কথায় বলে ‘অ্যাশেস টু অ্যাশেস ডাস্ট টু ডাস্ট’। অর্থাৎ মাটি থেকেই জীবনের সৃষ্টি। আবার মৃত্যুর পরে সেই মাটিতেই মিশে যাওয়া। শুধু বাইবেলেই নয়, জীবনের সঙ্গে মাটির সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেওয়া হয় বহু জায়গাতেই। এখানকার বাসিন্দারা সে কথা মনে রেখেই প্রার্থনা করতে যান পাতালে। মাটি থেকে প্রায় সাড়ে ছশো ফুট গভীরে রয়েছে একটি নুনের খনি। সেখানেই রয়েছে ঈশ্বরের বাড়ি। মাটির নিচে এই সল্ট ক্যাথিড্রাল শুধু দ্রষ্টব্য জায়গাই নয়, স্থাপত্যের দিক থেকেও এক আশ্চর্য।
দেওয়াল, গাঁথনি সবটাই তৈরি নুনের। নুনের খনি কেটে কেটেই তৈরি হয়েছে ‘ঈশ্বরের বাড়ি’। এই গির্জার তাই নামই হয়ে গিয়েছে সল্ট ক্যাথিড্রল।
দক্ষিণ আফ্রিকার কলোম্বিয়ার জিপাকোয়েরা শহরে রয়েছে এই লবন-গির্জা। সেখানকার অন্যতম একটি আশ্চর্য এই জায়গা। মাটি থেকে প্রায় ২০০ মিটার নিচে নুনের খনির ভিতরে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে তৈরি হয়েছে গির্জা। মজার কথা, ক্রুশ থেকে শুরু করে গির্জার নকশা, সবটাই তৈরি হয়েছে ওই হ্যালাইট পাথর খোদাই করে।
আরও শুনুন: উপরে আকাশ নীল, নিচে নদীর বুকে রামধনু! কোথায় দেখা মিলবে এই রঙিন নদীর?
১৮১৫ সালে বাণিজ্যিক ভাবে নুন খননের কাজ শুরু হল ওই এলাকায়। মাটির তলায় খোঁড়া হল একাধিক সুড়ঙ্গ ও গুহা। খনির কাজ সহজ নয়। বিষাক্ত গ্যাস, বিস্ফোরণ, দুর্ঘটনা তো লেগেই থাকত। মাটির তলাতেই ছোট্ট করে একটি প্রার্থনার জায়গা তৈরি করেছিলেন খননকারীরা। সেই ছোট্ট প্রার্থনার জায়গাই পরে হয়ে উঠল মস্ত চার্চ।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খননের পরে পরিত্যাক্ত অবস্থাতেই পড়ে থাকে খনিগুলি। তবে এ জায়গা তার চেয়ে ব্যাতিক্রম। কলোম্বিয়া সরকারের উদ্যোগে সেই ফাঁকা জায়গাটিতেই ১৯৫৩ সাল নাগাদ তৈরি হল সল্ট ক্যাথিড্রাল। তবে বেশ কিছু সমস্যার জন্য ১৯৯০ সালে জনগণের জন্য চার্চটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে চার্চটিকে নতুন করে সাজিয়ে তুলতে বদ্ধ পরিকর ছিল সরকার। ১২৭ জন খননকারী ও স্থপতিকে নিয়ে গিয়ে ফের কাজ শুরু করা হল মাটির নিচে।
আরও শুনুন: তেরো মাসে বছর, তাই এই দেশে এখন চলছে ২০১৩ সাল, জানেন এই দেশের কথা?
আগে যে জায়গায় গির্জাটি ছিস, তার চেয়েও ২০০ ফুট নিচের থেকে তৈরি করা হল নতুন গির্জাটি। প্রায় পাঁচ বছর লেগেছিল দেওয়ালের গায়ে ক্রুশটুকু খনন করতেই। ২৫ হাজার টন পাথর সরিয়ে তৈরি করা হয়েছিল নতুন একটি সুরঙ্গপথ। গির্জাটির রয়েছে মোট তিনটি নেভ। মোট ১৪টি স্টেশনে ভাগ করে সেখানে দেখানো রয়েছে যীশুখ্রিষ্টের জীবনের প্রত্যেকটি ধাপ। গির্জার মূল নেভের মধ্যে রয়েছে সুবিশাল একটি মনুমেন্টাল ক্রুস। পুরোটাই তৈরি ওই লবনপাথর দিয়েই। শুধু ক্রুশই নয়, এই গির্জার দেওয়াল থেকে জমি, স্থাপত্য থেকে বসার বেঞ্চ, সিঁড়ি সবটাই তৈরি হয়েছে ওই বিশেষ পাথর দিয়েই।
বাকি অংশ শুনে নিন।