কর্মীর কাজে বিরক্ত বস। গলা তুলে ধমকে উঠলেন, ‘নির্ঘাত মেনোপজ হয়েছে ওর!’ স্তম্ভিত মহিলা কর্মীটি। ছুটলেন আদালতে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিল আদালত। কোথায় হয়েছে এমন ঘটনা? শুনে নিন।
কাজের জায়গায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বকাবকি শুনতে সকলেই কমবেশি অভ্যস্ত। কিন্তু কোন কথায় কার যে কীভাবে আঘাত লাগবে তা বুঝে ওঠা মুশকিল। বিশেষত লিঙ্গবাচক কথাবার্তার ক্ষেত্রটি অতি মাত্রায় সংবেদনশীল। পান থেকে চুন খসলেই সেই কথার সূত্র ধরে কিন্তু বিপদে পড়তে পারেন যে কেউ। যেমন পড়েছেন এই ভদ্রলোক। একশো দুশো নয়, কড়কড়ে কুড়ি লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ গুণে দিতে হয়েছে তাঁকে, তাও নিজের অধস্তন এক কর্মীকে। একইসঙ্গে পকেট আর প্রেস্টিজ, টান পড়েছে দু জায়গাতেই।
আরও শুনুন: হোয়াটসঅ্যাপে ইমোজি পাঠিয়ে শ্রীঘরেও গিয়েছেন কেউ কেউ, কেন জানেন?
ব্যাপারটা ঠিক কী ঘটেছে, তবে খুলেই বলা যাক।
ভদ্রলোক পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী মিলে একটি পেট ফুড স্টোর চালান, যেখানে পোষা প্রাণীদের জন্য খাবারদাবার মেলে। আর সেখানেই কাজ করেন লেই বেস্ট নামের ওই মহিলা কর্মী। বেস্ট-এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোনও এক ক্রেতা ‘হট ফ্লাশ’-এর উল্লেখ করেছিলেন, যা আসলে মেনোপজ হওয়ার পূর্বাভাস। নারীশরীর যেমন নির্দিষ্ট বয়সে ডিম্বাণু উৎপাদন শুরু করে এবং তারপর থেকে পিরিয়ডস শুরু হয়, তেমনই আবার নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছানোর পর কিংবা কোনও শারীরিক সমস্যার কারণে শরীর সেই উৎপাদন বন্ধ করে। আর এই অবস্থাকেই বলা হয় ঋতুবন্ধ বা মেনোপজ। কিন্তু এই বিশেষ শব্দটি শোনা মাত্রই চটে যান ৫২ বছর বয়সি ওই মহিলা কর্মী। নিজের দুই কানে হাত চাপা দিয়ে বলতে থাকেন, তাঁর ওরকম কিছুই হয়নি, আর তিনি এ নিয়ে কোনও কথাও শুনতে চান না। একজন ক্রেতার সঙ্গে এহেন আচরণ করায় বিরক্ত হন স্টোরের মালিক ডেভিড ফ্লেচার। ওই কর্মীকে ধমকধামক দিতে গিয়ে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন তিনি। চেঁচিয়ে বলেন, নির্ঘাত মেনোপজ হয়েছে ওই কর্মীর। আর গোল বাধে এই কথাতেই। এই কথা বলে তাঁর মর্যাদাহানি করেছেন ফ্লেচার, এমনই দাবি করেন মহিলা কর্মীটি। তাঁর অভিযোগ, দোকানের অন্য মালিক তথা মিসেস ফ্লেচার তাঁর কথায় গুরুত্ব তো দেনইনি, উলটে রীতিমতো ধমকে দেন তাঁকেই। এই ঘটনার এক মাস পরে ওই কর্মীকে কাজ থেকেও ছাড়িয়ে দেওয়া হয়।
আরও শুনুন: রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের আঁচ পড়তে পারে ভারতীয়দের রান্নাঘরেও, কীভাবে জানেন?
এরপরে আদালতের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ওই মন্তব্যটি লিঙ্গবৈষম্যমূলক, পাশাপাশি এটি মহিলার বয়সকেও ইঙ্গিত করেছে। সব মিলিয়ে আদালত মন্তব্যটিকে অসম্মানজনক বলেই রায় দেয়। আর এরপরেই ফ্লেচারের প্রতি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত।