হাল্লা আর শুণ্ডীর যুদ্ধ থামাতে ভূতের রাজার দেওয়া বর কাজে লাগিয়েছিল গুপী আর বাঘা। আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো নেমে এসেছিল হাঁড়িভর্তি মিষ্টি। কিন্তু বাস্তবে তো কোনও ভূতের রাজার বর নেই। তবুও, প্রতি বছর এমনই এক আশ্চর্য ঘটনার সম্মুখীন হন এই জায়গার মানুষজন। মিষ্টি নয়, আকাশ থেকে মাছবৃষ্টি হতে দেখেন তাঁরা। আসুন, শুনে নিন এই অদ্ভুত ঘটনার কথা।
সময়টা ছিল আঠেরো শতকের মাঝামাঝি। বছরের মে কিংবা জুন মাস ছিল সেটা। একদিন হঠাৎই প্রবল দুর্যোগের মুখোমুখি হয় এই শহর। তুমুল ঝড়বৃষ্টির চোটে বেশ কিছুটা সময় ঘরবন্দি হয়ে থাকতে হয় শহরবাসীদের। একসময় পরিবেশ শান্ত হয়। একজন-দুজন করে মানুষ বাইরে বেরোতে শুরু করেন। আর বেরিয়েই এক অবাক করা দৃশ্যের মুখোমুখি হন তাঁরা। দেখেন, শহরের রাস্তা, বাগান, বাড়ির ছাদ, সবকিছুর উপর যেন বিছিয়ে রয়েছে এক চাদর। একটা নয়, দুটো নয়, কিলবিল করছে অজস্র মাছ।
আরও শুনুন: সেনাবাহিনীতে চাকরি পেল পেঙ্গুইন, মিলল ‘স্যার’ উপাধিও
সেই থেকে শুরু। তারপর থেকে প্রতি বছরেই এমন মাছবৃষ্টির সাক্ষী হয় হন্ডুরাসের ইয়োরো শহর। একশো বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই কাণ্ড। টেক্সাস, সিডনি, আমেরিকা, ভারতের মতো আরও কয়েক জায়গায় এমন আকাশ থেকে মাছ বৃষ্টি হওয়ার কথা শোনা গিয়েছে বটে, তবে কোথাওই তা এমন বাৎসরিক ঘটনায় পরিণত হয়নি। এমনকি কোনও কোনও বার বছরে চারবার পর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে হন্ডুরাসের এই শহরটিতে।
হন্ডুরাস দেশটি এমনিতে খুব একটা ধনী নয়। ফলে এইভাবে প্রচুর মাছের জোগান পাওয়াকে প্রায় ঈশ্বরের আশীর্বাদের মতোই দেখেছিলেন সাধারণ মানুষ। কথিত আছে, শহরের মানুষের দারিদ্র্য দূর করার জন্য ঈশ্বরের কাছে আকুল প্রার্থনা জানিয়েছিলেন এক খ্রিস্টান পাদ্রি, হোসে সুবিরানা। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, সেই প্রার্থনার ফলশ্রুতিতেই এমন মাছবৃষ্টি হয় প্রতি বছর, আসে খাদ্যের জোগান। এমনকি এই ঘটনাকে উদযাপন করার উদ্দেশ্যে ১৯৯৮ সাল থেকে শহরবাসীরা একটি বার্ষিক উৎসবের আয়োজনও করে আসছেন।
আরও শুনুন: প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নাকি পঞ্চপাণ্ডব, দিনের অধিকাংশ সময়েই সমুদ্রে অদৃশ্য থাকে এই শিবমন্দির
কিন্তু আসলে ঠিক কী কারণ লুকিয়ে রয়েছে এমন মাছবৃষ্টির পিছনে? তা এখনও নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হয়নি। তবে বিজ্ঞানীদের একটি মত হল, ঘূর্ণিঝড়ই এই মাছবৃষ্টির উৎস। জলাশয়ের উপর দিয়ে যখন সেই ঝড় প্রবাহিত হয়, তখন জলে থাকা মাছ, ব্যাং-এর মতো জলচর প্রাণীরা সেই ঝড়ের সঙ্গে আকাশে উঠে যায়। ঝড়ের কারণে সেগুলি যেমন অনেক দূর পর্যন্ত চলে যেতে পারে, আবার ঝড় থামলেও তা উপরেই মেঘের স্তরে আটকে যেতে পারে। আর সেগুলিই পরবর্তী কালে ঝরে পড়ে মাছবৃষ্টির মতো ঘটনা ঘটায় বলে দাবি করেছেন কোনও কোনও বিজ্ঞানীরা। তবে প্রতি বছর নিয়ম করে একই ঘটনা কীভাবে ঘটতে পারে, তার কোনও সন্তোষজনক উত্তর মেলেনি আজ অবধি।