেননি। তিনি বলতে চেয়েছেন যে, বিজেপির জন্য শুধু কাশ্মীর ফাইলস ছবিটাই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তাঁর জন্য কাশ্মীরি পণ্ডিতরাও একই গুরুত্বের দাবি রাখেন। তিনি সাফ জানান, তিনি যদি কেন্দ্রে থাকতেন তবে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিয়ে ছবি বানাতেন না। যে মাটি থেকে তাঁদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল, সেখানেই তাঁদের ফিরিয়ে দিয়ে আসতেন। অর্থাৎ তাঁদের ভিটেমাটি ফিরিয়ে দিতেন।
যদিও এই সাফাইয়ে সন্তুষ্ট নন পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। এই প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই তিনি একবার কেজরিওয়ালকে একহাত নিয়েছিলেন। আবারও এই নিয়ে সরব হলেন। সম্প্রতি কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, তাঁর দলের তিনটি স্তম্ভ হল – সততা, মানবিকতা আর দেশাত্মবোধ। ঠিক এই বিন্দুতেই খোঁচা দিয়েছেন বিবেক। কেজরিওয়ালের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তাঁর দলের মানবিকতা নিয়েই তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, প্রশ্নও তুলেছেন। অর্থাৎ যে দলের প্রধান কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিয়ে তৈরি ছবি কেন করমুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন, সেই দল মানবিক কী করে হয়। এই হল বিবেকের প্রশ্নের মর্মার্থ। কেজরিওয়াল অবশ্য এখনও এর জবাব দেননি। তবে কাশ্মীর ফাইলস আর কেজরিওয়াল দ্বন্দ্বযুদ্ধ যে বেশ জমে উঠেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।