“মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে/ মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে”… এককালে এমন কথা বলার হক ছিল কেবল মায়ের ছেলেটির। কিন্তু এখন চাকাটা ঘুরে গিয়েছে। সন্তানের জন্য মায়েদের নিজের কাজ ফেলে ঘরে বসে থাকার দিনও ফুরিয়েছে। বরং মা নিজেই এখন তাঁর খুদেকে নিয়ে পাড়ি দিতে পারেন দেশবিদেশ। সম্প্রতি তেমনই নজির রাখলেন পাকিস্তানের জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, বিসমা মারুফ। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
চলতি মাসের ৪ তারিখ থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে মহিলা ক্রিকেটের বিশ্বকাপ। এদিন ময়দানে মুখোমুখি হয় দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী, ভারত ও পাকিস্তান। ম্যাচে যদিও পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছেন মিতালি-ঝুলনরা। কিন্তু মাঠের বাইরেও আরও একটা লড়াই লড়ছিলেন পাকিস্তানের ক্যাপ্টেন বিসমা মারুফ। সে লড়াই কেবল তাঁর একার নয়, বরং আরও অনেক মেয়ের লড়াই। আর সেই যুদ্ধটায় যে তিনি সব বাধাকেই সপাটে উড়িয়ে দেবেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই এদিন ম্যাচের আগে নিজের শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে আর তার ঠেলাগাড়িতে ক্রিকেটের সরঞ্জাম ভরে নিউজিল্যান্ডের বে ওভাল স্টেডিয়ামে ঢুকলেন বিসমা মারুফ।
আরও শুনুন: ৪২ লিটার স্তনদুগ্ধ দান হাসপাতালে, ছকভাঙা কাজে কুর্নিশ আদায় করলেন ভারতীয় মহিলা
২০২১ সালের ৩০ আগস্ট কন্যার জন্ম দিয়েছেন বিসমা। বয়স এখনও এক পুরোয়নি তার। মা নিজেও শরীরে মনে সম্পূর্ণ ক্ষমতা ফিরে পাননি হয়তো। কিন্তু সব দুর্বলতাকে বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে খেলার ময়দানে ফিরে এসেছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক। গুরুত্ব দিয়েছেন দলকে, মর্যাদা দিয়েছেন দেশকে, আবার, নিজের পরিবারকেও অবহেলা করেননি তিনি।
আরও শুনুন: ‘হিজাব আমার প্রতিভাকে ঢাকতে পারবে না’, বিশ্ব কাঁপাচ্ছেন এই পাক র্যাপার
সত্যি বলতে কি, মাতৃত্ব বিষয়টিকে এক আশ্চর্য গৌরবে মুড়ে দেওয়া হয় আমাদের সমাজে। আর মায়ের মাথায় চাপিয়ে দেওয়া হয় সে গৌরবের সবটুকু ভার। নতুন পাওয়া ভূমিকাতে অভ্যস্ত হওয়ার মতো সময়টুকুও জোটে না। তার আগেই নিজের ব্যক্তিগত জীবনটিকে, এতদিনের যাবতীয় অভ্যাস, ভালো লাগা, খারাপ লাগা, শখ কিংবা বিনোদন, সবকিছুকেই শিকেয় তুলে ফেলতে হয়। কারণ আর কিছুই না, দীর্ঘদিনের সামাজিক পরম্পরা। যেখানে শেখানো হয়, সন্তানকে মানুষ করার জন্য মায়ের চাকরি ছেড়ে দেওয়া জরুরি। মা ও সন্তানের নিজস্ব বোঝাপড়া, নিজেদের মতো করে এই নতুন পরিস্থিতিকে সামলানোর সুযোগ প্রায় মেলে না বললেই চলে। বিসমা কিন্তু সেই নিয়মের শিকল নিজের পায়ে জড়াননি। পাকিস্তানের মতো একটি ঘোর পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাতেও নিজের চাওয়া-পাওয়ার মূল্য দিয়েছেন তিনি। ক্রিকেট তাঁর পেশা, নেশা, এবং দায়িত্বও বটে। একটি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আরেকটি দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে হবে, এমন সোজা পথ তাই তিনি বেছে নেননি। বরং চওড়া কাঁধে সামলে নিচ্ছেন দুই দায়িত্ব, দুই ভালবাসাকেই। যা দেখে কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা দুনিয়া।